বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে রাসুলে পাক (সা.) বলেন, হে মুসলমানগণ, তোমরা আমার সীমাতিরিক্ত প্রশংসা করো না, যেমন খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর বেলায় করেছে। কেননা, আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব, তোমরা আমার সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারো যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল। (মাদারিজুন নবুওয়াত, যাদুল মাআদ)। হাদীসে আছে, একবার এক সফরে কয়েকজন সাহাবী একটি ছাগল জবেহ করার আয়োজন করে তারা সমস্ত কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলেন। কেউ জবেহ করার, কেউ চামড়া ছাড়ানোর এবং কেউ রান্না করার দায়িত্ব নিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, রান্না করার জন্যে লাকড়ি সংগ্রহ করা আমার কাজ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হুযুর, এ কাজ আমরাই করে নেব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা তো আমিও বুঝি যে, তোমরা সানন্দে এ কাজ করে নেবে; কিন্তু আমি সকলের মধ্যে বিশিষ্ট হয়ে থাকা পছন্দ করি না এবং আল্লাহ তায়ালাও এটা পছন্দ করেন না। (খাসায়েলে নববী)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) সাথে বাজারে এলে তিনি চার দিরহাম দিয়ে একটি পায়জামা খরিদ করলেন। অতঃপর তিনি ওজনকারীকে বললেন, মূল্য বাবদ প্রদত্ত মালগুলো খুব টেনে টেনে ওজন করো (অর্থাৎ, কম অথবা সমান সমান নিয়ো না; বরং কিছু বেশি নাও)। ওজনকারী বিস্মিত হয়ে বলল, আমি কখনো কাউকে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে এমন কথা বলতে শুনিনি। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, পরিতাপের বিষয় যে, তুমি নবীকেও চেনো না।
এ কথা শুনে লোকটি দাঁড়িপাল্লা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে চুমো খেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাত টেনে বললেন, এটা অনারবদের নিয়ম। তারা তাদের রাজা ও প্রধানদের হস্ত চুম্বন করে। আমি রাজা নই, আমি তো তোমাদেরই একজন (হুযুর (সা.) স্বীয় অভ্যাস অনুযায়ী এ কথা নম্রতাবশত বলেছেন)। অতঃপর তিনি পায়জামাটি তুলে নিলেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন আমি এগিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে পায়জামাটি নিতে চাইলে তিনি বললেন, জিনিস তুলে নেয়ার অধিকার জিনিসের মালিকেরই রয়েছে। তবে যে দুর্বল এবং বইতে অক্ষম, তাকে সাহায্য করা তার অন্য ভাইয়ের কর্তব্য। (মাদারিজুন নবুওয়াত)।
হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারীম (সা.) একটি পুরনো পালানে বসে হজ করেন, যার ওপর একটি কাপড় ছড়ানো ছিল, যার মূল্য চার দিরহামও ছিল না। এরপরেও তিনি দুআ করেছিলেন, হে আল্লাহ, এ হজকে লোক দেখানো নয়, এমন কিংবা আড়ম্বরহীন হজে পরিণত করুন। (শামায়েলে তিরমিযী)।
মক্কা বিজয়ের দিন যখন তিনি বিরাট মুসলিমবাহিনী সাথে নিয়ে বিজয়ীবেশে শহরে প্রবেশ করেন, তখন আল্লাহর দরবারে বিনয় ও নম্রতাবশত মস্তক বাহনের পালানের ওপর ঝুঁকিয়ে নেন; এমনকি, গদির সামনের লাকড়ির সাথে তার মস্তক লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়। (শিফা)। তিনি কাফের ও শত্রুর সাথেও মন জয় করার আশায় হাসিমুখে ব্যবহার করতেন এবং বাহ্যিক ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা শুনেও সবর করতেন। ঘরে ফিরে গৃহস্থালি কাজ-কর্মের ব্যবস্থা করতেন। তিনি চাদর পরিধানে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতেন, যাতে হাত-পা খোলা না থাকে (সম্ভবত উপবিষ্ট অবস্থায় এরূপ হয়ে থাকবে)। তার হাসিমুখ ও ইনসাফ সকলের জন্যে ব্যাপক ছিল এবং ক্রোধ তাকে কখনো নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণহারা করতে পারত না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।