বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ‘আল্লাহতাআলা এক হাজার মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে ছয়শ’ সাগরে বাস করে এবং চারশ’ স্থল ভাগে।’ সুতরাং, এ হাজার কিসিম হতে লাখ লাখ প্রকারের মাখলুক জলে-স্থলে বাস করছে, যার সঠিক সংখ্যা কেবল আল্লাহ তাআলারই জানা।
ছয়শ’ মাখলুক সাগরে বাস করে। তাদের সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান সীমিত। সাগরে রয়েছে মানুষের উপকার কল্যাণের অফুরন্ত ভান্ডার। সম্ভবতঃ এ কারণেই হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘হাদ্দেসু আনিল বাহরে লা হারাজা’। অর্থাৎ সাগর নিয়ে তোমরা আলোচনা পর্যালোচনা করো, এতে দোষের কিছু নেই। কেননা সাগরে রয়েছে মানুষের কল্যাণ, যার মধ্যে মৎস্য সম্পদ অন্যতম।
আল্লাহর সমগ্র মাখলুকের মধ্যে মাছের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলা হয়ে থাকে। বিখ্যাত লেখক জাহেজের মতে, ‘মাছ পানিতে আল্লাহর তাসবীহ পড়ে, স্থল ভাগে নয়।’ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘মাছ তখনই জালে ফেঁসে যায়, যখন সে আল্লাহ তাআলার জিকির হতে বেখবর হয়ে যায়।’ এ সম্পর্কে একটি মজার ঘটনা বর্ণিত আছে। আবু আব্বাস মাসরুক বর্ণনা করেন: ‘আমি ইয়েমেনে অবস্থান করছিলাম, সেখানে আমি একজন মাছ শিকারীকে দেখি। সে সাগর তীরে বসে মাছ শিকার করছিল এবং তার এক পাশে তার ছোট মেয়ে বসে। যখন সে কোনো ছোট মাছ ধরে জমিনে ফেলে দিত, তখন মেয়েটি তা ধরে তার পিতার অজান্তে সাগরে নিক্ষেপ করত। একবার মাছ শিকারী পেছনে ফিরে দেখতে চায় কত মাছ ধরা হলো, দেখা গেল মাছ রাখার পাত্র একেবারে শূন্য রয়েছে। সে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করল, ‘বেটি! মাছগুলো কোথায় গেল?’ মেয়ে জাবাব দিলো: ‘আব্বাজান! আমি আপনাকে বলতে শুনেছিলাম, আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মাছ যখনই আল্লাহর জিকির হতে উদাসীন হয়ে যায় তখনই জালে ফেঁসে যায়। তাই আমার ভালো মনে হলো না যে, আমি এমন বস্তু খাব যা আল্লাহর জিকির ভুলে যায়।’ মেয়েটির জবাব শুনে পিতা কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং জাল ফেলে দেয়।
মাছের সংখ্যা যেমন বেশুমার, তেমনি মাছের নানা কাহিনীতে ইতিহাস ভরপুর। কোরআনে হজরত মূসা (আ.) যখন হজরত খিজির (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন, তখন মাছ হারিয়ে যাওয়ার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এবং শনিবারে মাছ শিকার না করার নির্দেশ অমাণ্য করার করুণ পরিণতির বর্ণনাও রয়েছে। কাহিনী প্রচলিত, হজরত সুলায়মান (আ.)-এর গণ দাওয়াতের সমস্ত খাবার সাগর হতে একটি মাছ এসে এক গ্রাসেই সাবাড় করে দিয়েছিল। মাছের হাজার হাজার অদ্ভুত কাহিনী রয়েছে, কিন্তু এখানে আমরা এমন একটি মাছের কাহিনী উল্লেখ করতে চাই, যেটি ছিল ইসলামের মর্ম বাণীর বাহক।
মানুষের নিত্য জীবনযাপনের মাঝে মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, কোনো কোনো মাছের গায়ে আল্লাহ ও রাসূলের নাম অর্থাৎ- কলেমা ইত্যাদি লেখা থাকে। এ পর্যায়ে ইতিহাস হতে একটি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
আল্লামা কাজভিনী ‘আজায়েবুল মাখলুকাত’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থে লিখেছেন: আব্দুর রহমান ইবনে হারুন আল মাগরেবী বর্ণনা করেন, ‘একবার আমি সাগরের গভীরে নৌকায় আরোহণ করি। আমাদের সঙ্গে ছিল সিসিলির (ছাকালী) অধিবাসী এক ছেলে। তার কাছে মাছ ধরার ডোড় (রশি) ও কূট (বর্শি) ছিল। যখন আমাদের নৌকার ‘বাতুন’ নামক স্থানে পৌঁছে তখন ছেলেটি তার ডোড় সাগরে নিক্ষেপ করে। তাতে এক হাত সম একটি মাছ আটকা পড়ে। ছেলেটি তা বের করে। আমরা যখন তা দেখি, তখন জানা গেল যে, মাছটির ডান কানের ওপর দিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’, কানের নিচে ‘মোহাম্মাদ’ এবং তার বাম কানের নিচে ‘রাসূলুল্লাহ’ লিখিত ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।