Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাগবাড়ী কেএম উচ্চ বিদ্যালয় : পরিত্যক্ত ভবন ও আকাশের নিচে চলছে পাঠদান

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আল আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে : বগুড়ার গাবতলী নশিপুর ইউনিয়নের ‘বাগবাড়ী কেএম ঊচ্চ বিদ্যালয় এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে পরিত্যক্ত ভবন ও খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়টি ১৯১৯ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও হয়নি কোন অবকাঠামগত উন্নয়ন। প্রথমে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এখন বিদ্যালয়ে ৮৫০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। খুব অল্পসময়ে বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তি, গরীব মেধাবীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়। এলাকার দরিদ্র মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিকাশ, আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠদান সুব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যালয়ে স্বল্প পরিসরে একটি পাঠাগার রয়েছে। তবুও প্রতিবছরে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করলেও এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও টিনসেট কক্ষে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গাবতলী ইউএনও, প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে লেখিতভাবে জানালেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সূত্র জানায়, এ বিদ্যালয়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক শাখা’য় প্রতিবছরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভাল। সুদক্ষ শিক্ষক ও অভিজ্ঞপূর্ণ ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষা প্রসারে বিদ্যালয়টি একটি মডেল হাইস্কুল হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে বিদ্যালয়ে কর্মরত ১০শিক্ষক, ৪কর্মচারী দীর্ঘদিন যাবৎ ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যালয়ে ৭টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। তবে একটি পরিত্যক্ত তিনকক্ষ বিশিষ্ট টিনসেট ভবন রয়েছে। টিনসেট কক্ষগুলোর মেঝে ফাটল ও টিনগুলো ফুটো হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে মেঝে ডুবে যায়। ফলে পাঠদান নানাভাবে বিঘিœত হচ্ছে। তবুও ভবনের একটি কক্ষে চলছে অফিসের কার্যক্রম। নেই কোন সীমানা প্রাচীর। বিদ্যালয়টি পরিদর্শন শেষে টিনসেট কক্ষগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদানে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ অতিজরুরি ভিত্তিতে একাডেমিক ভবন নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য প্রদান করে জেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিবেদনসহ আবেদন দাখিল করেন। এরপর ১৯৯৭ইং সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন উন্নয়ন করা হয়নি। তবুও একটি ভবনের নিচতলা’য় অফিস কক্ষ ছাড়াও অন্য কক্ষগুলোতে চলছে পাঠদান। টিনসেট কক্ষগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও কখনো কখনো সেসব পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে চলতো পাঠদান। তবে দমকা হওয়া ও কাল বৈশাখী’র ঝড় বৃষ্টিতে ৬টি টিনসেট কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে সেসব কক্ষে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও বিদ্যালয়টি শতভাগ পাসের সাফল্যে অর্জন করেছে। প্রতিটি দিবস ও ক্রীড়া সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন জানান, শিক্ষার্থী অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের চরম সংকটের ফলে শিক্ষকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে। একটি ভবন নির্মাণ করা খুব প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের টিনসেট কক্ষগুলো অর্থের অভাবে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের’কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অভিভাবক নজরুল ইসলাম বজলু জানান, বিদ্যালয়টি অতিপুরানো হলেও গত ১৮বছর পেরিয়ে গেলেও কোন অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়নি। শ্রেণিকক্ষের সংকট হওয়ার ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদানে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, বাগবাড়ী কেএম উচ্চ বিদ্যালয় একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভবন নির্মাণসহ উন্নয়নের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বিদ্যালয়ের সভাপতি আমিনুল ইসলাম তালুকদার জানান, বিজ্ঞানাগার ভবন নেই। নেই কোন সীমানা প্রাচীর। বেঞ্চ-চেয়ার টেবিল ও স্বাস্থ্যসম্মত কোন স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। তবুও শিক্ষার মান ও উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ নিতে হচ্ছে। বিষয়টি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কোন সারা পাইনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টিএম আব্দুল হামিদ জানান, বিষয়টি এতদিন জানা ছিল না। বিদ্যালয় পরিদর্শন করে পুনরায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। গাবতলী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, বাগবাড়ী কেএম উচ্চ বিদ্যালয়টির উন্নয়নের জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাগবাড়ী কেএম উচ্চ বিদ্যালয় : পরিত্যক্ত ভবন ও আকাশের নিচে চলছে পাঠদান
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ