Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রুজভেল্টের পরে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে বাইডেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৮:০৮ পিএম | আপডেট : ৮:০৮ পিএম, ৯ নভেম্বর, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিমানের সাথে তুলনা করলে তার ককপিটে পাইলট হিসাবে বসতে যাচ্ছেন নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি যখন বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নেবেন, দেখতে পাবেন চারপাশে একের পর এক ঝড় তাকে আঘাত করছে। বিমানের ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলে কমপক্ষে পাঁচটি লাল বাতি ‘বিপদে’র সংকেত হিসাবে জ্বলজ্বল করছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার ডেপুটি হিসাবে বাইডেন যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তখন মাঝারি আকারে মন্দা চলছিল। বাইডেনের জন্য এবারের পরিস্থিতি মোকাবেলা তার চেয়েও কঠিন কাজ হবে। প্রকৃতপক্ষে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের পরেই, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনও প্রেসিডেন্ট হিসাবে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বাইডেন।

প্রথম ১০০ দিনেই বাইডেনকে যে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে: বাইডেন ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তার পরেই প্রথম ১০০ দিনের বিসয়ে তাকে যে সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেগুলো হচ্ছে- করোনা মহামারী, ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি মেরামত ও বেকারত্ব মোকাবেলা, কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, পরিবেশ সঙ্কট ও বিভাজন দূর করা।

১৯১৮-এর ফ্লু মহামারীর পরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে খারাপ সংকটের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে দেশটি রয়েছে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানে। এখন অবধি সেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩ লাখেরও বেশি, মুত্যুর হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার মানুষের। মহামারীর কারণে সঙ্কটে পড়েছে অর্থনীতিও। ২০২০-এর প্রথম কোয়ার্টারে আমেরিকার জিডিপি সঙ্কুচিত হয়েছে ৫ শতাংশ। পরের কোয়ার্টারে এসে দেখা যায়, দেশজ উৎপাদন অকল্পনীয়ভাবে নেমে গেছে ৩১ শতাংশের মতো। এপ্রিলে দেশীয় খুচরা কেনাবেচা কমেছিল ১৬ শতাংশ আর বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল দুই কোটি ৩০ লাখে। সেপ্টেম্বরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছর দেশজ উৎপাদন ৩.৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে, আগামী বছর গিয়ে তা সামান্য বাড়বে। দেশের মধ্যে ‘ব্লাক লাইভম ম্যাটার’ আন্দোলনের কারণে শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদিদের সাথে অ-শেতাঙ্গদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ট্রাম্পও বিপুল ভোট পাওয়ায় বোধা যাচ্ছে বিরোধীদের মন জয় করে তাকে বিভাজন দূর করতে হবে। চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ, ইরানের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা নিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলোর সাথে মনোমালিন্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রেও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রথমবারের মতো বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রকে অবিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে দেখতে শুরু করেছে, যার নেতৃত্বে আর আস্থা রাখা যায় না। এসব সঙ্কট মোকাবেলায় বাইডেন যে পরিকল্পনা করছেন-

করোনা টাস্ক ফোর্স গঠন: করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরির পরিকল্পনা করছেন জো বাইডেন। আগামী দুই মাসের জন্য সাময়িক ভাবে তৈরি করা হতে পারে এই টাস্ক ফোর্স। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর এই টাস্ক ফোর্সকেই একটি স্থায়ী চেহারা দেয়া হতে পারে। রোববার বাইডেন জানিয়েছেন, দেশের সেরা বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি হবে এই টাস্ক ফোর্স। দলটির প্রথম এবং প্রধান কাজ অ্যামেরিকায় করোনার সংক্রমণ কমানো। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ, রোগীদের চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং প্রশাসনকে সে বিষয়ে নির্দেশ দেয়া। ভ্যাকসিন আসার পরে তা কী ভাবে দেয়া হবে, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেবে এই দলটি।

অর্থনীতি রক্ষা: কয়েক মাস ধরে অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছেন, করোনার কারণে ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য ত্রাণ তহবিলের আকার বাড়াতে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা যে ব্যয় পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন, তা প্রত্যাখ্যান করেন রিপাবলিকানরা। ফলে আলোচনায় একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এখন আবার রিপাবলিকানরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, নতুন প্রেসিডেন্ট অফিসে প্রবেশের আগে তারা একটি চুক্তি করবেন। এখন প্রশ্ন হলো ডেমোক্র্যাটরা যা চান তার চেয়ে যদি তহবিল কম হয় এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিপর্যয় শুরু হয়, তবে মধ্যপন্থি হিসেবে পরিচিত বাইডেন সরকার কতটুকু বাড়াতে চাইবে? নির্বাচনী প্রচারেই বাইডেন শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফ, অবসর ভাতা ভোগীদের সামাজিক সুরক্ষা চেক বৃদ্ধি এবং ছোট ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সরবরাহ করার পরিকল্পনা সমর্থন করেছেন। এ ছাড়া বাইডেনের অন্যতম উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব হলো, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পেছনে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ক্রয়ের জন্যও তিনি ৪০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এ-সংক্রান্ত একটি আইনের (আমেরিকান পণ্য ক্রয় করুন বা ‘বাই আমেরিকান’) কথাও বলছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ: নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে যখন বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম পরিকল্পনাটি উম্মোচন করেন, তা হতাশ করে পরিবেশবাদীদের। তবে এ বছরে প্রচ্ছন্ন প্রস্তাব নিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি। তার কয়েকজন সাবেক সমালোচকের সাহায্য নিয়ে নতুন প্রস্তাব তৈরি করেছেন তিনি, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে প্রস্তাবিত সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বাইডেনের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, গাড়িদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করা, করপোরেট দূষণকারীদের ওপর ক্র্যাকিং করা, পাঁচ লাখ বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করা এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কার্বনদূষণ দূরীকরণ অন্তর্ভুক্ত করা। সূত্র: ইউএসএটুডে, এপি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ