মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গেলেও ভোট-কারচুপির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশে বাধা দিয়ে আসছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান ঘাঁটি বলে পরিচিত জর্জিয়াতে অল্প ব্যবধানে বাইডেনের কাছে তিনি হেরে গেলও পরাজয় মানতে অস্বীকার করে ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদন মেনে আবার ভোট গণনা করেও দেখা গিয়েছে ওই প্রদেশে বাইডেনই জয়ী হয়েছেন। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার ফলে আসন্ন সিনেট নির্বাচনেও আসন হারার শঙ্কা দেখা দিয়েছে রিপাবলিকানদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট বলেছেন, ‘টানা ছ’দিন ধরে হাতে ব্যালট গোনার পর দেখা গিয়েছে, এই প্রদেশেও জয়ী হয়েছেন জো বাইডেন।’ এতদিন ধরে রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি ছিল জর্জিয়া, এবার সেটা চলে গিয়েছে ডেমোক্র্যাটদের হাতে। ট্রাম্পের দাবি মতোই ভোটের ব্যবধান কম থাকায় সমস্ত কাউন্টিতেই ভোট পুনর্গণনা হয়। প্রায় ৫০ লাখ ভোট পুনর্গণনা করে দেখা গিয়েছে, শেয পর্যন্ত জয় পেয়েছেন জো বাইডেনই। ওই প্রদেশে গণনার সময় নানারকম ভ্রান্তি নজরে এসেছে বলে অভিযোগ ছিল। চারটি কাউন্টির ক্ষেত্রে কিছু ভোট উদ্ধার করা হয়, যেগুলি আগে গণনা করা হয়নি। তা নিয়ে অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এমনকি প্রাথমিক গণনায় প্রায় ২ হাজার ৬০০ ভোট বাদ পড়ে যাওয়ার অভিযোগে ফ্লয়েড কাউন্টির প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করা হয়। অবশ্য, নীরিক্ষায় বেরিয়ে এসেছে ভোটের দিন গোণা হয়নি ৫ হাজার ৮০০ ব্যালট। এর মধ্যে বাইডেনের ভোটও ছিল। চূড়ান্ত গণনা শেষে দেখা যায় ১২ হাজার ২৮৪ ভোটের ব্যবধাণে ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন বাইডেন। ফলে, রাজ্যটির ইলেক্টোরাল ভোটের ১৬টিই পেলেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সবমিলিয়ে তার ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৩০৬টি। আর ২৩২ ইলেক্টোরাল ভোটেই আটকে আছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
জর্জিয়ায় এত ঝামেলা করেও শেষ অবধি ট্রাম্প কিছুই পেলেন না। উল্টো মিথ্যা অভিযোগ করায় ইমেজ সঙ্কটে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে রিপাবলিকানদের মধ্যে। এর ফলাফল তাদের জন্য মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি সেখানে সিনেট সদস্য নির্ধারনের জন্য রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাজ্যটিতে সিনেটের দুইটি আসন রয়েছে। দু’টিই বর্তমানে রিপাবলিকানদের দখলে। মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষ হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও উচ্চ কক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিপাবলিকানদের হাতে। ফলে বাইডেনের অনেক সিদ্ধান্তই আটকে দিতে পারে তারা। তবে জর্জিয়ার আসন দুইটি ডেমোক্র্যাটরা জিতলে পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে যাবে। ১০০ কক্ষের সিনেটে রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে ৫০ টি আসন। ডেমোক্র্যাটদের হাতে রয়েছে ৪৬টি। জর্জিয়ায় বাইডেনের জয়ের পরে তার জনপ্রিয়তায় তাদের দুই প্রার্থী জিতে গেলে সিনেটে দুই দলেরই আসন সংখ্যা সমান হয়ে যাবে। তখন বাইডেনের কোন আইন বা প্রস্তাবে রিপাবলিকানরা বিরোধিতা করলেও সমান সংখ্যক ডেমোক্র্যাট সদস্যের সমর্থনে টাই হবে। সে ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ, সংসদের দুই কক্ষেই ডেমোক্র্যাটদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জিত হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারের পরে সিনেটে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচনে জিততে মরিয়া রিপাবলিকানরা। এ কারণে, গতকাল থেকেই সেখানে প্রচারে নেমে পড়েছেন বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন ওসোফ এবং রাফেল ওয়ার্নককে পরাস্ত করে সিনেটর ডেভিড পেরডু এবং কেলি লোফ্লারকে জেতাতে তিনি জোরালো প্রচারণা চালাতে চান।
এদিকে, জর্জিয়ায় হারার পরে এবার মিশিগান নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা শুরু করেছেন ট্রাম্প। সেখানেও তিনি হার মানেননি। মিশিগানে বাইডেনের জয় চূড়ান্ত হওয়ার পরে অভূতপূর্ব ভাবে গতকাল ট্রাম্প হোযাইট হাউসে ডেকে পাঠিয়েছেন মিশিগানের রিপাবলিকান প্রতিনিধিদের। সেখানে জো বাইডেনকে জয়ী হিসাবে চূড়ান্ত ঘোষণা আসার আগেই তা আটকানোর চেষ্টা করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, একাধিক অন্যান্য প্রদেশের রিপাবলিকান প্রতিনিধিদের ট্রাম্প ডেকে পাঠিয়েছেন নতুন করে পরিকল্পনা করার জন্য যাতে বাইডেনের জয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা আসার আগেই কিছু একটা ব্যবস্থা করা যায়। কারণ, একবার ঘোষণা হযে যাওয়া মানে খাতায় কলমে ট্রাম্পের পরাজয় নথিভুক্ত হয়ে যাওয়া। ঘোষিত ফলাফলের ভিত্তিতে ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভোট দেবেন। তার আগে বাধা সৃষ্টি করার জন্য ট্রাম্প আর কী কী করতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।