পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাংক অব আমেরিকার অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্টের চাকরি ছেড়ে দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে ফিরে আসেন মুনির হোসেন খান। যোগ দেন চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কে ওয়াই স্টিলে। টানা ১১ বছরের শ্রম আর মেধায় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নতি করেন। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকের রোষানলে পড়ে তিনি এখন কারাবন্দি। ১১ মাসের বেশি সময় তিনি কারা প্রকোষ্টে।
মুনিরের স্বজনরা বলছেন, ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি কর্মকর্তারা। তবে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় একের পর এক মামলা। গতকাল রোববার তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছে। এটি এক বছরে তার বিরুদ্ধে কে ওয়াই স্টিলের করা ২৬তম মামলা। বেশিরভাগ মামলাই আত্মসাতের এবং একই ধরনের।
খুব শিগগির আরো কয়েকটি কঠিন মামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে মুনির হোসেনের পরিবারকে। তার জন্য এখন ভুক্তভোগী পুরো পরিবার। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে তাদের। অব্যাহত হুমকির মুখে তিন সন্তানসহ দেশছাড়া হয়েছেন মুনিরের স্ত্রী জেবুন খান। ৭৭ বছর বয়সী মুনিরের বয়োবৃদ্ধ পিতাও রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়।
চট্টগ্রামের হাজি মুহম্মদ মহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর বিদেশে পাড়ি দেন চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন খানের পুত্র মুনির হোসেন খান। বিদেশে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। এমবিএ করে ব্যাংক অব আমেরিকায় যোগ দেন। কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের স্কুল জীবনের সহপাঠী তিনি। তার অনুরোধেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশে এসে কে ওয়াই স্টিলে যোগ দেন।
২০০৭ থেকে ২০১৮, সময়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সাফল্যও বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মুনিরকে নির্বাহী পরিচালক এবং পরে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে (পেইড ডিরেক্টর) পদায়ন করা হয়। মুনির হোসেনের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন তার এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেন প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যানের পুত্র কারাবন্দি ইয়াসিন রহমান টিটু। ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে বাক-বিতন্ডায় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মুনির হোসেন খানকে মারধর করেন তিনি। টিটু চট্টগ্রামের আলোচিত জিবরান তাবেয়ী হত্যা মামলার যাবজ্জীন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। লাঞ্ছিত হওয়ার অপমানে প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন মুনির। যোগ দেন অন্য একটি বড় প্রতিষ্ঠানে।
অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার পরই তার বিরুদ্ধে কোম্পানির ছয়শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অথচ তার দীর্ঘ ১১ বছরের চাকরির সময় তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এমনকি কোন অডিট আপত্তিও দেখাতে পারেনি কোম্পানি। মুনিরের পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, আমার ছেলে ১১ বছরে কে ওয়াই স্টিল মিলকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার বিরুদ্ধে তখন কোন অভিযোগ করা হয়নি। কিন্তু চাকরি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরই একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। আরও মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কেডিসিএস গ্রুপ এবং এর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান অত্যন্ত প্রভাবশালী। আমরা কারও সাথে লড়তে চাই না। ন্যায় বিচার চাই।
মুনিরের আইনজীবী অলোক কান্তি দাশ বলেন, প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার পর একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে ২৬টি মামলা রুজুর ঘটনায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে নজিরবিহীন। ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেসব অভিযোগে মুনিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলোর বিপরীতে কোন অডিট রিপোর্ট দেখাতে পারেননি মামলার বাদী। তার বিরুদ্ধে গতকাল সিএমএম আদালতে আরও একটি মামলা হয়েছে। এ মামলার ঘটনা দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ১৫ দিনের মধ্যে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। ২৬টি মামলার মধ্যে ২২টিতে জামিন পেয়েছেন মুনির হোসেন।
কেডিএস গ্রুপের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা বলেন, কোন অপরাধ তামাদি হয় না। দেরিতে মামলা হলেও প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণের মত তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। মুনির হোসেন খান কোম্পানির ছয়শ’ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি উচ্চমূল্যে কারখানার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ করার মাধ্যমে এসব টাকা আত্মসাত করেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে।
এদিকে মুনির হোসেনের মার্কিন প্রবাসী বন্ধুরা এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা বলেন, মুনির হোসেন দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে কেডিএস গ্রুপের ওই কোম্পানীতে যোগ দিয়েছিলেন। সুনামের সাথে সেখানে চাকরি করেছেন। কিন্তু চাকরি ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অথচ চাকরিতে থাকাকালে এবং চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে কখনই কোন অভিযোগ করেনি তারা। তারা বলেন, তিনি যদি ছয়শ’ কোটি টাকা আত্মসাতই করতেন তাহলে সপরিবারে আমেরিকান পাসপোর্টধারী হয়েও কেন দেশে চাকরি করছেন। তারা মুনির হোসেনের মামলা প্রত্যাহার করতে প্রধানমন্ত্রীরও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।