বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত আদম (আ.) থেকে মানবজাতির সূচনা। এরপর শীষ (আ.) ও ইদরীস (আ.) নবী হন। প্রায় দুই হাজার বছর পর হযরত নূহের যুগ। তখনই প্রথম মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করে আর কিছু মানুষ আল্লাহর সাথে শরীক করে। এদের দ্বারাই প্রথম মূর্তিপূজা সংঘঠিত হয়। মূর্তিপূজা আসলে পূজা হিসেবে শুরু হয়নি। এসব হয়েছিল শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে। স্মৃতি তর্পণ থেকে। নূহ (আ.)-এর আগেকার জাতি সবাই ছিল তাওহীদে বিশ্বাসী। তারা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করত। তখন পর্যন্ত বিস্তারিত শরীয়ত নাযিল হয়নি।
মানবজাতির প্রাথমিক সময়, সভ্যতার ঊষালগ্ন তখন। জীবন, জগৎ ও সভ্যতা বিষয়ই আল্লাহর ওহী আসত। বিস্তারিত জীবন বিধান আসতে শুরু করে হযরত নূহের যুগে। আদিযুগের মানুষের মধ্যে সৎ, মহৎ ও অধিক খোদাভীরু লোকেদের মৃত্যুর পর তাদের ভক্তরা শোক ও দুঃখ ভুলার জন্য এবং তাদের স্মৃতিকে জাগরুক রাখার জন্য পাথরে তাদের প্রতিকৃতি আঁকে।
পরের প্রজন্ম ছোটবেলা দেখা সেই প্রতিকৃতি যা রোদ বৃষ্টি ঝড়ে মুছে গিয়েছিল সেসব খোদায় করে ভাস্কর্য তৈরি করে। এরপরের প্রজন্ম আরও মমতা মিশিয়ে পাথর কেটে ছেটে নিপুণ মূর্তি তৈরি করে। তখন এসব তারা উঠান, বাজার ও চত্বরে স্থাপন করেছিল। পরের প্রজন্ম এসবকে উপাসনার স্থানে স্থাপন করে ঘরটিকে দেবালয়ে রূপ দেয়।
শুরুতে তারা আল্লাহর ইবাদতের ঘরে পেছনের দেওয়ালে মূর্তিগুলো ঠেস দিয়ে রাখে। মূলত তারা আল্লাহরই ইবাদত করত। বলতো, এসব মূর্তি আমাদের প্রভু নয়। আমরা এদের ইবাদতও করি না। আল্লাহর এসব প্রিয় বান্দা আর মহৎ ব্যক্তিকে স্মরণ ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভেরই চেষ্টা করি মাত্র।
দু’য়েক প্রজন্ম পর শ্রদ্বেয় ব্যক্তিদের পেছনে রাখাটা আর তাদের ভালো লাগেনি। ইবাদতখানার সামনের দেওয়ালে এসব মূর্তি স্থাপিত হয়। নূহ (আ.) প্রথম এই ক্রমান্বয়ে প্রচলিত শিরকের প্রথম সংশোধনকারী। ৯৫০ বছর তিনি এসব মানুষকে হেদায়াতের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু খুব সামান্য লোকই তারা ডাকে সাড়া দেয়। বাকি সব মানুষ তাদের বাপদাদার সংস্কৃতি ও মনগড়া শিরকী চেতনা ছাড়তে সম্মত হয়নি।
মহান আল্লাহ বিষয়টি এভাবে বলেছেন, তাদের নেতারা বলল, তোমরা (নূহ আ. এর কথায়) তোমাদের দেবতাদের ত্যাগ করো না। তোমরা ছেড়ে দিও না, ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসরকে। (সূরা নূহ : আয়াত ২৩)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোরআনে বর্ণিত ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসর হচ্ছে, নূহ (আ.) এর কওমের কিছু মহৎ লোকের নাম। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান জনগণকে বোঝালো, তোমরা এসব ব্যক্তির বৈঠকখানার পাশে একটি ভাস্কর্য তৈরি করো। প্রতিটি ভাস্কর্যকে তোমরা সেই মহৎ ব্যক্তির নামে নামকরণ করবে।
অতএব তারা শয়তানের প্ররোচনায় ভাস্কর্য তৈরি করল বটে, কিন্তু কোনোদিনই সেগুলোর উপাসনা করেনি। অবশ্য কিছুদিন পর নতুন প্রজন্মের লোকজন ভক্তি ও স্মৃতির সীমা লংঘন করে এসব মূর্তির উপাসনা শুরু করে। (সহীহ বুখারী : ৪৬৩৬;)।
মূর্তিপূজা প্রথম উপাসনা বা পূজা হিসেবে শুরু হয়নি। হয়েছিল শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে। স্মৃতি তর্পণের মাধ্যমে। প্রজন্মান্তরে এসব ভাস্কর্য ও মূর্তি আল্লাহর আসন দখল করে নেয়। (নাউযুবিল্লাহ)। আদম (আ.) থেকে নূহের আগ পর্যন্ত পৃথিবী তাওহীদে ভরপুর ছিল। মানবজাতি ছিল শিরকমুক্ত। মহৎ লোকের ভাস্কর্যই ঈমানদার মানবজাতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।