Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দ্বিগুণের লোভ দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

এমএলএম কোম্পানি খুলে প্রতারণা গ্রেফতার সাত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

অনলাইনভিত্তিক চারটি এমএলএম কোম্পানিতে ৫-৬ লাখ সদস্য সংগ্রহ করে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। মাসে দিগুণ করার লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করে ওই চক্রের সদস্যরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির সাত সদস্যকে গত শনিবার সাভারের আমিনবাজার থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্র্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যান্ডের ৯টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বই, একাধিক ব্যাংকের এটিএম কার্ড, বিভিন্ন অবৈধ এমএলএম কোম্পানির বিজনেস প্লানের কাগজপত্র ও ৬২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-মো. আবুল হোসেন পুলক (৪০), মো. মাহাদী হাসান মল্লিক (৩৫), মো. মিজানুর রহমান ওরফে ব্রাভো মিজান (৫৫), মো. মহিউদ্দিন জামিল (৩৮), মো. সাইফুল ইসলাম আকন্দ (৪২), মো. কভেজ আলী সরকারভ (৩৫) ও মো. শাহানুর আলম শাহীন (৪২)। গতকাল রোববার মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, চক্রটি প্রথমে একটি অনলাইন গ্রুপ খুলে তাদের ব্যবসার বিষয়ে প্রচারণা শুরু করে। চক্রটির সদস্যরা বলতো তাদের এখানে টাকা বিনিয়োগ করলে ১৫ দিনে অথবা ৩০ দিনে তাদের টাকা দ্বিগুণ করে দেবেন। মাত্র ১ হাজার ৮৫০ টাকা জমা দিয়ে তাদের কোম্পানির সদস্য হওয়া যাবে বলে চক্রটি প্রচারণা চালায়। চক্রটির সদস্যরা এভাবে প্রচারণা চালিয়ে সদস্য সংগ্রহের পাঁয়তারা করে। এছাড়া তারা সদস্যদের আকৃষ্ট করার সময় নিজেরা খুব বিলাসী জীবন-যাপন করত। দামি গাড়ি, বাড়ি এবং হোটেলে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতো চক্রটির সদস্যরা। তখন আবার যারা বেশি সদস্য এনে দিতে পারতো ওইসব সদস্যের বিভিন্ন রেটিং করে চক্রের সদস্যরা তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম আয়োজন করত যেন আরও সদস্য আনা যায় এসব প্রোগ্রাম দেখিয়ে।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক সদস্যদের বলে চক্রটি আরও নতুন সদস্য নিয়ে আসতো। সেক্ষেত্রে তারা প্রতি নতুন সদস্যের জন্য ৫০ টাকা করে পাবেন। দেড়শত জন সদস্য আনতে পারলে স্টার সদস্য হতে পারবে। স্টার সদস্যকে আইফোন, গাড়ি ও বিদেশে র‌্যাবের প্রলোভন দেখান হতো। এসব প্রলোভনে একেকজন ২-৩ হাজার নতুন সদস্য নিয়ে আসত। আবার বেশি সদস্য আনার জন্য কিছু স্টার সদস্যকে নিয়ে দেশ ও বিদেশে নানা প্রোগ্রাম আয়োজন করতো তারা।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, এই চক্রের হোতা হলেন আবুল হোসেন পুলক ও মাহাদী হাসান মল্লিক। তারা দুজন ডেস্টিনিতে আগে কাজ করতেন। ডেসটিনি থেকে এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তারা এখন অনলাইনে এই প্রতারণা করে আসছেন। যদিও চক্রটির সদস্যরা এটাকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বলেন। সবাইকে মনে রাখতে হবে এক মাসে বা ১৫ দিনে কোনোভাবে টাকা দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়। আমরা এই চক্রের প্রতারিত ভিকটিমদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি, যাদের অধিকাংশই নারী। তারা ঘরে বসে কিছু অর্থ আয় করার লোভে এই চক্রটির ফাঁদে পা দেয়। চক্রটির চারটি অনলাইন এমএলএম কোম্পানি আছে। চারটি কোম্পানির মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় লাখ লোকের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। এভাবে তারা ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকা কোথায় আছে এবং এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলা সিআইডি বন্ধ করবে কি-না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার এখতিয়ার আমাদের নেই, তবে আমরা এ বিষয়ে সুপারিশ করব। তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকাগুলো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিয়েছে। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে কিছু তারা বিনিয়োগ করেছেন, কিছু টাকা দিয়ে বিশাল বিশাল প্রোগ্রাম আয়োজন করতে খরচ করেছেন। কিছু টাকা ব্যাংকে রেখেছেন। তবে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবো টাকা আসলে কোথায় তারা কীভাবে রেখেছেন বা খরচ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমএলএম কোম্পানি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ