পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কথিত কোটি টাকার ‘তক্ষক’ কম দামে বিক্রির কথা বলে ডেকে এনে করা হয় জিম্মি। এরপর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি। পণের টাকা না পেয়ে টানা পাঁচ দিন নির্মম নির্যাতনে খুন। অতঃপর লাশ ফেলে দেওয়া হয় পাহাড়ের পাদদেশে ৫০ ফুট গভীর ক‚পে। সেখানে মাটি চাপা দিয়ে লাশ গুম করা হয়।
নিষ্ঠুরতম এই খুনের ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভ‚জপুরে। হত্যাকাÐের এক বছর পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ভ‚জপুর হেঁয়াকো-বাগান বাজার সীমান্তের নূরপুর এলাকা থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। নির্মম খুনের শিকার হেলাল উদ্দিন (৪৩) ঢাকার মুগদা মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা এনজিও কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। কঙ্কাল উদ্ধারের মাধ্যমে ক্লু লেস এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ অভিযানে নেমে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সীমান্ত সেই সাথে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নির্জন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অপহরণকারী চক্রের একটি গোপন আস্তানারও সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। এই ঘটনার সাথে জড়িত খুনিচক্রের তিন সদস্যকে পাকড়াও করেছে পিবিআই।
যেভাবে ফাঁদে পড়েন হেলাল
পিবিআই জানায়, তক্ষক বিক্রির কথা বলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ডেকে আনা হয়। এরপর তাদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা হয়। আর যারা মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হন তাদের গুম করা হয়। এই চক্রের একজন কোটি টাকা মূল্যের তক্ষক কম মূল্যে বিক্রির লোভ দেখিয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর বাবুল সিকদার নামে এক ঠিকাদার ও এনজিও সংস্থা সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে কৌশলে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। তাদের দেওয়া ঠিকানা মতো ফটিকছড়ির ভ‚জপুর হেঁয়াকো-বাগান বাজার সীমান্তে পৌঁছলে তাদের জিম্মি করা হয়। নিহত হেলালের স্ত্রী ঝর্ণা আকতার জানান, তার স্বামীকে তক্ষক বিক্রির নামে কৌশলে হেঁয়াকো বাজারের একটি বোডিংয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে অপহরণ করে তার কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের জন্য চারটি বিকাশ নম্বর দেয়। মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পর ২২ নভেম্বর বাবুল সিকদারকে ছেড়ে দিলেও হেলালকে তারা হত্যা করে।
দুঃসহ এক বছর
ঠিকাদার বাবুল শিকদার ফিরে গেলেও ফিরেনি হেলাল উদ্দিন। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তাও জানতো না পরিবার। স্ত্রী, সন্তানদের ধারণা ছিলো তিনি নিখোঁজ আছেন। একদিন হয়তো ফিরে আসবেন। হেলালের স্ত্রী ঝর্ণা বলেন, তার খোঁজ না পেয়ে ভ‚জপুর থানা পুলিশের কাছে বারবার সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। তারা আমাদের কখনো রামগড়, কখনো খাগড়াছড়ি, কখনো ঢাকার বাসাবোতে মামলা করতে বলে। হয়তো তখন পুলিশ দ্রæত মামলা নিয়ে অভিযান শুরু করলে আমার স্বামীকে বাঁচানো যেত।
মামলা পিবিআইতে
এক পর্যায়ে মামলার বাদী মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেন। এরপর পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ পরিদর্শক মো. আবু হানিফকে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি এই চাঞ্চল্যকর অপহরণ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে আসামি জাকির হোসেন রুবেলকে (২৪) গ্রেফতার করেন। গত ২৫ জুলাই রুবেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে খুনি চক্রের সদস্যদের নাম প্রকাশ করেন। এরপর গত ১৮ নভেম্বর ভ‚জপুর থানাধীন বাগানবাজার ও হেঁয়াকো এলাকায় বিশেষ অভিযানে আসামি মো. বেলাল (৩৬) ও মো. রাজা মিয়াকে (৩৭) পাকড়াও করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বাক্সভর্তি জীবিত ‘তক্ষক’ ১টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটরের ৭০টি মোবাইল সিম, ৮টি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে কঙ্কাল উদ্ধার
পিবিআই জানায়, দুই আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা হেলালকে খুনের কথা স্বীকার করে। বুধবার বেলালকে নিয়ে সেখানে অভিযান শুরু হয়। লাশ গুমের স্থান চিহ্নিত হলেও উদ্ধার প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিঘœ ঘটায় বিষধর একটি সাপ। গভীর গর্ত থেকে লাশ তুলে আনার জন্য পিবিআই সদস্যরা যখন নিচে নামতে যাচ্ছিলেন তখনই বিষধর সাপটি চোখে পড়ে। পরবর্তীতে গর্তের ভেতর আগুন ফেলে সাপটির মৃত্যু নিশ্চিতের পর আবার কঙ্কাল উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু গর্তের গভীরতা বেশি, পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের রাত হওয়ায় বুধবার রাতে উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে কঙ্কাল উদ্ধার কাজ হয়ে রাতে শেষ হয়।
নির্মন নির্যাতনে খুন
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হোসেন জানান, হেলাল উদ্দিনকে ভ‚জপুর যাওয়ার পরপরই জিম্মি করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় ওই পাহাড়ে চ‚ড়ায়। সেখানে তাকে বেঁধে রেখে টানা মারধর করা হয়। টানা নির্যাতন আর খাবারের অভাবে প্রাণ হারান হেলাল। এরপর ওই পাহাড়ের উপর থেকে লাশ ফেলে দেওয়া হয় ৫০ ফুট গভীর ক‚পে। পুলিশ সুপার জানান, কঙ্কালের ময়না তদন্ত হবে। এরপর বাকি আসামিদের গ্রেফতার করে দ্রæত চার্জশিট দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য এর আগে চট্টগ্রাম নগরী থেকে অপহৃত বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীনকেও অপহরণের পর হত্যা করা হয়। পরে র্যাবের অভিযানে ফটিকছড়ির ফকিরের টিলা থেকে তার কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব।
তক্ষক কি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, তক্ষক একটি গিরগিটি প্রজাতির প্রাণি। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যস্ত একটি প্রাণি। এই প্রাণিটি নিয়ে জুয়া খেলা চলছে। এর দাম কোটি টাকা বলে প্রচার করা হচ্ছে। এই গুজবে অনেক কান দিচ্ছেন। বাস্তবে কোথাও তক্ষক এতো দামে বিক্রি হয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।