Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এখনই বন্ধ হচ্ছে না সিটিসেল মন্ত্রীকে না জানিয়েই বিটিআরসি’র চিঠি

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : এখনই বন্ধ হচ্ছে না বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) ঘোষণা এবং চিঠি কার্যকর হচ্ছে না আগামীকাল। ফলে বিকল্প সেবা বা অপারেটর খুঁজতে হবে না দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটরটির গ্রাহকদের। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, বিটিআরসির চিঠির সিদ্ধান্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই। বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরও গ্রাহকরা এক থেকে দুই মাস সময় পাবেন অপারেটর পরিবর্তনের জন্য। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর সাথে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই সিটিসেল বন্ধে বিটিআরসি’র সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। গতকাল (রোববার) সচিবালয়ে তিনি বলেন, সিটিসেলের গ্রাহকদের ১৬ অগাস্টের মধ্যে বিকল্প সেবা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সময় বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্তে একটু অপরিপক্বতা প্রকাশ পেয়েছে। আমরা কোন গ্রাহককে হুট করেই সুইচ ওভার করতে বলতে পারি না। আমার সাথে আলোচনা ছাড়াই বিটিআরসি চিঠি ইস্যু করেছে। আলোচনার প্রয়োজন ছিল, তাহলে আইনগত বিষয়গুলো জানতে পারতাম। বিকল্প সেবা নিতে সিটিসেল গ্রাহকদের আরও সময় দেয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের কাছে বকেয়া ৪৭৭ কোটি টাকা তাগিদ দিয়েও না পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন বলে স¤প্রতি জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।
টু-জি তরঙ্গ ফি, বার্ষিক লাইসেন্স ফি, বার্ষিক তরঙ্গ ফি, রেভিনিউ শেয়ারিংসহ বিভিন্ন খাতে সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বার বার তাগাদা দিয়েও ওই টাকা আদায় করতে না পেরে সিটিসেলকে ১৬ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তরঙ্গ বাতিল ও অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। ওই সময়ের মধ্যে সিটিসেলের গ্রাহকদেরও বিকল্প সেবা বা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এরপর থেকেই অপারেটরটির পক্ষ থেকে বকেয়া পরিশোধের জন্য আরও সময় চেয়ে কমিশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। একইভাবে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে। অন্যদিকে হঠাৎ করেই কয়েকদিনের ব্যবধানে গ্রাহকদের অপারেটর বদলের যে ঘোষণা বিটিআরসি দিয়েছে তার প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সিটিসেল গ্রাহক এসোসিয়েশেন ও মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠন দুটি’র পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় গ্রাহকদের কথা বিবেচনা না করে কমিশন হঠাৎ করে সিটিসেল বন্ধ করে দিতে পারে কিনা? কারণ প্রতিটি গ্রাহক এ অপারেটরের পিছনে বিনিয়োগ করেছে (হ্যান্ডসেট, রিম এবং মোডেম)। এগুলো অন্য কোন অপারেটর ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। অন্য অপারেটরে গেলে প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার গ্রাহক বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই অর্থ কে পরিশোধ করবে তা বিটিআরসিকে ঘোষণা প্রদান করতে হবে। বর্তমান নিবন্ধিত গ্রাহদের হিসাব অনুযায়ী এই ক্ষতির পরিমাণ ১৪২ কোটি টাকা। এছাড়া মডেম ব্যবহারকারীর ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি ও সামাজিব সুরক্ষা তহবিলের টাকা ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ক্ষতির ১৮০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বিটিসিএল ও টেলিটকের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মুঠোফোন এসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, বিটিসিএল ও টেলিটক ভয়েস ক্যারিয়ার, আইজিডবিøউ, আইসিএক্স, আইআইজি, পিএসটিএন, আইএসটি, এনবিবিএন এর মতো ৭ টি লাইসেন্স রয়েছে যা কিনা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তারপরও বিটিআরসি এই সরকারী দুই প্রতিষ্ঠানের নিকট পাওনা ৩ হাজার ২ শত কোটি টাকা পাওনা। তারপরও তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এতে করে সরকার দ্বৈতনীতির অবস্থান নিয়েছে। এরইমাঝে কমিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছিলেন, সিটিসেলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে মন্ত্রণালয়। বিটিআরসির ঘোষণার পর সিটিসেল কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কল করে ও এসএমএসের মাধ্যমে জানায়, ‘সিটিসেল চালু আছে, থাকবে’। সিটিসেল বন্ধের প্রশ্নে তারানা হালিম বলেন, এ বিষয়ে একটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। কারণ আমাদের দেখতে হবে কত বকেয়া আছে, দেখতে হবে বকেয়া ছাড়াও আর কোন কোন নিয়ম লঙ্ঘন হয়েছে, সেই বিষয়গুলো বিটিআরসির সাথে বসে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করব। তারপরই আমরা এক থেকে দুই মাস গ্রাহকদের সময় দেব অপারেটর পরিবর্তনের জন্য। আগামী ১৭ অগাস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি ও সিটিসেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে। বিটিআরসির চিঠির সিদ্ধান্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইফেকটিভ হওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা ঠিক আমি যদি জানতাম অপারেটর বদলের জন্য বিটিআরসি চিঠি দেবে, একটুখানি স্থগিত রাখতে বলতাম, আসলে বন্ধের সিদ্ধান্তটি আগে আসতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এখনই বন্ধ হচ্ছে না সিটিসেল মন্ত্রীকে না জানিয়েই বিটিআরসি’র চিঠি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ