Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসূল (সা.)-এর ত্যাগ ও ধৈর্য-২

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

গত আলোচনায় হুজুর আকরাম (সা.)-এর ত্যাগ ও ধৈর্য নিয়ে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছিল, যা ছিল অসম্পূর্ণ। আজ তা শেষ করার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। হযরত ওমর (রা.) নবী করিম (সা.)-এর আদেশ মোতাবেক আমাকে নিয়ে গেলেন এবং আমার পূর্ণ দাবি মিটিয়েও বিশ ছা’অ খেজুর বেশি দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই বিশ ছা’অ কেন? তিনি বললেন, হুজুর (সা.) তা-ই আদেশ করেছেন। আমি বললাম, ওমর, আপনি আমাকে চেনেন কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, আমি যায়েদ ইবনে শানা। তিনি বললেন, সেই ইহুদিদের বড় পন্ডিত? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমিই ইহুদিদের বড় পন্ডিত। তিনি বললেন, এত বড় সম্মানিত লোক হয়েও তুমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এমন নিকৃষ্ট ব্যবহার করলে কেন? আমি বললাম, নবুওয়াতের আলামতসমূহের মধ্যে দু’টি আলামত পরীক্ষা করার সুযোগ আমি ইতঃপূর্বে পাইনি। একটি এই যে, তার সহিষ্ণুতা তার ক্রোধের ওপর প্রবল হবে।

দ্বিতীয় এই যে, তার সাথে যতই মূর্খজনোচিত ব্যবহার করা হবে, তার সহিষ্ণুতা ততই বৃদ্ধি পাবে। এখন এ দু’টি আলামতও পরীক্ষা করে দেখলাম। এখন আমি আপনাকে আমার ইসলাম গ্রহণের সাক্ষী করছি। আমার অর্ধেক মাল উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সদকা। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। যায়েদ ইবনে শানা এরপর বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অবশেষে তাবুক যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। (মজউল ফাওয়ায়েদ, খাসায়েলে নববী)।

ইমাম বুখারী (রহ.) হযরত আনাস (রা.)-এর বাচনিক রেওয়ায়েত করেন যে, একবার আনাস (রা.) রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সাথে যাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাঁধে শক্ত পাড়বিশিষ্ট একটি নাজরানি চাদর ছিল। এ সময় এক বেদুইন এসে তার চাদর ধরে হ্যাঁচকা টান মারল। হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাঁধের দিকে চেয়ে দেখি চাদরের শক্ত প্রান্তের টানে তার কাঁধ ছিলে গেছে। এরপর বেদুইন বলল, মুহাম্মাদ আপনার কাছে রক্ষিত আল্লাহ তায়ালার মাল থেকে আমাকে কিছু দান করার নির্দেশ দিন। এমতাবস্থায়ও রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং তাকে কিছু দেয়ার জন্য আমাকে বললেন। (মাদারিজুন নবুওয়াত)।

একবার মক্কায় এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যে, লোকেরা হাড্ডি ও মৃত জন্তু খেতে শুরু করে দেয়। আবু সুফিয়ান তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোর শত্রু ছিল। সে এসে বলল, মুহাম্মাদ, আপনি মানুষকে পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার শিক্ষা দেন। আপনার সম্প্রদায় দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারাচ্ছে। আপনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দুআ করছেন না কেন? কুরাইশদের নির্যাতন ও অনিষ্টকারিতা যদিও সকল সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করেছিল, কিন্তু আবু সুফিয়ানের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) দুআর হাত উত্তোলন করলেন। দুআর ফলে আল্লাহ তায়ালা এত বৃষ্টি বষর্ণ করলেন যে, চার দিকে কেবল পানি আর পানি দেখা যেতে লাগল এবং দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেল। (বুখারী : তাফসীর, সূরা দুখান।



 

Show all comments
  • Saiful Islam ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে তার রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে চলার তৌফিক দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • রুহান ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৩৬ এএম says : 0
    রাসুল (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জন্য শিক্ষণীয়
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৩৭ এএম says : 0
    রাসূল (সা.)-এর ত্যাগ ও ধৈর্যের কারণে আমরা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসতে পেরেছি
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৩৮ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪১ এএম says : 0
    মহান আলল্গাহতায়ালা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন। কাউকে রাসুল হিসেবে আবার কাউকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) একই সঙ্গে নবী ও রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানব জাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, রাষ্ট্রনায়ক ও সফল ধর্মপ্রচারক। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা আল-আহজাবের ২১ আয়াতে এরশাদ হয়েছে-তোমাদের জন্য আলল্গাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।
    Total Reply(0) Reply
  • এস এ তুহিন ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪১ এএম says : 0
    মহান আলল্গাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) রেখে যাওয়া আদর্শকে আঁকড়ে ধরে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভের তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • saif ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৫৮ এএম says : 0
    সন্মানিত লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ, বিশ্বাস করি যে আল্লাহ্‌ আপনাদের এই প্রছেষ্টা কবুল করবেন এবং আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকেও এর থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরকে ধন্যকরার তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন