বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে। হযরত আনাস রা. বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। (সহীহ বুখারী : ১৫)।
এ শুধু নীতিবাক্য নয়; বাস্তবেই মুমিনকে পৌঁছাতে হবে নবীপ্রেমের এ স্তরে। সকলের উপর, সবকিছুর উপর প্রাধান্য দিতে হবে আল্লাহ-আল্লাহর রাসূলকে; এমনকি নিজের জানের উপরও। শুনুন ওমর রা.-এর ঘটনা- আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. বলেন, একদিন আমরা নবীজী (সা.)-এর সাথে ছিলাম। নবীজী ওমর রা.-এর হাত ধরা ছিলেন। ওমর রা. বলে উঠলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জান ছাড়া। তখন নবীজী (সা.) বললেন, না ওমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জান তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না,) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর রা. বললেন, হ্যাঁ এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী (সা.) বললেন, হ্যাঁ ওমর! এখন হয়েছে। (সহীহ বুখারী : ৬৬৩২)।
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা যদি সবকিছুর উপরে না হয় তাহলে মুমিন পথ চলবে কীভাবে? আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আদেশের সামনে সমর্পিত হবে কীভাবে? আজ বাধা হবে সন্তান, কাল স্ত্রী, পরশু পিতা। কখনো বা জানের মায়ায় লংঘিত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ। আর মুমিন তো সেই, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মহব্বত ও নির্দেশের সামনে সবকিছু পিছে ঠেলতে জানে।
মুমিনের সবচে বড় দৌলত ঈমান। এই মহা দৌলতের স্বাদ যার নসীব হয়, সমস্ত দুঃখ কষ্ট তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। মহব্বতের কারণে সকল তিক্ত মিষ্টে পরিণত হয়। আর এই স্বাদ সে-ই পায়, যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে থাকে। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তন্মধ্যে প্রথম হলো, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবচেয়ে প্রিয় হবে। (সহীহ মুসলিম : ৬৭)।
ঈমানের স্বাদ আস্বাদনের নগদ ও সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো ইবাদত ও আনুগত্যে আগ্রহ লাভ হওয়া। বরং ইবাদতই তখন প্রশান্তির কারণ হয়ে যায়। নবীজীর প্রতি ভালোবাসা যেমনিভাবে ঈমান ও আমলে উৎকর্ষ লাভের উপায়, তেমনি তা আখিরাতে মহাসাফল্য অর্জনের সম্বল। আর প্রত্যেক মুমিনের কাক্সিক্ষত সে সাফল্য হলো আখিরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গলাভ। স্বয়ং নবীজী (সা.) বলে গেছেন, ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তার হাশর হবে। (সহীহ মুসলিম : ২৬৪০)।
এ সম্পর্কে বড়ই শিক্ষণীয় ও চমৎকার একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন হযরত আনাস রা.। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলে কারীম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল : ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিয়ামত কবে? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কী প্রস্তুতি নিয়েছ কিয়ামতের? সে জবাব দিলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা। তখন নবীজী (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই যাকে তুমি ভালোবাস, (কিয়ামতের দিন) তার সাথেই থাকবে।
হযরত আনাস রা. বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচে’ খুশির বিষয় ছিল নবী কারীম (সা.)-এর এই কথা, ‘নিশ্চয়ই যাকেতুমি ভালোবাস, (কিয়ামতের দিন) তার সাথেই থাকবে।’ আনাস রা. আরও বলেন, আর আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। আবু বকর ও উমরকেও। তাই আশা রাখি, আখেরাতে আমি তাঁদের সাথেই থাকব, যদিও তাঁদের মতো আমল আমি করতে পারিনি। (সহীহ মুসলিম : ২৬৩৯)। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে আখিরাতে তাঁর রাসূলের সঙ্গ দান করেন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।