পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিলেট রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত আকবর গ্রেফতার ছিল পুলিশের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সকলেই আশ্বাস দিয়েছিলেন আকবর গ্রেফতার হবেই। এমনকি নবাগত সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফও সহযোগীতা চেয়েছিলেন আকবর গ্রেফতারে। সেই সাথে বলেছিলেন, আকবরকে গ্রেফতারে পুলিশের সব উইং সক্রিয়। বিশেষ ৩টি টিম গঠন করেছিলেন তিনি।
এদিকে, আকবর গ্রেফতার পূর্ব পর্যন্ত অকল্পনীয় লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিও চিত্রে তা দেখা গেছে। আকবর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বলেছেন, পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিরাট ভুল ছিল তার জীবনে। তবে তাকে পালাতে পরামর্শ দেয়া এক সিনিয়র অফিসারের কথা বলেছেন আকবর। এখন সর্বত্র কৌতুহল বিরাজ করছে সেই কর্মকর্তার পরিচয় প্রকাশে। যদিও পালাতে সহায়তাকারী এক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন।
এদিকে গতকাল দুপুরে রায়হান হত্যার প্রধান হোতা আকবরকে আদালতে হাজির করে পিবিআই। আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় প্রতিবাদী জনতা ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলে আদালত চত্ত¡র। অতীতের মতোও যুগান্তকারী ভ‚মিকা রেখেছেন সিলেট জেলা বারের আইনজীবীরা। তার পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি কোন আইনজীবী।
আকবর গ্রেফতার মিশন : আকবর গ্রেফতারে অনবদ্য ভ‚মিকা পালন করে সিলেট জেলা পুলিশ। গ্রেফতারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রেফতার মিশনের কৃতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তবে আকবর গ্রেফতারে পুরো কৃতিত্বই নিচ্ছেন তারা।
স্থানীয় রহিম উদ্দিনের মাধ্যমে গ্রেফতার মিশনের সমাপ্তি ঘটে পুলিশের। সেই রহিম উদ্দিনই পুলিশের লোক। আকবরকে পেয়েই রহিম উদ্দিন ওপর প্রান্ত কথা বলা লোককে সালেহ বলে সম্বোধন করেন এবং বলেন, ওসি স্যারকে বলে দাও আমি তাকে পাইছি লইয়া রওয়ানা দেরাম। সে আমার সাথে আছে। আমার নেট নাই। এ কথা বলেই লাইন কেটে দেয় সে। গত সোমবার বিকেলে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ প্রেস কনফারেন্সে বলেন, পুলিশের বিশ্বস্থ বন্ধুরা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আটক করেছে আকবরকে। আব্দুর রহিমসহ ভারত সীমান্তবর্তী আরো কয়েকজন ছিল পুলিশের বিশ্বস্থ বন্ধু। তাদের উদ্দেশ্য করেই এসপি ফরিদ উদ্দিন বক্তব্য দিয়েছিলেন।
আকবর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শিলচরের একটি বাসায় বসবাস করতে থাকেন। যখন তিনি জানতে পারেন তাকে আটক করতে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তখন তিনি শিলচর থেকে গোহাটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এ সময় আকবর শিলচরে থাকা কানাইঘাট থানা পুলিশের সোর্সের সাথে ১ লাখ টাকা চুক্তিতে শিলচর থেকে গোহাটি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু গোহাটি না নিয়ে ওই সোর্স গত রোববার কানাইঘাট সুরইঘাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু সুরইঘাট সীমান্তে বিএসএফ এর কড়া নিরাপত্তা থাকায় ঐ দিন তাকে বাংলাদেশে আনতে পারেননি। পরদিন গত সোমবার ডনা সীমান্ত দিয়ে আকবরকে আব্দুর রহিমের কাছে হস্তান্তর করেন ওই সোর্স। এরপরই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলা পুলিশের কাছে আকবরকে হস্তান্তর করেন আব্দুর রহিম।
পালানোর পরামশদার্তা দেয়া কে সেই সিনিয়র অফিসার : রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফাঁড়ি ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়া ভারতীয় খাসিয়াদের হাত ঘুরে এখন পুলিশের খাঁচায়। তবে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আগে আকবরকে মোবাইলের ক্যামেরায় রেকর্ড বন্দি করেন ভারতীয় খাসিয়ারা। সেই ভিডিওতে আকবর তথ্য দিয়েছেন এক সিনিয়র অফিসারের পরামর্শে পালিয়েছিলেন তিনি। এখন সেই সিনিয়র অফিসারে নাম পরিচয় জানতে উদগ্রিব সকলেই।
ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে সিনিয়র ৩ কর্মকর্তাকে বদলির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। এর মধ্যে রয়েছেন মেট্রো পুলিশের আলোচিত একজন ডিসি (নর্থ), কতোয়ালী থানার এসি, যদিও সম্প্রতি তাকে বদলি করা হয়েছে, এছাড়া ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ (তদন্ত)। তবে ঘটনার দিন ছুটিতে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম মিঞ্চা। তবে আকবরের প্রকাশিত তথ্যের উপর সেই সিনিয়র অফিসারের দিকেই মানুষের দৃষ্টি।
৭ দিনের রিমান্ডে এসআই আকবর : রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত এস আই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়াকে (সাময়িক বরখাস্ত) ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কঠোর পুলিশি পাহারায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আওলাদ হোসেন সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে হাজির করেন আকবরকে। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন চান। শুনানী শেষে ৭ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ ব্যাপারে পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক আওলাদ হোসেন বলেন, ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক। রায়হান হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পিবিআই। সেই সাথে তার সহযোগীদের সম্পর্কেও তথ্য আদায়ের চেষ্টা করবে তারা।
ফাঁসি চাই শ্লোগানে মুখরিত আদালত পাড়া : ‘আকবরের ফাঁসি চাই’ শ্লোগানে মুখরিত সিলেটের আদালত চত্ত¡র। আকবরকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজিরের খবরে সকাল থেকেই আদালত প্রাঙণে ভিড় করেন সর্বস্তরের উৎসুক জনতা। পরে সিলেটের আদালত চত্ত¡রে আকবরকে হাজির করার পর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত বিক্ষুব্ধ মানুষ।
এ সময় শতাধিক মানুষ আকবরের ফাঁসি চেয়ে শ্লোগান দেয়। তারা আকবরকে দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই, আকবরের ফাঁসি চাই’ বলে শ্লোগানে ফেটে পড়ে। তবে পুলিশ সর্তক থাকায় ঘটেনি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা।
আকবরের পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি কোন আইনজীবী : আকবরের পক্ষে কোন আইনজীবী দাঁড়াননি আদালতে। বেলা পৌনে ১টার দিকে সিলেট চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম এর আদালতে হাজির করা হলে রিমান্ড প্রার্থনা করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় আদালতে আকবরের পক্ষে দাঁড়াতে দেখা যায়নি কোন আইনজীবীকে।
সিনিয়র আইনজীবীরা জানান, আকবর জঘন্য কাজ করেছে। যা সিলেটের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার কারণে সিলেটের কোন আইনজীবী আকবরের পাশে দাঁড়াননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।