বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল্ কোরআনের বিভিন্ন সূরায় মুমিন বান্দাহদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত সম্পর্কিত বিস্তারিত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরা ক্ষুদ্র পরিসরে সেই বৈশিষ্ট্যাবলির পরিচিতি আল কোরআনের আলোকে উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাব। আল্লাহ পাকই সকল অবস্থায় আমাদের সহায়ক, আমীন! (ক) আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে নেক আমল বা সৎকাজ সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রকৃত সৎকর্ম পরায়ণ তারাই, যারা ঈমান আনয়ন করে আল্লাহ, আখেরাত, ফিরিশ্তা, আসমানী কিতাব ও নবীগণের প্রতি। আর আল্লাহর মহব্বতের প্রেরণার মাল-সম্পদ খরচ করে নিকটাত্মীয় ইয়াতীম, মিসকীন, অসহায় পথিক, অভাবীলোকজন এবং ক্রীতদাসদের মুক্তির জন্যে। আর তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং অঙ্গীকার পুরণ করে। আর সবর ও ধৈর্য ধারণ করে বিপদ-আপদে ও যুদ্ধের ময়দানে। তারাই প্রকৃত ঈমানদার এবং তারাই সত্যিকারের মুত্তাকী ও পরহেজগার। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৭৭)।
এই আয়াতে কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য করলে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, এখানে খাঁটি ঈমানদার ও প্রকৃত সৎকর্মশীল মানুষের পাঁচটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত : ঈমান। কেননা, আল্লাহ, তাঁর রাসূল, আখেরাত, ফিরিশ্তা ও আসমানী কিতাবের ওপর ঈমান আনয়ন ছাড়া মুমিন হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। যারা ঈমানদার তারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের শামিয়ানার নিচে সর্বদাই অবস্থান করে। দ্বিতীয়ত: সৎকর্মশীল লোকদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভাবী ও অসহায় লোকদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং তাদের জীবন ও জগতের সুখ ও স্বাচ্ছন্দের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা। তৃতীয়ত: নামাজ কায়েম করা ও যাকাত আদায় করা। এতে করে দৈহিক এবাদতের পাশাপাশি মাল বা সম্পাদ ভিত্তিক এবাদতের পূর্ণতা ও পরিসাধিত হয়। চতুর্থত: ওয়াদা ও অঙ্গীকার পূরণ করা। বস্তুত: অঙ্গীকার পুরণের মাধ্যমেই ব্যবহারিক জীবনের মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বিকশিত হয়ে উঠে। অন্যথায় জীবন হয় মূল্যহীন ও দুর্বিসহ। পঞ্চমত: ধৈর্য ও সহনশীলতার বাঁধনকে অটুট রাখা। ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, দেশ ও জাতীয় জীবনের সর্বত্র ধৈর্য ও সহনশীলতাকে অক্ষুন্ন রাখা। এমন কি যুদ্ধের ময়দানেও ধৈর্য হারা না হওয়া। মোট কথা, জীবন চলার পথের সকল বাঁকে ধৈর্যের রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে রাখা। অধৈর্য না হওয়া।
(খ) উপরোক্ত আয়াতে কারীমার শেষ শব্দটি হচ্ছে ‘মুক্তাকুন’ অর্থাৎ প্রকৃত মুত্তাকী বা পরহেজগার। এই মুত্তাকী বান্দাহদের বৈশিষ্ট্য ও গুনাবলির কথা আল কোরআনের বহু আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। তন্মমধ্যে একটি আয়াত হচ্ছে এই- যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর রাস্তায় মাল-সম্পদ খরচ করে, যারা রাগ ও গোস্বা হজম করে (নিয়ন্ত্রণ করে) এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ পুণ্যকর্মশীল বান্দাহদেরকে পছন্দ করেন। আর পুণ্য কর্মশীল বান্দাহদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, যদি তারা কোনো খারাপ কাজ ও অপছন্দনীয় কাজ করে ফেলে কিংবা তাদের নাফসের প্রতি যুলুম করে ফেলে তৎক্ষণাৎ তারা আল্লাহর কথা স্মরণ করে ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর তারা জেনে শুনে কোনো খারাপ কাজ বারবার করে না। আল্লাহ ছাড়া অপরাধ মার্জনা করার কেউ আছে কি? (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৩৪-১৩৫)।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই আয়াতে কারীমায় মুমিন বান্দাহদের চারটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত: সৎকর্মশীল মুমিন বান্দাহগণ সকল অবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় সাধ্যমতো মাল-সম্পদ খরচ করে। কোনো অবস্থাতেই তারা কার্পণ্য প্রদর্শন করে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।