Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নলকূপ দেয়ার কথা বলে ১৫০ পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হলো ২০ লাখ টাকা

গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২০, ১১:১৮ এএম

গোপালগঞ্জে গভীর নলকূপ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ১৫০ পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে । বছর পেরিয়ে গেলেও নলকূপের খবর নেই । ক্ষতিগ্রস্থরা টাকা চাইতে গেলে উল্টো হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাচ করছেন ওই প্রভাবশালী। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থরা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের কাজুলিয়া গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে জসিম সরদারেরর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, জসিম সরদার মাত্র পনের দিনের মধ্যে নলকূপ বসিয়ে দেয়া প্রতিশ্রতি দিয়ে এলাকার ১৫০ ব্যক্তির কাছ থেকে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেও নলকূপ দেয়নি । নলকূপ দেয়া হবে কিনা,খোঁজ নিতে গেলে প্রতারণার শিকার গ্রামবাসীর মা-বাব তুলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও হুমকি দিচ্ছেন জসিম সরদার । সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চুর সাথে সক্ষতার কারণে জসিম ক্ষতিগ্রস্থদের পাত্তা দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাজুলিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম বলেন, জসিম আমাগে কাছে আইশ্য কয় , আমার লগে উপজেলার চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাচ্চুরসহ আরো অনেক ন্যতার (নেতা) ভালো খাতির ( ভালো সম্পর্ক) আছে । আমি যা কই ( বলি ) তাই করতে পারি । বাচ্চু ভাইরে ধইর‌্য এলাকায় ১০ জনরে ডিপকল ( গভীর নলকূপ ) দিছি । আমার ধারে ডিপকল, ঘাটলা, চাউলের কার্ড কইর‌্যা দেয়া কোন ব্যপার না । তোমাগো কিছু লাগলে আমারে কইয়ো । এসব শুইন্যা আমি তারে কইলাম আমাগে ৩ ড্যা ( ৩ টি) ডিপকল দিতি পারো । আমার মাইয়্যা, ননদ ও আমার জন্নি একটা মোট তিনড্যার জন্নি ৪৫ আজার ( হাজার) টাহা দিছি। তহন কইছিলো ১৫ দিনির মদ্দি দেবে। কয়দিন আগে আমি জসিমের বাড়ি টাহা চাতি গেছিলাম আমারে আমার বাপ-মা তুইলা গালাগালি করছে । আমাগে টাহা ও দেয়না ডিপকলও দেয় না ।
ভূক্তভোগী কাজুলিয়া গ্রামের এসএম মুনজুর আলম বলেন, জসিমের সাথে উপজেলা চেয়াম্যানের ভাল সম্পর্ক । এ বিষটি ইউনিয়নের অনেকেই জানেন। সেই সুযোগ নিয়ে জসিম এলাকায় বলে, কাজুলিয়া ইউনিয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান বাচ্চু ভাই একশতটি গভীর নলকুপ বরাদ্দ দিয়েছে। নলকুপ বসাতে খরচের কথা বলে ১৫০ ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জসিম। চেয়ারম্যানের কথা বলায় আমরা বিশ্বাস করে এতগুলি টাকা দিয়ে প্রতারনার শিকার হয়েছি। এখন নলকূপতো দুরে থাক টাকা ও ফেরত পাচ্ছি না। জসিমের সাথে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চুর সক্ষতা রয়েছে। কারণে জসিম ক্ষতিগ্রস্থদের পাত্তা দিচ্ছেনা বলেও তিনি জানান।

কাজুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাখন লাল বলেন, এ ব্যপারে অনেকে আমার কাছে এসেছে । জসিম এর আগে ১০ টি গভীর নলকূপ এলাকায় দিয়েছে জানতে পেরেছি । কয়েকদিন আগে জসিমের পিতা আবুল হোসেনকে বলেছিলাম জসিম যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদের টাকা ফেরত দিতে। আমার কথা না রাখলে, আমার কি করার আছে ।

এব্যপারে জসিমের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত জসিমের পিতা আবুল হোসেন বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু আমার বাড়িতে অনেকবার এসেছে । তার নাম করে আমার ছেলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। গত সপ্তাহে উপজেলা চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে আমাকে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে গেলে তিনি আমকে কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাক, তাদের টাকা দিযে দিতে বলেন। এলাকার লোকজন জসিমের সাথে শত্রæতা করে এ অভিযোগ দিয়েছে । আমরা টাকা ফেরত দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু বলেন, জসিমের টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। আমি জানার পর জসিমের পিতাকে ডেকে টাকা ফেরত দিতে বলেছি। তারা ইতিমধ্যে কিছু লোকের টাকা ফেরত দিয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। বাদবাকী টাকাও তারা ফেরত দেবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান খান বলেন,এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ