Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুদ্ধে বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছেন কারাবাগের বাসিন্দারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আবাসন, গবাদি পশু, ফসল, তাদের সমস্ত কিছুই ত্যাগ করতে হয়েছিল। বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখের প্রধান শহর স্টেপানকোর্টে আজারবাইজানের সাথে সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত আর্মেনিয়ানরা অনিশ্চিত ভবিষ্যত হাতে নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে ফিরে আসছেন। ১৯৯০-এর দশকের যুদ্ধে বাকুর নিয়ন্ত্রণ থেকে ছুটে যাওয়া আর্মেনিয়ান আঞ্চলিক কারাবাখের ওপর প্রাক্তন সোভিয়েত প্রতিদ্ব›দ্বীদের মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নতুন সংঘর্ষের পরে এ অঞ্চলের দেড় লাখ বাসিন্দাদের মধ্যে ৭৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান ৯ নভেম্বর মস্কোর মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শত্রুতা বন্ধ করার পরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ফিরে এসেছেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে তিন দশক ধরে বসবাসকারী অনেক আর্মেনীয় ছয় সপ্তাহের লড়াইয়ে সবকিছু হারিয়েছেন।
স্টেপানকোর্টে বাস্তুচ্যুতদের জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল সরবরাহ করা হয়েছে এবং প্রতিদিন কয়েকশ’ লোক রেড ক্রসের বিতরণকৃত সহায়তার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছে। ৭০ বছরের এলমিরা গ্রিগরিয়ান সবেমাত্র পাস্তা, চিনি এবং টিনসহ একটি ছোট প্লাস্টিকের ব্যাগ পেয়েছেন। তিনি দীর্ঘ লাইন ছেড়ে যাওয়ার সময় চোখের পানি সংবরণের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।
গ্রিগরিয়ান কারাবাখের পূর্বে মার্টুনি এবং অঘাদাম জেলার মধ্যবর্তী একটি গ্রামে বাস করতেন যেটি ২০ নভেম্বর আজারবাইজানকে হস্তান্তর করা হয়। শান্তিচুক্তির শর্তাবলী অনুসারে, বাকু বিভিন্ন অঞ্চলকে পুনরুদ্ধার করলো যা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যেখানে ছিল জাতিগত আর্মেনীয়দের বসবাস।
তিনি বলেন, হস্তান্তর করার দিন বাকু থেকে সৈন্যরা ‘তৎক্ষণাৎ’ উপস্থিত হয় এবং তাদের চলে যেতে বলে। গ্রেগরিয়ান বলেন, ‘তাই আমরা চলে গেলাম সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে’। তিনি আরও যোগ করেন, তারা আর্মেনিয়ান সৈন্য এবং চুক্তির আওতায় মোতায়েন করা রাশিয়ান শান্তিরক্ষীদের সাথে করে তাদের জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে ফিরে এসেছিলেন।
‘আমরা সৈন্যদের সাথে গিয়েছিলাম, আমরা সেখানে সারাদিন থাকি, কিন্তু কিছুই ছিল না’। ৫৫ বছর বয়সী মেরিন সারগসান তার সহায়তার প্যাকেজ সংগ্রহের পরে জানালাহীন তিন শয্যার মধ্যম মানের হোটেল ঘরে ফিরে আসেন। তিনি তার পুত্রবধূ আনজেলিকা আস্ত্রিবাওয়ানের সাথে রয়েছেন, যার তিন বছরের একটি ছেলে এবং মাত্র ছয় মাস বয়সী একটি কন্যা রয়েছে।
ঐতিহাসিক শহর স্টেপানকোর্ট থেকে প্রায় আট কিলোমিটার (পাঁচ মাইল) দূরে সুপানায় বাস করত এ পরিবারটি। লড়াই শুরু হলে তারা আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনে আশ্রয় নেয়।
সামরিক পুলিশে চাকরি করা সন্তানের মা সরগরিয়ান বলছিলেন, ‘আমরা ফিরে এসেছি, কিন্তু আমরা এখানে ভাড়া নেয়ার মতো কোনো বাড়ি পাই না। কর্তৃপক্ষ আমাদের এ হোটেলটি দিয়েছে’। শুশায় তাদের একটি তিন কক্ষের অ্যাপার্টমেন্ট এবং গবাদি পশু ছিল: ‘আমাদের কাছে এখন কিছুই নেই’।
২৩ বছর বয়সী অ্যাস্ট্রিবাওয়ান বলেন, ‘শরণার্থী হওয়াটা ভয়াবহ ব্যাপার, বিশেষত যখন আপনার ছোট বাচ্চা থাকে। বর্তমানে আমার কাছে পরের কয়েক দিনের জন্য ৫ হাজার ড্রাম (প্রায় ১০ ডলার) রয়েছে। তবে তার পরে আমি কী করব তা আমি জানি না’, -তিনি যোগ করেন।
এরিক মঙ্গসারায়ন রেগে আছেন। মুখে দাগযুক্ত ৩৫ বছর বয়সী এ ব্যক্তি কখনও কখনও তার বন্ধুদের বাড়িতে, কখনও তার গাড়িতে ঘুমান। তিনি ফোনে সাংবাদিকদের তার এবং তার সাথে থাকা দু’জন আজারবাইজানীয় সেনাকে বন্দি করার একটি ভিডিও দেখান।
তিনি বলেন, ‘আমি সৈনিক নই, তবে আমি আমার জমি রক্ষার জন্য প্রাণপন লড়াই করেছি’। তিনি আরো বলেন, তাকে নিজের বাড়ি এবং গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। রক্ত ঝরানো চোখে লোকটি বলেন, ‘আমরা পরিত্যক্ত বোধ করছি’। স্টেপানকোর্টের একটি ছোট কাভার্ড মার্কেটে নেলসন আরিয়ান একটি মাংসের দোকানের সেলসম্যান।
৪৭ বছর বয়সী কসাই বলেন, ‘কীভাবে আমার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না’ যা এখন আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। স¤প্রতি তাকে এখানে ভাড়া করা হয় এবং তার ছেলে-মেয়ের সাথে তার গ্রামের এক ধনী বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি অ্যাপার্টমেন্টে তিনি রয়েছেন। সূত্র : এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ