বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘তাসলিমান’ আল কোরআনে বিবৃত তিনবার ও উল্লেখিত এমন একটি শব্দ যার দ্বারা হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান ও ফজিলতকে সবকিছুর শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং একই সাথে মুমিন বান্দাহগণকে তাঁর প্রতি সালাম বর্ষণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এবং তাঁর নির্দেশাবলি সর্বান্ত করণে মান্য করার হুকুম করা হয়েছে। এবার আসুন, আল কোরআনের কোথায় এবং কোন্ প্রেক্ষাপটে ‘তাসলীমান’ শব্দটি আল্লাহপাক ব্যবহার করেছেন, এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই বা কি তা সামান্য উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। আল্লাহপাকই সকল অবস্থায় আমাদের সহায়।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আজমত, শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদা, ও অধিষ্ঠানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুুমিন বান্দাহগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন: (ক) ‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দরূদ পাঠ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি আন্তরিকতার সাথে দরূদ ও সালাম পাঠ কর’। (সূরা আহযাব : আয়াত ৫৬)। এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহপাক স্বয়ং নিজের ও তার ফিরিশতাদের দরূদ পাঠের কথা উল্লেখ করেছেন। তারপর সাধারণ মুমিনগণকে দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও সম্মানকে এত উচ্চে তুলে ধরা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শানে যে কাজের আদেশ মুসলমানদেরকে দেয়া হয়, সে কাজ আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণও করেন।
সুতরাং যে মুমিনগণের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুগ্রহের অন্ত নেই, তাদের তো এ কাজে খুব যত্মবান হওয়া উচিত। ‘তাসলিমান’ শব্দের মাধ্যমে এই দিক নির্দেশনাটুকুই মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। তাছাড়া এর দ্বারা দরূদ ও সালাম প্রেরণকারী মুসলমানদের মর্যাদাকেও উচ্চকিত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এমন একটি কাজে শরীক করে নিয়েছেন যা তিনি নিজেও করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও করেন। উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহতায়ালার প্রতি যে সালাত সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর অর্থ হলো তিনি রহমত নাযিল করেন। আর ফিরিশতাগণ সালাত প্রেরণ করার অর্থ হলো তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য রহমতের দোয়া করেন। আর সাধারণ মুমিনদের তরফ থেকে সালাতের অর্থ হলো দোয়া ও প্রশংসার সমষ্টি। আরও স্মর্তব্য যে, সালাম শব্দটি হলো মূল ধাতু। এর অর্থ হলো সালামতী ও নিরাপত্তা। অর্থাৎ দোষত্রুটি ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকা। উল্লেখিত আয়াতে কারীমায় ‘তাসলিমান’ শব্দ যোগে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সার্বিক নিরাপত্তার কথাই উচ্চকিত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন: (খ) ‘আর যখন মুমিনগণ শত্রু সেনার দল দেখতে পেল, তখন বলল, এরাই তো’ সেই দল যাদের ওয়াদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল করেছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন এবং এতে তাদের ঈমানের দৃঢ়তা ও আনুগত্য বেড়ে গিয়ে ছিল’। (সূরা আহযাব : আয়াত ২২)।
এই আয়াতে কারীমায় ‘তাসলীমান’ শব্দের দ্বারা অকপট ও খাঁটি মুসলিমগণের চূড়ান্ত আনুগত্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এরদ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী সমূহ ও কার্যাবলি উভয়টির প্রতি একান্ত আনুগত্য প্রদর্শনের কথাই প্রতিপন্ন হয়েছে। কেননা, সত্য নবীর সত্যবাণী ও কার্যক্রম অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মুমিন মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয় লাভের অপূর্ব সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই সমীচীন নয়। কেননা ‘তাসলিমান’ শব্দটি দ্বারা মুসলমানদের জয় যাত্রার শুভ সংবাদ দান করা হয়েছে যে, এখন থেকে কাফেরদের অগ্রাভিযানের অবসান এবং মুসলমানদের বিজয় যুগের সূচনা হলো যা খলীফাতুল্লাহ হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আমলে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে এবং সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় কেতন উড্ডীন হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।