Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোদার পরে তুমিই শ্রেষ্ঠ-২

হাফেজ মুহাম্মাদ ছানী | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ধর্মহীনতার এই যুগে মুহাম্মাদ (সা.)-এর সত্যসরল ধর্মের প্রচার ও তাঁর জীবনচরিত ও বাণী ব্যাপকতর করার প্রয়াস পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অব্যাহত আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র নাম স্মরণ করে, তাঁর সপ্রশংস আলোচনা করে করে ও তাঁর অনন্য গুণ-বৈশিষ্ট্য শুনে হাজার কোটি মানুষের মনে যে আনন্দ ও প্রফুল্লতা অনুভূত হয় তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আপন-পর নির্বিশেষে এমনকি বিরুদ্ধ শত্রুদেরও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ ছাড়া উপায় নেই।

যে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে এ আয়াত (ওরাফা’না লাকা যিকরাকা) অবতীর্ণ হয়েছে তা সামনে রেখে আয়াতটি তিলাওয়াত করলে নিঃসন্দেহে তিলাওয়াতের স্বাদ ও আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাবে। কুফর-শিরকের ঘোর অন্ধকার, গোটা দুনিয়াই তাঁর বিরুদ্ধে, মক্কার নামকরা সর্দাররা মুস্তফা-প্রদীপ (সা.)-কে নির্বাপিত করার চেষ্টায় লিপ্ত, এ অবস্থায় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।

কে তখন ভাবতে পেরেছিল যে, মক্কার এই এতিমের পবিত্র আলোচনা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে উচ্চারিত হবে! তাঁর ধর্মের আলোয় সভ্য দুনিয়ার বিরাট অংশ আলোকিত হয়ে উঠবে এবং কোটি কোটি মানুষ তাঁর নামে জীবন বিসর্জন দেয়াকে নিজের জন্য শতসহস্র গৌরব ও সৌভাগ্য বলে মনে করবে। কিন্তু আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর প্রিয় রাসূল ও সম্মানিত বান্দা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন তা তো সত্য হওয়ারই ছিল এবং তা সত্য হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর সপ্রশংস আলোচনায় তিনি সূর্যের মতো বিরাজ করবেন।

মাওলানা আবদুল মাজিদ দরয়াবাদী সুন্দর লিখেছেন, ‘স্রষ্টার সাথে যে সৃষ্টির নাম মুখে মুখে উচ্চারিত হয়, আল্লাহর নামের সাথে যে বান্দার নাম শ্রুতিগোচর হয় তা তো দুনিয়ার কায়সার বা কিসরার নাম নয়, দুনিয়ার কোনো কবি-সাহিত্যিকের নাম নয়, কোনো বিদ্বান বা দার্শনিকের নাম নয়, কোনো নেতা বা সেনাপতির নাম নয়, তা কোনো ঋষি বা পাদ্রীরও নয়, এমনকি অন্য কোনো নবীরও নাম নয়। বরং তা হলো আবদুল্লাহর কলিজার টুকরা, আমিনার চোখের মণি, বাতহার ভূমিতে জন্মগ্রহণকারী সেই উম্মি ও এতিমের।

কাশ্মিরের সবুজ ভূমিতে, দাকানের পাহাড়-পর্বতে, আফগানিস্তানের উঁচু ভূমিতে, হিমালয়ের চূড়ায়, গঙ্গার অববাহিকায়, চীন-জাপানে, বার্মা-রাশিয়ায়, মিসরে, ইরাক-ইরানে, ফিলিস্তিন ও আরবের বিস্তীর্ণ ভূমিতে, তুর্কী-নজদে, ইয়ামান-মরক্কোয়, ইস্তাম্বুলে, হিন্দুস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র-লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনেও বছর বা মাস নয়, প্রতি দিন পাঁচ বার সুউচ্চ মিনার থেকে স্রষ্টার নামের সাথে যে নাম ইথারে ছড়িয়ে পড়ে তা এমন এক মহান ও সম্মানিত সত্ত্বার নাম, যাকে অন্তর্দৃষ্টিহীন দুনিয়া একসময় শুধু এতিম বলেই জানত। তো এ হলো এতীমের রাজত্ব, আর এই হলো ‘ওরাফা’না লাকা যিকরাকা’ এর তাফসীর। কোনো নির্দিষ্ট গোত্র কিংবা প্রদেশ নয়; গোটা পৃথিবীর বুকে, পৃথিবীর হৃদয়ে আজ কারো হুকুমত থাকলে তা এই এতিম (সা.) এরই আছে, কোনো রাজত্ব থাকলে এই উম্মী (সা.) এরই আছে।

সাহাবী হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, একবার জিবরীল আমীন আ. আমার নিকট আগমন করলেন এবং বললেন, আমার ও আপনার রব আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, তিনি কীভাবে আপনার স্মরণ সমুচ্চ করেছেন? আমি আরয করলাম আল্লাহই ভালো জানেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, যখন আমার নাম উচ্চারণ করা হবে তখন আমার সাথে আপনার নামও উচ্চারণ হবে। (সহীহ ইবনে হিববান : ৩৩৮১)। কবিতার ভাষায়-তাকবীরে-কালিমায়, নামাজে-আজানে/আল্লাহর নামের সাথে মিলেছে মুহাম্মাদের নাম।

সুতরাং আজ এমন কোনো অঞ্চল, এমন কোনো মুহূর্ত আছে, যা হাবীব (সা.)-এর স্মরণ ছাড়া অতিবাহিত হয়? এই পৃথিবীর দশদিকে ভূমির আঙ্গিক আবর্তনের সাথে সাথে প্রতি আযানে নাম উচ্চারিত হয়। উঁচু উঁচু মিনার থেকে সরওয়ারে কায়েনাতের সম্মানিত নামও খালেকে কায়েনাতের মহিমান্বিত নামের সাথে সমুচ্চ স্বরে উচ্চারিত হয়। জলে-স্থলে, শহরে-গ্রামে, জনবসতিতে-বিরাণভূমিতে, পাহাড়ের চ‚ড়ায় সর্বত্র মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হয়। আরব-আজমের সর্দার, বিশ্বমানবতার রাহবার হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মোবারক নামে মুখরিত থাকে।



 

Show all comments
  • Hasib Khan ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
    সন্মানিত লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ এতসুন্দর বিষয় নিয়ে লিখার জন্যে এবং তা প্রকাশ করে আমার মত অধমকে তা পড়ার শুযোগ করে দেয়ার জন্যে। আল্লাহ্‌ তায়ালা আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আসলে প্রিয় হাবীব তাজেদারে কায়েনাত (সাঃ) এর শান, মান, গুনাগান প্রকাশ করার শাধ্য কারইবা আছে, যার শান মান গুনগান স্বয়ং রাব্বে জুলজালাল নিজেই করেন। সৃষ্টি কুলতো কেবল সেই মহান আল্লাহ্‌ -র অনুকরন করার ছেষ্টা করে নিজেদেরকেই সন্মানিত করে। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাঁর প্রিয় হাবীব (সাঃ) এর উসিলায় হিদায়েতের আলো দিয়ে আলোকিত করুন এবং দুনিয়ায় ও আখেরাতে কামিয়াবদের দলভুক্ত করুন। কত মহান সেই আল্লাহ্‌ যার কুদরতে আমাদের সকলের প্রান।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
    মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট। তাঁর আদর্শ অশান্ত সমাজে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে। তার চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ''নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে মহত্তম আদর্শ '' (আল-কোরআন)
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
    সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ ও রাষ্ট্রে একমাত্র তাঁর অনুকরণ–অনুসরণই দিতে পারে মুক্তির দিশা।
    Total Reply(0) Reply
  • H M Tamim Khan ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
    তিনি আহমাদ, অর্থাৎ সর্বাধিক প্রশংসাকারী। আহমাদ নামটি কোরআনে রয়েছে একবার।
    Total Reply(0) Reply
  • রাজিব ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 0
    বিশ্বের সেরা নাম ‘মুহাম্মদ’। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবী (সা.)–এর আলোচনা সমুন্নত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর আমি আপনার স্মরণ ও আলোচনা উন্নত করেছি।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৪)।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Gazi ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
    তখন চলছিল আইয়ামে জাহেলিয়াত, মানে অন্ধকার যুগ। অজ্ঞানতা, মূর্খতা, কুসংস্কার ও পাপাচারে নিমজ্জিত ছিল জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপ। এ সময় জ্ঞানের আলো নিয়ে, মুক্তির বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসেন মানবতার মহান বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Mahamudul Riad ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
    অন্ধকার যুগের পশুসুলভ জীবনাচার ও জুলুম, নিপীড়ন–নির্যাতনের সামাজিক অন্যায়–অবিচার ও অত্যাচারের তমসা থেকে মানবতাকে সভ্যতার আলোর দিকে এগিয়ে নিতে; তিনি ভোরের সমীরণপ্রবাহ সঙ্গে নিয়ে, প্রভাত রবির রঙিন আলোয়, সকালের সূর্যের হাসি হয়ে উষার আকাশে উদিত হলেন মুক্তির দূতরূপে।
    Total Reply(0) Reply
  • Iftikhar Bappy ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
    আল্লাহর হাবিব প্রিয় রাসুল আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই ধরায় শুভাগমন করেন আজ থেকে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে, সৌদি আরবের মক্কা নগরে। ভোরের সমীরণ নিয়ে তিনি এসেছিলেন স্নিগ্ধ প্রাতঃকালে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন