বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বজাহানের গৌরব, নবীকুলের শিরোমনি বিশ্বশান্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুই তাঁর বিশ্বময় মর্যাদা এবং খ্যাতি ও মাহাত্মের সাক্ষী। আরব-আজমের সর্দার, শ্রেষ্ঠ রাহবর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনন্য ব্যক্তিত্ব ও অনুপম জীবন আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত প্রতিটি যুগ ও স্থানজুড়েই ব্যাপৃত। বিশ্বজাহানের সবকিছুই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়ত ও রিসালাতের সীমাহীন মাহাত্ম্য ও মাধুর্যের দ্বারা প্রভাবিত। পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুই তাঁর খ্যাতি ও মাহাত্মের সাক্ষী।
‘ইন্না আ’ত্বাইনা কাল কাউসার এবং ওরাফা’না লাকা যিকরাকা’ এর চিত্তাকর্ষক ধ্বনি গোটা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে প্রতিধ্বনিত। সৃষ্টির সেই শ্রেষ্ঠ মানবের সম্মানিত নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাসূলুল্লাহ। আর তাঁর খ্যাতি এতই সমুচ্চ যে, স্থান-কালের সকল উচ্চতা ও বুলন্দি এই পবিত্র নাম ও ব্যক্তিত্বের তুলনায় নেহাৎ তুচ্ছ। পাতাল-ভূমি থেকে উর্ধ্ব আরশ পর্যন্ত সবকিছুই তাঁর স্মরণে মুখর। এত উচ্চ মর্যাদা গোটা জগতে তিনি ছাড়া আর কেউ পায়নি। কেউ পাবেও না।
এই অমোঘ সত্য কী সুন্দর করে বলেছেন কবি সাইয়েদ সাবীহ রাহমানী, ‘কুয়ী মিছাল মোস্তফা কা কাভী থা নাহ হে, নাহ হো গা, কেছী আওর কা ইয়েহ রাতবাহ কাভী থা নাহ হে না হো গা’, অর্থ : মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো কখনো কেউ ছিল না, এখনও নেই আর ভবিষ্যতেও হবে না। এই মর্যাদা অন্য কারো কখনো ছিল না, এখনও নেই আর ভবিষ্যতেও হবে না।
প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা সাইয়েদ মাহমুদ আলূসী রাহ. ‘ওরাফা’না লাকা যিকরাকা’ এর তাফসীরে লেখেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা ও সমুচ্চতা, তাঁর অনুপম আদর্শ ও নামের খ্যাতি এর চেয়ে অধিক আর কী হবে যে, আল্লাহ তাআলা নিজের নামের সঙ্গে কালিমায়ে শাহাদাতে তাঁর প্রিয়তমের নামটিও যুক্ত করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য করাকে নিজেরই আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। ফেরেশতাগণের সাথে তিনিও রাসূলের প্রতি দুরুদ প্রেরণ করেছেন এবং মুমিনদেরকেও তাঁর প্রতি দুরুদ পাঠের আদেশ দিয়েছেন। আর যখনই সম্বোধন করেছেন অতি সম্মানিত ও সুন্দর উপাধিসহ সম্বোধন করেছেন। যেমন, হে মুদ্দাছছির! (চাদর আবৃত), হে মুযযাম্মিল! (কম্বল আবৃত), হে প্রিয় নবী!, হে প্রিয় রাসূল! ইত্যাদি।
পূর্বের আসমানী কিতাবগুলোতেও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সপ্রশংস উল্লেখ করেছেন এবং সকল নবী ও উম্মত থেকে তাঁর প্রতি ঈমান আনার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। এক ঐতিহাসিক ও অনস্বীকার্য বাস্তবতা এই যে, ভূ-পৃষ্ঠে এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে দিনরাত সরওয়ারে দো আলম (সা.)-এর রিসালাত ঘোষিত হয় না। চব্বিশ ঘণ্টার ১৪৪০ মিনিটেই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে, কোনো না কোনো অঞ্চলে আযানের ধ্বনি বাজতে থাকে।
আর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার নামের সাথে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হতে থাকে। সুতরাং তাঁর নামের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য এদিক থেকেও প্রোজ্জ্বল যে, আযানের ধ্বনি যতদিন পৃথিবীতে বাজবে ততদিন আল্লাহর নামের সাথে তাঁর প্রিয়তম পয়গম্বর, সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র নামটিও প্রেমিক-হৃদয়ে সুধাবর্ষণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।