Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সৃষ্টির জন্য নৈতিকতা বর্জন করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ঐতিহাসিকরা সাধারণত অতীতে যা ঘটেছিল তা ব্যাখ্যা করেন, সম্ভবত এই ধারণা নিয়ে যে, বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা বর্তমানকে প্রভাবিত করতে সেই তথ্যগুলি ব্যহার করবেন। স্কুল অফ হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সায়েন্সেস’র আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক প্রিয়া সতীয়া তার বই ‘টাইম্স মন্সটার: হাউ হিস্ট্রি মেক্স হিস্ট্রি’তে বলেছেন, ১৮ শতকে ইতিহাসকে যখন নীতিশাস্ত্র রূপে বিবেচনা করা হত, তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নৈতিকতা বর্জন করেছিলেন ঐতিহাসিকরা। একটি বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ তৈরিতে লাখ লাখ মানুষকে পরাধীনতার দুর্ভোগ দেয়ার কারণে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের নৈতিকতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল।

১৮ শতকের শেষার্ধে প্রখ্যাত দার্শনিকরা বলেছিলেন যে, নৈতিক শিক্ষার জন্য আমাদের অতীত অধ্যয়ন করা দরকার। সতীয়া বলেছেন, ‘এর আগে সমাজগুলি ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে থাকত না বরং ধর্মতত্ত¡ বা জ্যোতিষ বা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির দিকে নজর রাখত। যদিও সেই জিনিসগুলি রয়ে গিয়েছিল, তবে এই নতুন ধারণাটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্থপতি হয়ে ওঠা কিছু ব্রিটিশ অভিজাতদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সেই অভিজাতদের মধ্যে জন স্টুয়ার্ট মিল থেকে উইনস্টন চার্চিল পর্যন্ত ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রবিদরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ১৮ শতকের ঐতিহাসিকরা, যাদের মধ্যে অনেকেই নীতি নির্ধারক ছিলেন, তারা তাদের সাম্রাজ্য তৈরি এবং পরিচালনা তদারককারীদেরকে বড় কিছু করার জন্য সাধারণ নৈতিক প্রবৃত্তিগুলিকে উপেক্ষা করতে শিখিয়েছিলেন, যেটিকে তারা একটি ইশ^র প্রদত্ত একটি দুর্দান্ত ঐতিহাসিক পরিকল্পনা হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। যদিও বিখ্যাত অনেক চিন্তাবিদদেরকে প্রায়শই ধর্মনিরপেক্ষ বলে মনে করা হয়। তবে তাদের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, মানুষের ক্রিয়াকর্মের একটি উচ্চতর, ঐশ^রিক উদ্দেশ্যে ছিল। এই ধারণাটি তাদেরকে নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের বৈধতা দিয়েছিল, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশের বিশাল জনগোষ্ঠী নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।

সতীয়া তার বইয়ের ভ‚মিকাতে লিখেছেন যে, সাম্রাজ্য সম্পর্কে একাধিক কাহিনীর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, অতীত ইতিহাসের সংবেদনশীলতা থেকে আসা বিবেক কীভাবে আধুনিক ইতিহাসে উন্মোচিত হয়েছে। সেই ইতিহাসের প্রধান শক্তি সাম্রাজ্যবাদ, শিল্প পুঁজিবাদ এবং জাতীয়তাবাদ ন্যায্য অগ্রগতির উদ্দেশ্যে অন্যায্য বাস্তব তৈরি করেছে। তার কথাটি বোঝানোর জন্য সতীয়া কেনিয়াতে লাখ লাখ এবং সুদানে কয়েক হাজার মানুষ হত্যার ব্রিটিশ সহিংসতার উদাহরণগুলিকে উদ্ধৃত করেছেন। তিনি দাবি করেন যে, এধরণের হীন যৌক্তিকতা অতীতেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমান জলবায়ু সংকট সেই সংস্কৃতিগত আচরণের ফলাফল, যা ব্যক্তিভিত্তিক অগ্রাধিকার এবং ভবিষ্যত প্রতিপত্তির বস্তুগত অগ্রগতি সমর্থন করে। সতীয়া লিখেছেন, এমুহুর্তে জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনা সাম্রাজ্যগুলির উত্তরাধিকারীদের হাতে বন্দী। কারণ যখন কলোনী পরবর্তী রাষ্ট্রগুলি তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করার অধিকার দাবি করে, তখন তাদের প্রাক্তন ঔপনিবেশিকরা জলবায়ু সংরক্ষণের নামে তাদের সেই স্বপ্ন ত্যাগ করার নসিহত দেন।

সানিয়া স্ট্যানফোর্ড নিউজকে বলেছেন, ‘আমাদের আফসোস করা উচিত যে আমরা আমাদের নৈতিকতাকে খর্ব করেছি। অগ্রগতিকে আমাদের অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে গ্রহণের পরিবর্তে আমরা ন্যায়বিচার, মানবিকতা, শান্তি, সংযোগের আদর্শে পরিচালিত হতে পারতাম। অগ্রগতি ইতিহাসের মূল নয়। ঐতিহাসিকদের জটিল এবং প্রায়শই নৈতিক প্রশ্নের সম্মুখীন বিষয়গুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমান নীতিনির্ধারকদের নিজস্ব আদর্শিক ভবিষ্যত তৈরির জন্য ঐতিহাসিকদের আরও ভাল মতামতকে দমন করা উচিত নয়।’ বইয়ের উপসংহারে তিনি লিখেছেন, ‘এখন সময় এসেছে যে ইতিহাসের নির্মাতা এবং ভোক্তাগণ একসাথে স্বীকার করেন যে, এমন কোনও অগ্রগতি নেই যা অনৈতিকতাকে ন্যায়সঙ্গত করে। আমরা কেবল বর্তমানে বাস করি না; আমরা সর্বক্ষণ অতীতকে আমাদের সাথে নিয়ে চলছি। এবং আমাদের কখনই শুধু ভবিষ্যতের ওপর দৃষ্টি রাখা উচিত নয়। ইতিহাস আমাদের সব কালের সাথে যুক্ত রাখে এবং সময়ের সেই অভিজ্ঞতা মানুষ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ সূত্র : স্ট্যানফোর্ড নিউজ।



 

Show all comments
  • পায়েল ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
    সঠিক কথা
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:২৭ এএম says : 0
    In 1960's one of the British scholar remarked that we are far ahead of technology but we are morally 500 years backwards. Not only that they change some part of Bible in support of Slave Business.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রিটিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ