দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সূফী সাধকরা আল্লাহর পানে দ্রুত ছুটে যান। কারণ নামাজ বান্দাকে আল্লাহর পানে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। এরশাদ হয়েছে,‘যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর শ্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা জুমুআহ:৯)। সূফী সাধকরা নামাজের মর্ম বুঝেন। তাই তারা নামাজের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। আজানের ধ্বনি কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সূফী-সাধকরা যখন মসজিদে প্রবেশ করে। তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর পানে পৌঁছে যান। আর যখন সূফী-সাধকরা মসজিদে প্রবেশ করে জায়নাজে দাঁড়িয়ে ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু---’ বলা শুরু করেন, সঙ্গে সঙ্গে ঐ ব্যক্তির ক্বালব দুনিয়া থেকে ফারাক হয়ে প্রভুর সাথে মিশে যায়। সুবহানাল্লাহ।
নামাজি ব্যক্তি যখন প্রভ‚র সাথে মিলনের আখাংকা নিয়ে নামাজের মধ্যে দাড়িঁয়ে একের পর এক সূরা কিরাত পড়তে থাকেন। আর প্রভ‚র নূরানী ঝলক অবলোকন করে বার বার তৃপ্ত হয়ে রুকু সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। আল্লাহর কুদরতি পা জড়িয়ে ধরে নিজের ইচ্ছার কথা গুলো বলতে থাকে। ইহার স্বাদ যে কতোটা সুমধুর তা শুধু ঐ সূফী-সাধকই বুঝতে বা বলতে পারবেন। যিনি নামাজের মাধ্যমে নিজেকে দুনিয়া থেকে পৃথক করতে পেরেছেন। নিজের মধ্যে প্রভ‚র উপস্থিতি টের পেয়েছেন। এরশাদ হয়েছে,‘তিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও।’ (সূরা শুয়ারা: ১১৮)।
নামাজে দাঁিড়য়ে হাত বাধা অবস্থায় যখন সূরা ফাতিহার ঐ সমস্ত আয়াত তিয়াওয়াত করা হয় ‘আমি তোমারই ইবাদত করি, তোমরাই সাহায্য চাই, তুমি অভিসম্পাতকারীদের অন্তভ‚ক্ত করোনা’। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। দুনিয়ার মানুষ একে অপরের সাথে ওয়াদা খেলাপ করলেও, আল্লাহ কখনো তাঁর বান্দার সঙ্গে ওয়াদা খেলাপ করেন না। যিনি জমিনে ফসল বুনেন, তাকেই ফসলের জমিতে সময় মতো সেচ দিতে হয়, আগাছা পরিস্কার করতে হয় এবং ফসলের পরিচর্চা করতে হয়। সুতরাং আমরা আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দা । তাই আমাদের রিজিক দেয়া, আমাদের পরিচর্চা করা তাঁরই দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব হলো তাঁর হুকুমের প্রতি যত্মবান হওয়া। এরশাদ হয়েছে,‘নিশ্চয়ই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে খুশু-খুযুর সাথে আদায় করে।’ (সূরা মুমিনূন:১-২)। ‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের প্রতি এবং বিনীতভাবে দাঁড়াও আল্লাহর উদ্দেশ্যে।’ (সূরা বাকারা: ২৩৮)। ‘যারা তাদের সালাত সমূহের হিফাজতকারী, মূলত: এরাই হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী এবং সেখানে তারা স্থায়ী ভাবে থাকবে ।’ (সূরা মুমিনুন: ৯-১১)।
সূফী-সাধকের মতো আমরা যদি আল্লাহর পানে অগ্রসর হতে চাই। তাঁর দীদার লাভ করতে চাই। নামাজের মধ্যে তাঁর সাথে কথা বলতে চাই। তাহলে নামাজের প্রতি অবশ্যই যত্নবান হতে হবে। কারণ ইবাদতের মধ্যে খুশু-খুযু না থাকলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, তিনি তাদের ধোকায় ফেলে শাস্তি দেন এবং তারা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন আলস্য ভাবে দাড়াঁয়, লোক দেখানোর জন্য, তারা আল্লাহকে অল্পই শ্মরণ করে।’ (সূরা নিসা: ১৪২)। ‘অতত্রব দুর্ভোগ সেইসব সালাত আদায়কারীর যারা নিজেদের সালাত আদায়ে অমনোযোগী।’ (সুরা মাউনের ৪-৫)। আল্লাহতায়ালা একাগ্রতার সাথে তাঁর পানে অগ্রসর হওয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।
লেখকঃ ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।