Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিহারে কঠিন লড়াইয়ে নীতীশ-বিজেপি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিহারের প্রথম পর্বের বিধানসভা ভোট। নীতীশ-বিজেপি-র জোট বনাম লালু-কংগ্রেস-বামেদের জোটের লড়াই জমে উঠেছে। এই নির্বাচনে সম্ভবত তার রাজনৈতিক জীবনের সব চেয়ে কঠিন লড়াই লড়ছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে তিনি রীতিমতো কোণঠাসা। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার জন্য লোকের মনে একটা স্বাভাবিক ক্ষোভ থাকে। তার ওপর করোনাকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো নিয়ে নীতীশের মনোভাবে সাধারণ গরিব মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। সব মিলিয়ে লড়াইটা তার জন্য বেশ কঠিন।

নীতীশ এ বার সত্যিই ঘরে-বাইরে চাপের মুখে। বিরোধী জোট মানে লালুপ্রসাদের আরজেডি, কংগ্রেস ও বামেদের আক্রমণের লক্ষ্যে তিনি ও বিজেপি থাকবেন সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা ঠিক স্বাভাবিক নয়, সেটা হলো, ঘরের ভিতরের চাপ। বিরোধীরা তো বটেই, নীতীশের দলের নেতারাও বলছেন, এই চাপটা দিচ্ছে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় স্তরে এনডিএ-র শরিক সদ্যপ্রয়াত রামবিলাস পসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি)। পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ পাসোয়ান এখন দলের নেতা। নীতীশের দল লড়ছে ১১৫টি কেন্দ্রে। সবকটিতেই প্রার্থী দিয়েছে এলজেপি। নীতীশকে হারাবার ঘোষিত লক্ষ্য নিয়ে। দলিতদের ৫-৬ শতাংশ ভোট পায় এলজেপি। নীতীশের দলের এই ভোট তারা কেটে নিলেই মুখ্যমন্ত্রীর বিপদ। ইতিমধ্যে নীতীশের বেশ কয়েকটি সভায় মুর্দাবাদ ধ্বনি উঠেছে। আর এবার প্রচারে নেমে নীতীশ মেজাজ হারাচ্ছেন এবং লালু, রাবড়ি ও তাদের ছেলে তেজস্বী যাদবকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। যা আগে কখনো তাকে করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘নীতীশ চিরকালই ভদ্রলোক রাজনীতিক বলে পরিচিত। তিনি মেজাজ হারিয়ে তেজস্বীর মতো অল্পবয়সী নেতার উদ্দেশে যা বলছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট চাপে আছেন।’ বিজেপি নেতারা বারবার বলেছেন, চিরাগের সঙ্গে তারা নেই। জিতলে নীতীশই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। অমিত শাহ, উপ মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি থেকে শুরু করে অনেক নেতাই এই প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। মুসকিল হলো, বিজেপি এরপরেও চিরাগের সঙ্গ ছাড়েনি। আর অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি পিছনে না থাকলে চিরাগের এত সাহস ও শক্তি হবে না যে নীতীশের দল যেখানেই লড়ছে, সেখানেই প্রার্থী দেবে। কিন্তু বিজেপি বা জোটের অন্যরা যেখানে লড়ছে, সেখানে তিনি প্রার্থী দেননি। উল্টে বিজেপি-র অনেক নেতা চিরাগের দলের প্রার্থী হয়েছেন। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ‘একমাস আগে মনে হচ্ছিল, নীতীশ-বিজেপির জোটের জয় খুবই সহজ হবে। কিন্তু এখন যে জায়গায় বিহার দাঁড়িয়ে আছে, তাতে অনেক হিসাব উল্টে যেতে পারে। বিহারে নীতীশ-বিরোধী হাওয়া চলছে। লোকের ক্ষোভ প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে।’

তেজস্বীর সভায় প্রচুর লোক আসছে। যে তেজস্বীকে গত লোকসভা নির্বাচনে মানুষ আমলই দেয়নি, তার সভায় এত লোকের জমায়েত চমকে ওঠার মতো। আর তেজস্বী বলেছেন, ক্ষমতায় এলে প্রথম দিনেই ১০ লাখ লোককে চাকরি দেয়ার ফাইলে সই করবেন তিনি। সেই প্রচার লোকের মনে ধরেছে বলে মনে করেন শরদ। আরেক রাজনৈতিক সংবাদদাতা সুনীল চাওকে মনে করেন, ‘এই অবস্থায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর উচিত ছিল বিহারে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে প্রচার করা। তিনি গোটা কয়েক সভা করেই দায়িত্ব সারছেন। বিজেপি-নীতীশ জোট যখন বেশ খানিকটা কোণঠাসা সেখানে কংগ্রেসের উচিত ছিল সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামা। কারণ, বিজেপি-কে কোনো অবস্থাতেই লঘু করে দেখা ঠিক হবে না। মোদি-শাহ শেষ সময় পর্যন্ত জয়ের জন্য চেষ্টা করবেন। তারা অনেক হিসাব উল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।’ তাই বিহারের ভোট এতটা চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠেছে। বিহার জিততে পারলে পশ্চিমবঙ্গেও উদ্বুদ্ধ বিজেপি ভোটের ময়দানে জান লড়িয়ে দেবে। বিহার হাতছাড়া হয়ে গেলে, সেটা হবে বিজোপি-র কাছে বড় ধক্কা। তার রেশ পশ্চিমবঙ্গের ভোটেও পড়তে পারে, অন্তত মানসিকভাবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ