বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নবী করিম (সা.) বলেন, মুসলিম সেই ব্যক্তি যার জবান ও আচরণের অনিষ্ট থেকে অপর মানুষ নিরাপদ থাকে। অপর হাদীসে আছে, মানুষের নেকীর পাল্লায় সবচেয়ে বেশি ভারি হবে তার উত্তম আচরণ ও নৈতিকতা। (আল আহাদীস আল মুন্তাখাবা)।
আমরা যারা ঈমান এনেছি। আমরা যারা মুসলমান। আমাদের ঈমানের কিছু দাবি আছে। ইসলাম-অনুসারী হওয়ার কারণে কিছু বিশেষ দায়িত্ব আছে। ঈমান-আমলের কাজ আছে। এসব কাজ না করে আমরা আল্লাহকে খুশি করতে পারব না। ঈমান-আমল ও আখলাকের এই রাস্তা পার না হয়ে আমরা জান্নাতে যেতে পারব না। এই দুনিয়ার জরুরি দায়িত্ব পালন না করে আমরা কামিয়াব হতে পারব না। আল্লাহর হক ও বান্দার হক না দিয়ে আমরা দায়মুক্ত হতে পারব না।
এক অমুসলিম ব্যক্তি হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর কাছে প্রশ্ন করেছিল যে, হযরত, আমি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই। ইসলাম নিয়ে অনেক পড়াশোনাও করেছি। আমার কাছে খুব পছন্দনীয় ও প্রশান্তিময় ধর্ম বলে মনে হয়েছে। কিন্তু আমি এর বিশালত্ব দেখে ভয় পাই, আমি এর পরিপালন ও অনুসরণ করতে পারব কি-না। এর শুরু ও শেষ খুঁজে পাই না। আপনি এ যুগের শ্রেষ্ঠ ইসলামী মনীষী। যদি দয়া করে আপনি আমাকে সংক্ষিপ্ত ইসলাম পরিচিতি জানিয়ে দিতেন।
হযরত থানভী রহ. তাকে বললেন, ইসলাম হলো : (১) স্রষ্টার কিছু অধিকার দেয়া, (২) সৃষ্টিজগতের কিছু অধিকার দেয়া আর (৩) নিজে কিছু সীমারেখা মেনে চলার নাম। ওই ভদ্রলোক তখন বললেন, অপার সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া একজন মানুষ ছিলাম আমি। আপনার এই কথা থেকে মনে হলো, আমি যেন জীবনরক্ষার একটি জাহাজে উঠতে পেরেছি। সত্যিই আপনার মতো এভাবে ইসলামকে অনেকেই বুঝতে পারে না। এরপর সেই ভদ্রলোক অল্প দিন পরেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
আমরা যারা ইসলাম পেয়েছি তাদেরও কর্তব্য, ইসলামকে সহজ-সরলভাবে বুঝতে পারা। এ জন্য শায়খ, মুরব্বী, আলেম ও ইমাম সাহেবগণের সাথে মহব্বতের সম্পর্ক রাখা চাই। আমার প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কী কী হক রয়েছে তা জেনে নেয়া কর্তব্য। মাখলুকাত তথা বান্দার কী কী হক রয়েছে সে সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা চাই।
পাশাপাশি একজন সক্ষম মানুষ হিসাবে অথবা দোষে-গুণে সমন্বিত মানুষ হিসাবে আমার জীবন চলার পথে আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকাম বা বিধি-নিষেধের কোনো কোনো সীমারেখা রয়েছে, তা বিশদভাবে জানা এবং মানা অবশ্যকর্তব্য। যদি এ তিনটি শিরোনাম বিস্তারিতভাবে আমরা জানতে ও মানতে পারি, তাহলে আমরা ইসলামের ওপর জীবনযাপন এবং ঈমানের ওপর মৃত্যুবরণ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যারা ঈমান এনেছো তোমরা পরিপূর্ণ আত্মসমর্পিত হও। ইসলামে পূর্ণাঙ্গরূপে দাখিল হও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।