পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন ইস্যুতে জন বিষ্ফোরণোম্মুখ সিলেট। প্রতিদিন কোনো কোনো কর্মসূচি নিয়ে চাঙা সিলেটবাসী। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের রাজপথ নিরুত্তাপ থাকলেও জননিপীড়নের ঘটনায় এখন উত্তাল। এদিকে, রায়হান হত্যা ঘটনায় রহস্যজট এ সপ্তাহে খুলতে পারে বলে আশাবাদ অনেকের। এছাড়া যেকোন মুহূর্তে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে হত্যা ঘটনায় অভিযুক্ত এক এস আইসহ অন্যদের। এস এম পির নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফ দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই গতকাল রাত ৮টায় মিলিত হন নিহত রায়হান পরিবারে সাথে। তার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে পালিয়ে থাকা এস আই আকবর গ্রেফতার হতে পারে এমনটাই ভাবছে সিলেটবাসী। এদিকে, পলাতক এস আই আকবরকে গ্রেফতারের ৯ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে সিলেটের ব্যবসায়ীরা। অন্যথায় হুঁশিয়ারী জানিয়েছেন কঠোর কর্মসূচির।
৩ ইস্যুতে জন বিষ্ফোরণ : প্রায় প্রতিদিনই শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে বিভিন্ন পথ, উত্তাল হচ্ছে সিলেট নগরী। অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আওয়াজ তুলছেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। দলমত নির্বিশেষে এখন একই আওয়াজ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এক নববধূকে গণধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেন সিলেটের আপামরজনতা। ঘটনার পরদিন থেকে দল-মত নির্বিশেষে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামেন সবাই। আন্দোলন আর প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সরগরম হয়ে উঠে সিলেট। নারীদের শ্লীলতাহানী, নির্যাতন আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের ব্যানারে পালিত হয় ধারাবাহিক কর্মসূচি। কিন্তু নেক্কারজনক এহেন ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের আপোষের চেষ্টাও নজরে ছিল সিলেটের সচেতন মহলের। সেই সাথে গণধর্ষণে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ব্যর্থতার দায়ভার পড়ে এস এম পি পুলিশের উপর। এমসি কলেজ গণধর্ষণের প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে, এমনকি সংগঠিত গণধর্ষণ ঘটনার স্থানও এস এম পি শাহপরান থানা এলাকায়। সেই থানার অফিসার ইনচার্জের বাড়িও বালাগঞ্জে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাইফুরের লাম্পট্য ও অপরাধ কাহিনী দীর্ঘ হওয়ার পেছনে দায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা। এলাকার ছেলে হিসেবে বিশেষ ছাড় দেয়ার কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল সাইফুর। সাইফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সাহস করতো না কেউ। একেবারে নিরূপায় হয়ে কেউ থানা পুলিশে অভিযোগ দিলেই দ্রæত তার নিকট তথ্য পৌঁছে যেত। এরপর অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আরও ক্ষেপে যেত সাইফুর।
আইনী সহযোগিতায় ধর্ষণ ঘটনার মধ্যে প্রকাশ পায় সাইফুরের অপরাধ রাজ্য ও কর্ম। তারপরও সাইফুরসহ ধর্ষণ মামলার আসামিদের ধরতে পারেনি এস এম পি। জেলা পুলিশ ও র্যাবের দক্ষতায় চাঞ্চল্যকর এ গণধর্ষণ মামলার আসামিরা গ্রেফতার হয়। কিন্তু এর রেশ চলতে থাকা অবস্থায় গত ১১ অক্টোবর নগরী বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ (৩৪)। কিন্তু এ মৃত্যুকে ধামাচাপা দিতে ছিনতাইকারী ও গনপিটুনীর খবর প্রচার করে পুলিশ। এ ক্ষোভে ফেটে পড়েন রায়হানের পরিবার একই সঙ্গে সিলেটবাসী। এখনও একই আওয়াজে সংগঠিত হচ্ছে মানুষ, বাড়ছে উত্তাপ, শেষ কোথায় এখনই কেউ জানে না। এরমধ্যে ফ্রান্সে সরকারি মদদে অবমাননা করা হয় বিশ্বনবি মুহাম্মদ (সা.)-কে। গত দুদিন থেকে আবারও নতুন এই ইস্যুতে মাঠে নেমেছেন ইসলামি সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ। চলমান এ পরিস্থিতিতে সহসাই সিলেটের রাজপথ ‘শান্ত’ হচ্ছে না বলে ধারনা করছেন সচেতন মহল। এছাড়া শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক এ আন্দোলন অনেক দূর অগ্রসর হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। কারণ সংঘটিত ঘটনার বিপরীতে, প্রতিবাদের এ ধারাবাহিকতা ইতিবাচক।
রায়হান হত্যা রহস্যজট খুলছে এ সপ্তাহেই : পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হানের মৃত্যুর ১৭ দিন পার হয়েছে গত মঙ্গলবার। এই দুই সপ্তাহের বেশি সময়ে দুই পুলিশ সদস্যসহ আটক হয়েছেন ৩ জন। তবে মূল হোতা এস আই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়া এখনও লাপাত্তা। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে রায়হানের পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের মাঝে।
তবে, রায়হান হত্যাকান্ডে রহস্যের জট খুলতে পারে চলতি সপ্তাহে। নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফের দায়িত্ব গ্রহণের পর পালিয়ে থাকা এস আই আকবরও আসতে পারে আইনের আওতায়। এমনটাই দাবি করেছে, পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। পুলিশের ওই সূত্র দাবি করছে, আকবরকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সুফল পেতেও পারে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ‘রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি শনাক্ত’-এমন বক্তব্যের পর রায়হান হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরাও এমনটাই মনে করছেন। পুলিশি হেফাজতে রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনায় সিলেট এখনো উত্তাল।
এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত সাময়িক বরখাস্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়ার পলায়ন নানাভাবে বেকায়দায় ফেলেছে পুলিশ বিভাগকে। একমাত্র আকবর ছাড়া পুলিশি হেফাজতে থাকা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত সাময়িক বরখাস্ত ও তদন্তে সংশ্লিষ্টতা থাকা পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে একে একে। তবে, অভিযুক্ত সকল পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার না করার আগ পর্যন্ত মাঠে ছাড়বেন না রয়েছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম।
গত রোববার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কাফনের কাপড় মাথায় দিয়ে আমরণ অনশণের ডাক দিয়ে দিনভর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিলেন তিনি।
যেকোন মুহূর্তে এএসআই আশেক এলাহীসহ অন্যদের গ্রেফতার : রায়হান হত্যা মামলায় যেকোন সময় গ্রেফতার দেখানো হতে পারে এ এস আই আশেক এলাহীসহ হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যদের এমন তথ্য জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। তবে এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্য। তারা হচ্ছেন- কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস।
এর মধ্যে হারুন ৫ দিনের রিমান্ডে আছেন এবং টিটুকে দ্বিতীয় দফায় তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। এর আগে তাকে প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এছাড়া সেই রাতে রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে গত রোববার সকালে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। আলোচিত এই হত্যাকান্ডে অন্যতম অভিযুক্ত হলেন এএসআই আশেকে এলাহী। তাকে গত ১৩ অক্টোবর দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে যুক্ত করা হয়।
রায়হান পরিবারের সাক্ষাতে এসএমপির নতুন কমিশনার : সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)-এর নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেটে এসে পৌঁছে রাত ৮টায় দেখা করেন রায়হান পরিবারের সাথে। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একটি ফ্লাইটে সিলেটে পৌঁছেন তিনি। তারপর সোজা চলে যান হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জেয়ারতে।
আকবর গ্রেফতারে ৯ দিনের আল্টিমেটাম সিলেটের ব্যবসায়ীদের : ‘পুলিশী নির্যাতনে’ নিহত রায়হান হত্যার মূল হোতা এস আই আকবরকে গ্রেফতারের ৯ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ। এছাড়া মানববন্ধন কর্মসূিচ থেকে গৃহীত কর্মসূচি স্থগিত করে বর্ধিত করা হয়েছে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শেখ মখন মিয়া চেয়ারম্যান ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন নিশ্চিত করেছেন এই তথ্য। এক বিবৃতিতে সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দরা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাই আইন লঙ্ঘন করে চলছে।
নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা জনগণের টাকায় বেতন দিয়ে কোনো খুনি পুলিশ পুষতে চাই না। দুর্নীতিবাজ খুনি এস আই আকবর ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা বলেন, কিছু পুলিশ একের পর এক অপকর্ম করে চলছে। বিনা বিচারে হত্যা, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, মাদক ও অস্ত্র দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নেতৃবৃন্দ জানান, আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে রায়হান হত্যাকারীর মূল আসামি এস আই আকবরকে গ্রেফতার করা না হলে, লাগাতার কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে ব্যবসায়ীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।