বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জিন আগুনের তৈরি অদৃশ্য শক্তি। মানবের ন্যায় জিনকেও আল্লাহর এবাদত- বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কোরআনের বহু স্থানে জিনের উল্লেখ রয়েছে। একটি সূরার নাম সূরাতুল ‘জিন’। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে জিনদের একাধিক প্রতিনিধিদলের আগমনের ঘটনা বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। জিনের অদ্ভুত সব কাহিনীও রয়েছে। এখানে উদাহরণ স্বরূপ এক জিনের বিস্ময়কর কাহিনী উল্লেখ করা হলো, যার বাল্য বয়সে হাবিল-কাবিলের ঘটনা সে প্রত্যক্ষ করেছিল এবং যার নাম ছিল ‘হামা ইবনে হীম ইবনে আকিয়াস ইবনে ইবলিশ।’ হুজুর (সা.)-এর সাথে তার সাক্ষাতের ঘটনা বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে নিম্নরূপ বর্ণিত হয়েছে:
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সফরসঙ্গী হিসেবে মক্কার জঙ্গল এলাকা অতিক্রম করছিলাম, হঠাৎ দেখতে পাই এক প্রবীণতম ব্যক্তি লাঠি ভর করে চলছিল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: ‘তার আওয়াজ ও চালচলনে মনে হয় এ প্রবীণ ব্যক্তি জিন হবে।’ সে দ্রুত বলে উঠল, ‘জি হ্যাঁ।’ তার জবাব শ্রবণ করে হুজুর (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: ‘তুমি কোন শে্িরণর জিন?’ সে বলল, ‘আমার নাম হামা ইবনে হীম ইবনে আকিয়াস ইবনে ইবলিশ।’
হুজুর (সা.) বললেন: ‘তোমার ও শয়তানের মধ্যে মাত্র দুই পুরুষের দূরত্ব।’ সে জবাব দিলো, ‘জি হ্যাঁ’। হুজুর (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন: ‘তোমার বয়স কত?’ সে জবাবে বলল, ‘দুনিয়ার বেশির ভাগ সময় আমি প্রত্যক্ষ করেছি। যে রাতে কাবিল কর্তৃক হাবিল নিহত তখন আমার বয়স ছিল মাত্র কয়েক বছর। আমি টিলা হতে ঝেঁকে দেখছিলাম এবং আনন্দিত হচ্ছিলাম আর লোকদের উত্তেজিত করছিলাম।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) তার বক্তব্য শ্রবণ করে বললেন: ‘এটা তো খুব মন্দ কাজ ছিল।’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর প্রিয় নবী! আপনার প্রতি দরুদ ও সালাম নাজিল হোক, রাগ করবেন না, কেননা আমি সে লোকদের মধ্যে একজন যারা নূহ (আ.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি ও তার পবিত্র হাতে আল্লাহর কাছে তওবা করেছিলাম এবং আমি তার দাওয়াতি কাজে সহযোগিতা করেছিলাম এবং তাকে সন্তুষ্ট করেছিলাম।’ অতঃপর সে বৃদ্ধ জিন কান্নায় ভেঙে পড়ে, যার ফলে আমরাও কান্নায় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ি। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে আরজ করে, ‘আল্লাহর কসম, আমি খুবই লজ্জিত যে, আমি কাফের থেকে যাব, আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
এরপর সে বলল, ‘আমি হজরত হুদ (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তার হাতে ঈমান এনেছি। অতঃপর হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর সাথেও আমার সাক্ষাৎ হয় এবং যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন আমি তাঁর সঙ্গেই ছিলাম। অতঃপর হজরত ইউসুফ (আ.)-কে যখন ক‚পে নিক্ষেপ করা হয়, তখন আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম এবং তাঁর পূর্বেই ঐ কূপে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
হজরত শোয়েব (আ.)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় এবং হজরত মূসা (আ.)-এর সাথে ও হজরত ঈসা ইবনে মারয়াম (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। হজরত ঈসা (আ.) আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে তখন তার পবিত্র খেদমতে আমার সালাম আরজ করবে।’ সুতরাং, আমি আপনার দরবারে তাঁর পয়গাম পৌঁছে দিচ্ছি এবং আপনার পবিত্র হস্তে ঈমান এনেছি।’
হুজুর (সা.) সালামের জবাব দিয়ে বললেন: ‘তোমার প্রতি ও ঈসা (আ.)-এর প্রতি আল্লাহ শান্তি নাজিল করুন। তুমি কি চাও? সে আরজ করল, ‘হজরত মূসা (আ.) আমাকে তওরাত শিখিয়েছিলেন এবং হজরত ঈসা (আ.) আমাকে ইঞ্জিল এবং আপনি আমাকে কোরআন শিখিয়ে দিন।’ অতঃপর হুজুর (সা.) তাকে কোরআন শিখিয়ে দেন।
একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, হুজুর (সা.) তাকে কোরআনের মাত্র দশটি সূরা শিখিয়েছিলেন এবং তিনি দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সময় পর্যন্তও আমরা তাঁর মৃত্যুর খবর পাইনি এবং আমরা তাঁকে দেখিওনি। আল্লাহই ভালো জানেন সে (জিন) জীবিত আছে কিংবা মৃত। (হায়াতুল হায়ওয়ান)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।