Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মাদারীপুরে অর্ধশতাধিক অবৈধ স’মিল

রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মাদারীপুরের ৪টি উপজেলায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স’মিল। পরিবেশ ও বনবিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ৭৮টি স’মিল। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাবে ও কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় ৪টি উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এ সব স’মিল। ফলে পরিবেশ মারাত্বক হুমকিতে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, মাদারীপুর জেলায় বর্তমানে ১৫৯টি স’মিল রয়েছে। ১৫৯টি স’মিলের মধ্যে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতরে ৮১টির লাইসেন্স রয়েছে। বাকি ৭৮টির মধ্যে ১৬টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে লাইসেন্সবিহীন স’মিল রয়েছে ৬২টি।

সূত্র মতে, স’মিল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্তির পর নিতে হয় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। ফলে যত্রতত্র স’মিল স্থাপনের কারণে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। স’মিল লাইসেন্স বিধিমালা ২০১২-র আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ফি বাবদ ২০০০ টাকা ‘১/৪৫৩১/০০০০/২৬৮১ (বিবিধ রাজস্ব ও প্রাপ্তি)’ খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা যে কোন সরকারি ট্রেজারিতে জমাপূর্বক উহার ট্রেজারি চালান আবেদনপত্রের সহিত সংযুক্ত না করলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হইবে না। সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে স’মিল স্থাপন করা যাবে না। বিধিমালায় আরো বলা আছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে কোনো নিষিদ্ধ স্থানে স’মিল স্থাপন করা হয়ে থাকলে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আইন আছে তেমন প্রয়োগ নেই।

সরেজমিন দেখা যায়, মস্তফাপুর, তাতীবাড়ী, ঘটকচর টেকেরহাট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কোন কোন স’মিল দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত হলেও পরিবেশ বন বিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে। এমন প্রায় অধিকাংশ স’মিল ১০ বছর, ৭ বছর কেউবা ৫ অতিবাহিত হলেও কোন বৈধতা ছাড়াই অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স’মিল ব্যবসায়ী জানান, লাইসেন্সের জন্য টাকা কাগজপত্র সবই দিয়েছি কিন্তু এখনও পাইনি। আবার কেউ কেউ বলছেন, সবদিকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছি। এইভাবে লাইসেন্সবিহীন স’মিল চলার কারণে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার আগে-পরে চালানো নিষেধ হলেও তা মানছেন না মালিকরা। গভীর রাত পর্যন্ত কাঠ কাটা হচ্ছে। এতে শব্দ দূষণসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাপস কুমার সেনগুপ্ত জানান, তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। লাইসেন্সবিহীন ৬ মিলকে ইতোমধ্যেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া ট্রেড লাইসেন্সকে যারা স’মিলের লাইসেন্স মনে করছেন তাদের বোঝানো হচ্ছে। লাইসেন্স করার জন্য গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরো ৬টি আবেদন পড়েছে। সেগুলোকে যাচাই বাচাই করে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনোভাবেই স’মিল চালানোর নিয়ম নেই। এমনকি তাদের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে বিদ্যুৎ সংযোগও অবৈধ বলে গণ্য হয়। লাইসেন্সবিহীন স’মিলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তা চলমান রাখা হয়েছে। আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে অনেককে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ