Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) মোশরেক পিতাকে হুজুর (সা.)-এর বিছানায় বসতে দেননি

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাকের ঘোষণা: ‘ইন্নামাল মোশরিকুনা নাজাসুন’ (নিশ্চয় মোশরেক অপবিত্র)। এ খোদায়ী বিধান পিতা-মাতা, আপন স্বজন, আত্মীয়-কুটুম্ব সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উম্মুল মোমেনীন হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) বিনতে আবি সুফিয়ান। তার পিতাকে হুজুর (সা.)-এর পবিত্র বিছানায় বসতে দেননি এবং মোশরেক পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে এ আচরণ করতে দ্বিধা করেননি। আরবের অত্যন্ত প্রভাব প্রতিপত্তশালী কোরেশ নেতা আবু সুফিয়ান কন্যা হজরত উম্মে হাবিবা (রা.)-এর এ আচরণের প্রতিবাদ করার সাহসও তিনি পাননি। পিতা মোশরেক-কাফের এবং কন্যা প্রথম ইসলামগ্রহণকারীদের একজন এবং ‘উম্মাহাতুল মোমেনীন’ এর অন্যতম এবং হজরত আমির মোয়াবিয়া (রা.)-এর আপন বোন। আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণের পূর্বের এই ঘটনাটি সীরাতগ্রন্থসমূহে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।

আবু সুফিয়ানের কন্যাদের মধ্যে ফারেআ এর বিয়ে হয় আবু আহমদ ইবনে জাহাশ এর সাথে এবং উম্মে হাবিবা এর বিয়ে হয় উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশ এর সাথে। আবু সুফিয়ানের স্ত্রীর নাম হিন্দ বিনতে উতবা, হজরত মোয়াবিয়া (রা.) এর মাতা। এ হিন্দই ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হজরত হামজা (রা.)-এর কলিজা চিবিয়েছিলেন। উম্মে হাবিবা ও ফারেআ তাদের স্বামীদের সাথে প্রথম দিকে ইসলামগ্রহণ করেছিলেন এবং হিজরত করে হাবশা (আবিসিনিয়া) চলে গিয়েছিলেন। উম্মে হাবিবার স্বামী উবায়দুল্লাহ হাবশায় নাসরানী (খৃষ্টান) হয়ে যান এবং মদ পান করতে করতে খৃষ্টধর্মের ওপরই তার মৃত্যু হয়।

হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) ইসলামের ওপর দৃঢ়ভাবে কায়েম থাকেন এবং তার সঙ্গে তার একমাত্র কন্যা হাবিবা বিনতে জাহাশ থেকে যান, যার জন্মও হয়েছিল হাবশায়। হুজুর (সা.) যখন হজরত উম্মে হাবিবার অসহায়ত্বের অবস্থা অবগত হন, তখন আমর ইবনে ওমাইয়া যামরী (রা.)-কে হাবশা-রাজ নাজ্জাশীর নিকট প্রেরণ করেন এবং পত্রে প্রস্তাব পেশ করেন উম্মে হাবিবাকে তার সাথে বিয়ে দিতে। নাজ্জাশীর নিকট এ পয়গাম পৌঁছার পর তিনি তার বিশেষ বাদি (দাসী) আবরাহাকে উম্মে হাবিবার নিকট প্রেরণ করেন এবং রসূলুল্লাহ (সা.)-এর পয়গামের খবর জানান। তিনি এ সুসংবাদ শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং এ পুরস্কার হিসেবে তিনি আবরাহাকে তার অলংকার দান করেন এবং তার মামাতো ভাই খালেদ ইবনে সাঈদ ইবনে আবিল আসকে উকিল হিসেবে নাজ্জাশীর নিকট প্রেরণ করেন।

হাবশায় অবস্থানকারী হজরত জাফর (রা.) ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামকে নাজ্জাশী তলব করেন এবং সকলের উপস্থিতিতে হজরত উম্মে হাবিবা (রা.)-এর বিয়ে পড়ান। তিনি খোদ খুৎবা পাঠ করেন এবং তাঁর নিজের পক্ষ হতে মোহরানা হিসেবে চারশ দীনার তাৎক্ষণিক প্রদান করেন। এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এটি ৭ম হিজরি সালের কথা।

রসূলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষ হতে নাজ্জাশী উক্ত চারশ দীনার খালেদ ইবনে সাঈদকে সকলের সামনে প্রদান করেন। এরপর সকল লোক মজলিসহতে উঠে চলে যেতে চাইলে নাজ্জাশী বলেন: ‘ওয়ালিমার দাওয়াত সকল নবীর সুন্নত, আপনাদের আরো বসতে হবে।’ দাওয়াতের খাবার শেষে সকলে বিদায় নিয়ে চলে যান। মোহরানার অর্থ উম্মে হাবিবা (রা.)-এর হাতে পৌঁছার পর, তিনি পঞ্চাশ দীনার আবরাহাকে প্রদান করেন। কিন্তু আবরাহা তাকে পূর্বে প্রদত্ত অলংকারসহ এই বলে ফেরত দেন যে, নাজ্জাশী তাকে তা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর নাজ্জাশী শোরাহ বিল ইবনে হাস্নার মারফত উম্মে হাবিবা (রা.)-কে মদীনায় রসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে পাঠিয়ে দেন।

পিতা আবু সুফিয়ানের সাথে হজরত উম্মে হাবিবা (রা.)-এর সাক্ষাতের ঘটনাটি এই: মক্কা বিজয়ের পূর্বে কোরেশ বনু খোজাআর সাথে অন্যায় আচরণ করে চুক্তি ভঙ্গ করেছিল তখন চুক্তি নবায়নের জন্য আবু সুফিয়ান খোদ মদীনায় এসেছিলেন এবং কন্যা উম্মে হাবিবা (রা.)-এর সাথে দেখা করতে যান। সে সময় হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট অবস্থান করছিলেন এবং তিনি পিতা আবু সুফিয়ানকে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র বিছানায় মোশরেক হওয়ার কারণে বসতে দেননি। আবু সুফিয়ান বললেন: ‘বেটি! বিছানা উঠিয়ে দিলে কেন, আমার বসার উপযোগী মনে করলে না?’ তিনি বললেন: ‘এটি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানা এবং আপনি মোশরেক ও অপবিত্র। এ জন্য আমি ভালো মনে করিনি আপনি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানায় বসুন।’ এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান সেখান হতে চলে যান এবং রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গমন করেন এবং উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন। হুজুর (সা.) তার কথার কোনো জবাব দিলেন না। (আবু সুফিয়ানের মদীনা গমনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।) উম্মুল মোমেনীন হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) মদীনায় হিজরী ৪৪ সালে ইন্তেকাল করেন।



 

Show all comments
  • Yeasmin Sultana ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    একেই বলে নবীজীর প্রতি ভালোবাসা।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    মুশরিকদের সাথে কোনো আপোষ করা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    মহানবী (সাঃ) কে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।
    Total Reply(0) Reply
  • saif ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৫৫ এএম says : 0
    যাকে নিজের জীবনের ছেয়েও বেশি ভালো বাসা ঈমানী শর্থ, যার পবিত্রতার শাক্ষ্য আল্লাহ্‌ দেন, সেই নবীর ভালোবাসায় নিজের জন্মদাতার পিতার সাথেও বিন্ধু মাত্র কার্পন্য করেননী। আর আমরা নবীর (সাঃ) এর ভালো বাসার দাবি করি, কিন্তু আমাদের অন্তর সবছেয়ে নোংরা, আর নাফাকিতে ভরে আছে সেই দিকে আমাদের মোটেই ক্ষেয়াল নেই। কেবলই নাপাক মুখের কথা নবী তোমায় ভালো বাসি। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন