প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
বরেন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ অভিনেতা নাট্যজন আলী যাকের আর নেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে রেডিও উপস্থাপক শ্রিয়া সর্বজায়া তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন এবং বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। টেলিভিশন ও মঞ্চনাটক এবং দেশীয় বিজ্ঞাপন শিল্পের এই পুরোধা ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতির সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, প্রায় চার বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আলী যাকের। স¤প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনিন সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ‘অভিনয় শিল্পী সংঘে’র সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম জানান, গতকাল নামাজে জানাযার পর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আলী যাকেরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় সাংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রথমে তার লাশ নেওয়া হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে। দেশের সাংস্কৃতির ব্যাক্তিত্ব, নাটক সিনেমার শিল্পী-কলাকুশলী, কবি, সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ছুঁটে যান দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে এক নজর দেখতে। সেখানে বিউগলের করুণ সুরে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই মুক্তিযোদ্ধাকে। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় আলী যাকেরের কর্মস্থল এশিয়াটিকে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। বনানী কবরস্থান মসজিদে বাদ আসর নামাজে জানাজার পর সেখানেই দাফন করা হয়।
আলী জাকের ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। বাবা মোহাম্মদ তাহেরের সরকারি চাকরির সুবাদে ছেলেবেলায় এক শহর থেকে আরেক শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন আলী যাকের। তিনি সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক এবং নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়, সেই সঙ্গে ছাত্র রাজনীতিতে। আলী যাকের ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ছাত্র ইউনিয়ন মস্কোপন্থি ও পিকিংপন্থি দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেলে তিনি মস্কোপন্থি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন।
আলী জাকের বিজ্ঞাপনী সংস্থার গড়ে তুলে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। এ সময় তিনি টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকে ছিলেন সমান জনপ্রিয়। একই সঙ্গে দেশীয় বিজ্ঞাপন শিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার আলী তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভ‚ষিত করে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।
দেশের নাট্যআন্দোলনের অন্যতম নেতা আলী জাকের টিভি ও মঞ্চ নাটকে ‘কবর’ ‘নূরলদীন’, ‘গ্যালিলিও’ ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘আজ ‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’ অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনাও দেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকের যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটিরও সদস্য ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আলী জাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, আলী যাকের ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র । তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।