বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ধর্মহীনতার এই যুগে মুহাম্মাদ (সা.)-এর সত্যসরল ধর্মের প্রচার ও তাঁর জীবনচরিত ও বাণী ব্যাপকতর করার প্রয়াস পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অব্যাহত আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র নাম স্মরণ করে, তাঁর সপ্রশংস আলোচনা করে করে ও তাঁর অনন্য গুণ-বৈশিষ্ট্য শুনে হাজার কোটি মানুষের মনে যে আনন্দ ও প্রফুল্লতা অনুভূত হয় তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আপন-পর নির্বিশেষে এমনকি বিরুদ্ধ শত্রুদেরও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ ছাড়া উপায় নেই।
যে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে এ আয়াত (ওরাফা’না লাকা যিকরাকা) অবতীর্ণ হয়েছে তা সামনে রেখে আয়াতটি তিলাওয়াত করলে নিঃসন্দেহে তিলাওয়াতের স্বাদ ও আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাবে। কুফর-শিরকের ঘোর অন্ধকার, গোটা দুনিয়াই তাঁর বিরুদ্ধে, মক্কার নামকরা সর্দাররা মুস্তফা-প্রদীপ (সা.)-কে নির্বাপিত করার চেষ্টায় লিপ্ত, এ অবস্থায় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
কে তখন ভাবতে পেরেছিল যে, মক্কার এই এতিমের পবিত্র আলোচনা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে উচ্চারিত হবে! তাঁর ধর্মের আলোয় সভ্য দুনিয়ার বিরাট অংশ আলোকিত হয়ে উঠবে এবং কোটি কোটি মানুষ তাঁর নামে জীবন বিসর্জন দেয়াকে নিজের জন্য শতসহস্র গৌরব ও সৌভাগ্য বলে মনে করবে। কিন্তু আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর প্রিয় রাসূল ও সম্মানিত বান্দা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তা তো সত্য হওয়ারই ছিল এবং তা সত্য হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর সপ্রশংস আলোচনায় তিনি সূর্যের মতো বিরাজ করবেন।
মাওলানা আবদুল মাজিদ দরয়াবাদী সুন্দর লিখেছেন, ‘স্রষ্টার সাথে যে সৃষ্টির নাম মুখে মুখে উচ্চারিত হয়, আল্লাহর নামের সাথে যে বান্দার নাম শ্রুতিগোচর হয় তা তো দুনিয়ার কায়সার বা কিসরার নাম নয়, দুনিয়ার কোনো কবি-সাহিত্যিকের নাম নয়, কোনো বিদ্বান বা দার্শনিকের নাম নয়, কোনো নেতা বা সেনাপতির নাম নয়, তা কোনো ঋষি বা পাদ্রীরও নয়, এমনকি অন্য কোনো নবীরও নাম নয়। বরং তা হলো আবদুল্লাহর কলিজার টুকরা, আমিনার চোখের মণি, বাতহার ভূমিতে জন্মগ্রহণকারী সেই উম্মি ও এতিমের।
কাশ্মিরের সবুজ ভূমিতে, দাকানের পাহাড়-পর্বতে, আফগানিস্তানের উঁচু ভূমিতে, হিমালয়ের চূড়ায়, গঙ্গার অববাহিকায়, চীন-জাপানে, বার্মা-রাশিয়ায়, মিসরে, ইরাক-ইরানে, ফিলিস্তিন ও আরবের বিস্তীর্ণ ভূমিতে, তুর্কী-নজদে, ইয়ামান-মরক্কোয়, ইস্তাম্বুলে, হিন্দুস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র-লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনেও বছর বা মাস নয়, প্রতি দিন পাঁচ বার সুউচ্চ মিনার থেকে স্রষ্টার নামের সাথে যে নাম ইথারে ছড়িয়ে পড়ে তা এমন এক মহান ও সম্মানিত সত্ত্বার নাম, যাকে অন্তর্দৃষ্টিহীন দুনিয়া একসময় শুধু এতিম বলেই জানত। তো এ হলো এতীমের রাজত্ব, আর এই হলো ‘ওরাফা’না লাকা যিকরাকা’ এর তাফসীর। কোনো নির্দিষ্ট গোত্র কিংবা প্রদেশ নয়; গোটা পৃথিবীর বুকে, পৃথিবীর হৃদয়ে আজ কারো হুকুমত থাকলে তা এই এতিম (সা.) এরই আছে, কোনো রাজত্ব থাকলে এই উম্মী (সা.) এরই আছে।
সাহাবী হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, একবার জিবরীল আমীন আ. আমার নিকট আগমন করলেন এবং বললেন, আমার ও আপনার রব আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, তিনি কীভাবে আপনার স্মরণ সমুচ্চ করেছেন? আমি আরয করলাম আল্লাহই ভালো জানেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, যখন আমার নাম উচ্চারণ করা হবে তখন আমার সাথে আপনার নামও উচ্চারণ হবে। (সহীহ ইবনে হিববান : ৩৩৮১)। কবিতার ভাষায়-তাকবীরে-কালিমায়, নামাজে-আজানে/আল্লাহর নামের সাথে মিলেছে মুহাম্মাদের নাম।
সুতরাং আজ এমন কোনো অঞ্চল, এমন কোনো মুহূর্ত আছে, যা হাবীব (সা.)-এর স্মরণ ছাড়া অতিবাহিত হয়? এই পৃথিবীর দশদিকে ভূমির আঙ্গিক আবর্তনের সাথে সাথে প্রতি আযানে নাম উচ্চারিত হয়। উঁচু উঁচু মিনার থেকে সরওয়ারে কায়েনাতের সম্মানিত নামও খালেকে কায়েনাতের মহিমান্বিত নামের সাথে সমুচ্চ স্বরে উচ্চারিত হয়। জলে-স্থলে, শহরে-গ্রামে, জনবসতিতে-বিরাণভূমিতে, পাহাড়ের চ‚ড়ায় সর্বত্র মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হয়। আরব-আজমের সর্দার, বিশ্বমানবতার রাহবার হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মোবারক নামে মুখরিত থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।