রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে আনিছুরের। দরিদ্র পিতার দিনজুরিতে নিত্য অভাব ছিল সংসারে। ফলে চৌদ্দ বছর বয়সেই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে যেতে হয়েছে কর্মজীবনে। তার ছোট ভাইকেও বড় ভাইয়ের পথ অনুসরণ করতে হয়েছে। কারণ বাবার জমিজমা বলতে কিছুই ছিল না। তিনি পরের বাড়িতে কাজ করতেন। দিন শেষে যা পেতেন তা দিয়ে চলত টানাটানির সংসার। ফলে পরিবারে চরম অভাবের মধ্যে কাটতে হয়েছে তাদেরকে। অভাব দূর করতে কাজে যোগ দেয় আনিছুর। তাও দর্জির কাজ। প্রথম বছর বিনা বেতনেই কাজ করতে হয়েছে তাকে। এরপর দিনশেষে ৫০ টাকা বা ৭০ টাকা। এটাই সংসারে দিত সে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা গজেরকুটি গ্রামের দিনমজুর সাইদুল ইসলামের পূত্র আনিছুর রহমান। তিনভাই বাবা-মা ও দাদা-দাদি নিয়ে তাদের পরিবার। ছোট ভাই আতাউর ৫ম শ্রেণীতে ইতি টেনে তার সাথে দর্জির কাজ শিখছে। ইউনিয়নের বালাহাট বাজারে সান টেইলার্সে তারা কাজ করছে। এখানে টানা ৫ বছর মনোযোগ দিয়ে কাজ শেখে আনিছুর। এরপর বাবার পুরাতন সাইলেকটি ১ হাজার ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেইসাথে স্থানীয় এক এনজিও’র কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে। এই টাকা দিয়ে সে একটি সেলাই মেশিন ও বিভিন্ন কাপড় কিনে নিজেই দর্জির দোকান খুলে বসে। ছোট ভাই আশরাফুলকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। অল্পসময়ে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে সে। কিন্তু আয়ের বেশিরভাগ অর্থ সংসারে খরচ হওয়ায় ঋণের চাপ বাড়তে থাকে। একসময় ঋণ পরিশোধ করার মানষে ছোট ভাই আতাউরকে দর্জির দোকানের দায়িত্ব দিয়ে সে ভারতে চলে যায়। এই গ্রামের অনেকেই ভারতে গিয়ে কাজ করে। ওদের কাছে শুনেছে, সেখানে দর্জির কাজের চাহিদা বেশি। তাই সে বন্ধুদের সাথে ভারতের দিল্লি শহরের ইন্ধানগরে গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ জোগাড়[ করে। সেখানেই পাঁচ-পাঁচটি বছর কেটে যায় তার। এরপর বাড়িতে ফেরে আনিছুর। ফেরার সময় ভারত থেকে উন্নতমানের সেলাই মেশিন কিনে আনে। এরপর সঞ্চিত ৫ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের থাকার জন্য ৯ শতক জমি ৩ লাখ টাকা দিয়ে কেনে। সেখানে একটি ঘরে বড়সড় আকারে টেইলার্সের দোকান খুলে বসে। নাম দেয় ‘ভাই-ভাই টেইলার্স।’ বর্তমানে এলাকার জনপ্রিয় টেইলার্সের দোকান এটি। বর্তমানে আনিছুরের মাসিক আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ছোট ভাই আশরাফুলকে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগে বিএ অনার্সে ভর্তি করানো হয়েছে। তাকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পড়াশোনার খরচ দেয়া হচ্ছে। অভাব- অনটনের কারণে নিজেরা পড়তে না পেরে ছোট ভাইকে তারা পড়াশোনা করাচ্ছে। চলতি বছর আনিছুর ও আতাউর বিয়ে করেছে। বাবা-মা আর দাদিকে নিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে। জীবনযুদ্ধে বিজয়ী এই দুইভাই গ্রামের অনুকরণীয় বলে সকলে তাদের নিয়ে এখন গল্প করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।