পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের বায়ু দূষণের শহরের তালিকায় ঢাকা মহানগরী অন্যতম। শীত মৌসুম শুরুর আগে বাতাসে বেড়েছে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা। অতিক্ষুদ্র এসব ধুলার মাত্রার ভিত্তিতে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরের বায়ু ইতোমধ্যে ছুঁয়েছে অস্বাস্থ্যকর থেকে অতিমাত্রার অস্বাস্থ্যকরের পর্যায়। বাতাসের এমন দূষণের কারণে প্রতিবছর এসময় দেখা দেয় শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। তবে অতি সাবধানী না হলে এমন অস্বাস্থ্যকর বায়ু করোনাভাইরাসের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়তো আর লকডাউন করা হবে না। তাই ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাত্রায় অতিসতর্ক না থাকলে করোনার পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। গত ৬ নভেম্বর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত ‘করোনা ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গেøাবাল হেলথের ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক রডনি হফ বলেছেন, ‘শীতকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং মাস্ক পড়া দুটি একসঙ্গে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনার সংক্রমণ কমানো সম্ভব।
জানতে চাইলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ডা. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেড়ে যায়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে ধুলা-বালির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছরই শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। করোনার কারণে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার সময়টা বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ শুরু হয়ে যাবে। যেহেতু নভেম্বর থেকে মার্চ এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের শহরগুলোর জন্য স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের একটা সময়, সেখানে করোনা পরিস্থিতি এটাকে আরো ভয়াবহ রূপ দিতে পারে।
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬ হাজার ১০৮ জন। শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন। বায়ু দূষণে করোনাভাইরাসের আরো ব্যাপকতা বাড়তে পারে। দেশের শহরগুলোতে বায়ুতে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতির মাত্রার ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদফতরের ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস)’ প্রকল্পের অধীনে বাতাসের মানের সূচক (একিউআই) নির্ণয় করা হয়। এতে দেখা যায়, গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা ছিলো ১৯০ একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-বাতাসের মান সূচক) যা ছিল অতিমাত্রার অস্বাস্থ্যকর বায়ুর পর্যায়ে। একই দিন গাজীপুরে ছিল ১৫৯ একিউআই, রাজশাহীতে ১৭০ একিউআই, বরিশালে ১৫৬ একিউআই ও রংপুরে ১৫৭ একিউআই, যেগুলো ছিলো ক্ষতিকর বায়ুর পর্যায়ে। অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকা মহানগরীর বায়ু দূষণের শীর্ষে। কেস’র বায়ুমানের তথ্য থেকে দেখা যায়, ৬ নভেম্বর বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা ২০৮ একিউআই (অতিমাত্রায় ক্ষতিকর), ৩ নভেম্বর ঢাকার বায়ু ছিল ‘সতর্কতামূলক’ পর্যায়ে যেখানে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা ছিল ১৩০ একিউআই। ২ নভেম্বর বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ের যার ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা ছিল ১৫৮ একিউআই।
এই তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি রাজধানীর বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা ছিল ৩০৪ একিউআই যা ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২ জানুয়ারি তা ছিল ২৭৭ একিউআই, ৫ জানুয়ারি ছিল ৩০৯ একিউআই। আর মার্চের শেষ নাগাদ দূষণের মাত্রা কমে ২৯ মার্চ ছিল ১৯২ একিউআই, ৩০ মার্চ ছিল ১৭৩ একিউআই, ৩১ মার্চ ছিল ১৬৯ একিউআই।
বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার মধ্যে যেগুলোর ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটার সেসব বস্তুকণাকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-১০ এবং যেসব বস্তুকণার ব্যাস দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার সেগুলোকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-২.৫ এই দুই ভাগে ভাগ করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। আর এই দুই শ্রেণির বস্তুকণা বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে কত মাইক্রোগ্রাম আছে তা পরিমাপ করা হয় পার্টস পার মিলিয়ন বা পিপিএম এককে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘স্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে ‘মধ্যম’ বায়ু বলা হয়; যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘সর্তকতামূলক বায়ু বলা হয়; যেটা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর। একিউআই মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে ফেলা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একিউআই মাত্রার বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের (আইকিউএয়ার) পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গেল এক সপ্তাহ রাজধানী ঢাকার বাতাস ছিল জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পর্যায়ে। সংস্থাটির বার্ষিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে বায়ু দূষণের দিক থেকে তালিকায় ২১ নম্বরে রয়েছে ঢাকা মহানগরী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত আসার আগেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে বাতাসে ধুলিকনার পরিমাণ এতো বেশি হয় যে, মানুষের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়ে। বায়ু দূষণের কারণে নানা রোগ হলেও এবার করোনায় সেই রোগের শঙ্কা বেড়ে গেছে। বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক। চিকিৎসক এবং সরকারের পক্ষ থেকে বার বার মাস্ক পরার ব্যাপারে জোর দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাস্কের বিকল্প নেই। অথচ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত মহানগরীর সড়কগুলোতে পানি ছিটানো কার্যক্রম বাড়ানো, বাসস্থানের জানালা দরজা খোলা না রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় শীতে আবাসিক এলাকাগুলো যথাসম্ভব নির্মাণ কাজ চালাতে যথাযথ ধুলা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ধুলা প্রতিরোধ করতে হবে।
রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, শীতপ্রধান দেশে যেখানে বদ্ধ ঘরে বাতাস চলাচল নেই, একসঙ্গে অনেক মানুষ এক জায়গায় থাকে, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায়। তাই সেখানে করোনার সংক্রমণ আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও সামাজিক মেলামেশা যদি একটু বেশি বাড়িয়ে দেই, এখানেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন দেশগুলোতে একইভাবে ছড়িয়েছে করোনা। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি কোন ঘরে থাকেন। শীত প্রধান দেশে মানুষরা কাছাকাছি গাদাগাদি করে থাকে, সেটার কারণে একটা সম্ভাবনা থাকে। আগের বৈশ্বিক মহামারির সময় দ্বিতীয় ঢেউ কিন্তু দেখা গেছে। কাজেই আমাদের শীতকাল এবং গরমের সময় দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।