বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মূল প্রজননকালে ইলিশ আহরন, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা শেষ হবার আগেই শণিবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে জাটকা আহরন,পরিবহন ও বিপননে নিশেষধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। চলবে ৩০জুন পর্যন্ত। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে মূল প্রজনন মৌসুম হিসেবে গণ্য করে গত ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে আগামী ৪ নভেম্বর রাতের প্রথম প্রহর পর্যন্ত উপক’লের ৭ বর্গ কিলোমিটার প্রজননস্থলে সব ধরনের মাছ আহরনে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সারা দেশেই ইলিশের আহরন,পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রতিদিনই দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত এবং মৎস্য বিভাগের নানা ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপশি নৌবহিনী, কোষ্ট গার্ড, পুলিশ ও র্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীও অভ্যন্তরীন নদ-নদী ও উপক’ূূূূূূূূূূূূূূূূলীয় এলাকায় নজরদারী করছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্য ক্ষতিকর জাল দিয়ে যে পরিমান জাটকা আহরন হয়, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। তবে নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯,২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২,২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। যা পরবর্তি বছরগুলোতেও আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও ২০০৮Ñ০৯ সালের ২.৯৮ লাখ টন থকে গত অর্থ বছরে ৫ লাখ ৩০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।
তবে এবার ইলিশ আহরন নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলে ও মৎস্যজবীদের মধ্যে আইন ভাংগার প্রবনতা যথেষ্ঠ বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলে আইনÑশৃংখলা বাহিনীর ওপর হামলার কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। এরপরেও সরকার চলমান মূল প্রজননকালে ইলিশ আহরন বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এগুচ্ছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশেই ইলিশ পোনাÑজাটকার আহরন, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপশি পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বরÑজানুয়ারী মাসের সময়কালকে অভআশ্রম হিসেবে ঘোষনা করে ঐসব এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ রাখা হবে। একইভাবে নিম্ন মেঘনা নদী, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেতুলিয়া নদীতে এবং শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিনে চাঁদপুর জেলার মতলব ছাড়াও শরিয়তপুর উপজেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবিস্থিত পদ্মা নদীর ২০কিলোমিটার এলাকায় মার্চÑএপ্রিল মাসে অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরন বন্ধ থাকবে। এছাড়াও বরিশালের হিজলা উপজেলার নাছকাটা, হরিনাথপুর, ধুলখোলা এবং মেহেদিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর পয়েন্ট এলাকার মেঘনার শাখা নদী, হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ ও নয়া ভাঙনী নদী ও মেহেদিগঞ্জের লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘোষনার করা হয়েছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম। তার জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মূক্তভাবে ভাসমান ডিম থেকে ফুটে বের হবার পরে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নর্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে। এরা খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই প্রজননক্ষম ইলিশ আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
মৎস্য বিজ্ঞানীগনের সুপারিশে সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনাÑজাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র হিসেবে চিহিৃত করে অভয়াশম ঘোষনা করা হয়েছে। চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্য়ন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার,পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এবং বরিশালের হিজলা ও মেহদিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থলের মোট ৬টি অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ইলিশ আহরন নিষিদ্ধ করায় উৎপাদন বাড়ছে।
পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে গত বছর ২৬জুন থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মৎস বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্য ক্ষতিকর জাল দিয়ে যে পরিমান জাটকা আহরন হয়, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।