পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) ব্যবসা চলছেই। অ্যানালগ থেকে উঠে এখন চলছে ডিজিটাল ভার্সনে। নব্বই দশকের জিজিএন থেকে হালের গ্রেট ওয়ান, স্পিক এশিয়া, ইউনিগেটওয়ে, গোল্ডেন ট্রি, নিউওয়ে পর্যন্ত- একটাই টার্গেট-টাকা হাতিয়ে নেয়া। ইনিয়ে বিনিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে অর্থ হাতিয়ে চম্পট দেয়াই হচ্ছে এমএলএম’র উদ্দেশ্য। ডেসটিনি, ইউনি পে টু, আইসিএল, রেভনেক্স বিডির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এমএলএম-প্রতারকরা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। অভিনব পন্থায় তারা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। তবে এখন আর কোনো পণ্য বিক্রি নয়-রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, কখনোবা ট্যুর ও আবাসিক হোটেল সার্ভিসে বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩ মাসে দ্বিগুণ অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে তারা। গাছের চারা বিক্রির স্থলে এখন অনেকে বিক্রি করছেন কাল্পনিক ট্যুর এবং আবাসিক হোটেল সার্ভিস।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউটিকেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-এর চোখে ধুলো দিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এমএলএম কোম্পানিগুলো। মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র কখনো বা যুক্তরাজ্য থেকে ডমেইন ভাড়া নিয়ে চলছে অনলাইন এমএলএম। ‘মানি গেম’র মাধ্যমে গত চার বছরে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। বহু বেকার তরুণ-তরুণী, গৃহবধূ ওয়েবসাইটভিত্তিক এ ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করে সর্বস্ব খুইয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরনো এমএলএম প্রতারকরাই এখন ধরন এবং নাম পাল্টে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছে। বছর দুই আগেও তারা সেগুনবাগিচা, রমনা পার্ক, বিজয়নগর হোটেল ৭১ সংলগ্ন স্থানে গোপনে সভা-সেমিনার করত। এখন বেরিয়ে এসেছেন প্রকাশ্যে। প্রসিদ্ধ এমএলএম প্রতারকরা প্রতিষ্ঠা করেছেন সমিতি। ‘ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ডিস্যাব) নামে এ সমিতি প্রতিষ্ঠা হয় গাজীপুরে গত বছর অক্টোবরে। নামে রীতিমতো সমিতি খুলে দোর্দন্ড প্রতাপে চালিয়ে যাচ্ছে এমএলএম প্রতারণা।
অনুসন্ধান মতে, কথিত সংগঠন ‘ডিস্যাব’র নেতৃত্বে রয়েছেন ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নামক এমএলএম কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আনোয়ার এইচ রয়েল রানা। ‘ডিস্যাব’ সূত্র জানায়, উক্ত সমিতিভুক্ত প্রতিটি সদস্যেরই রয়েছে এক বা একাধিক এমএলএম প্রতিষ্ঠান। ওয়েবসাইট খুলে তারা নির্বিঘেœ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ওয়েবসাইটের রয়েছে গোপন পাসওয়ার্ড। শুধুমাত্র কথিত কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত হলেই ওই পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। ‘ই-কমার্স লিমিটেড’ নামক ওয়েবসাইট খুলে এমএলএম কোম্পানি পরিচালনা করছেন এম আরিফ হাসান। এছাড়া অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত আব্দুল মালেক স্বাধীনের মালিকানায় রয়েছে ‘ওয়াল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামক এমএলএম নেটওয়ার্ক। ‘উইন লাইফ গেøাবাল লিমিটেড’ পরিচালনা করছেন মো. মনিরুল ইসলাম কাইয়ুম। ‘ডেলি বাজার লিমিটেড’ নামের এমএলএম চালাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম হৃদয়। ‘পাওয়ার লাইফ বিডি লিমিটেড’-এর কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রেজাউল লতিফ রিপন, ‘মেমোরি গেøাবাল লিমিটেড’ চালাচ্ছেন আব্দুল মোমিন মিয়াজী ও দেলোয়ার হোসেন। ‘ওয়ার্ল্ড মিশন-২১ লিমিটেড’ চালাচ্ছেন জাকির হোসেন। ‘আপন বাজার ইন্টারন্যাশনাল লি:’ চালাচ্ছেন মেহেদী হাসান, ‘ও এম বাজার লিমিটেড’-এর মালিক লুৎফুর রহমান রুবেল, ‘এমাজিং ওয়ার্ল্ড লিমিটেড’-এর মালিক আনিসুর রহমান, ‘তসর কেয়ার লিমিটেড’-এর কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন সোলায়মান হোসেন। ‘উইন ২৪ লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ, ‘উইনটাচ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইমরান হোসাইন আকাশ। মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ইনফিনিটি’ পরিচালিত হচ্ছে গুলশান-১ এ জব্বার টাওয়ার থেকে। ‘এবি নিউট্রিক ইন্টারন্যাশনাল’ ঢাকার বায়তুল ভিউ টাওয়ার এবং চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মূল্যে এক ধরনের বায়োস্প্রে বিক্রি করছে। মগবাজারস্থ রাইন রাজ্জাক প্লাজায় ‘মডার্র্ন এমএক্সএন লিমিটেড’ চালাচ্ছেন আলমগীর মতি। পল্টনভিত্তিক অনেকগুলো এমএলএম সক্রিয় থাকলেও ‘মিশন-১০’ নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বড়। ‘ওয়াল মিশন’ পরিচালিত হচ্ছে বিজয়নগর স্কাইলার্ক সেন্টার থেকে। রাজধানীর মোতালেব প্লাজাসহ হাতিরপুলেই ৩০টির মতো এমএলএম কোম্পানির ব্যবসা কার্যালয় রয়েছে। পুরানা পল্টন এলাকার একটি গলিতেই রয়েছে ৪২টি এমএলএম কোম্পানির প্রধান কার্যালয়। প্রতিটি জেলা শহরে তাদের পাঁচ-সাতটি করে সাব-অফিস রয়েছে বলে জানা গেছে। চটকদার সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেই প্রতারিত হয় মানুষ। বহু মানুষ প্রতারিত হলেও প্রশাসন এ বিষয়ে নির্বিকার। কখনও বা সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। উত্তরাভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি ‘ব্রাইট ফিউচার’ মানুষকে স্বল্প মূল্যে প্লট দেয়ার প্রলোভনে ৬ বছরে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা সোহেল রানা নাম পাল্টিয়ে একের পর এক গড়ে তুলেছেন এমএলএম কোম্পানি। তার সহযোগী আলাউদ্দিন আহমেদও এমএলএম প্রতারণায় সুবিখ্যাত। সোহেল-আলাউদ্দিন এমএলএম চক্রটি সুন্দরী নারীদের কাজে লাগিয়ে সারাদেশে বিস্তার করেছে প্রতারণার জাল। একাধিক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তিনি নির্বিঘেœ চালাচ্ছেন এমএলএম প্রতারণা।
এদিকে মানুষ এমএলএম দ্বারা প্রতারিত হলেও কোনো দফতর থেকেই প্রতিকার পাচ্ছেন না। কথিত এসব ব্যবসায় কোনো ডিড-ডকুমেন্ট না থাকায় প্রতারিতরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। অনেক গৃহবধূ স্বামী কিংবা পরিবারের অজ্ঞাতে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হন। তারা প্রতারণার কথা কাউকে জানাতে পারেন না। এ নিয়ে পরিবারে শুরু হয় গৃহ বিবাদ। সংসারও ভাঙছে অনেক গৃহবধূর।
অব্যাহত এমএলএম প্রতারণা বিষয়ে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’-এর প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, এমএলএম দ্বারা প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মানুষের অসচেতনতা। প্রতারকদের টার্গেটই থাকে সহজ-সরল মানুষ। প্রলোভনে পড়ে অর্থলগ্নি করে। পরে প্রতারিত হয়। তিনি বলেন, এমএলএম রোধে কার্যকর আইন হওয়া জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।