পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রায়হান হত্যার নায়ক এস আই আকবর। তার গ্রেফতারের দাবীতে একাট্টা সিলেটসহ পুরো দেশ ও সাইবার দুনিয়ার বদৌলতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা বাংলাদেশীরাও। রায়হানের পরিবারের দেয়া ৭২ ঘণ্টার গ্রেফতার আল্টিমেটাম শেষ গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায়। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে মার্কিন মল্লুকে বসবাসকারী এক প্রবাসী বাংলাদেশী। রাজপথে একই দাবিতে আন্দোলনমুখর প্রতিবাদী সর্বস্তরের মানুষ। এমনকি আকবরকে পালাতে সহায়তাকারীদের শনাক্তে ৩ সদস্যের কমিটিও গঠন করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খরব রটেছে সিলেট তথা দুনিয়াজুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তার গ্রেফতার খবর। একাধিক গণমাধ্যমে একই খবর। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র গ্রেফতার তথ্য নিশ্চিত করেনি।
এদিকে, সিলেট বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশি হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তকৃত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের এসপি খালেদুজ্জামানে। এর গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তাকে হাজির করা হয় সিলেট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। সেখানে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম। শুনানী শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমান। এছাড়া, বিদেশে পালালেও আকবরকে গ্রেফতারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। অপরদিকে, গতকাল সকালে এমসি কলেজ ছাত্রবাসে ধর্ষণ ও রায়হান নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে এবং এস আই আকবরসহ অপরাধীদের দ্রæত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে নগরীতে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা।
আকবর গ্রেফতার স্বীকার করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ : রায়হান হত্যা ঘটনার অন্যতম হোতা আকবর গ্রেফতার এখন জনমানুষের প্রত্যাশীত দাবি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে গত রোববার দুপুর ১২টায় ঘোষিত ৬ দাবির অন্যতম ছিল আকবর গ্রেফতার ইস্যু। এমনকি ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটামও প্রদান করেছিল তার পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটামের যবনিকাপাত ঘটে। এছাড়া আকবরকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সিলেট প্রবাসী সামাদ খাঁন। এর মধ্যে গতকাল দুপুরে ছড়িয়ে পড়ে গ্রেফতার করা হয়েছে আকবরকে। এতে স্বস্তি দেখা দিয়েছিল জনমনে।
কিন্তু খবরের সত্যতা স্বীকার করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে একাধিক সূত্র মতে, গ্রেফতারের বিষয়টি সত্য, কিন্তু কৌশলগত কারণে স্বীকার করছে না সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে আকবর পাড়ি দিয়েছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। তারপর পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পনের চাপ পড়ে তার উপর। পরিবারের ভবিষ্যত চিন্তা করেই ভারত থেকে দেশে গোপনে ফিরে আসেন আকবর। এরপর হবিগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানিয়েছে। এ বিষয়ে পিবিআই সিলেটের এসপি খালেকুজ্জামান বলেন, আকবর গ্রেফতারের বিষয় তিনি কিছু জানেন না। তার কাছে এরকম তথ্যও নেই। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে খবরটি জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন এসপি খালেকুজ্জামান।
হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (পিবিআই) মুহিদুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থা আকবরকে গ্রেফতার করলে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে বিষয়টি জানার কথা তার। কিন্তু এখন (মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা) পর্যন্ত আকবর গ্রেফতারের বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।
আকবর পালাতে সহায়তাকারীদের শনাক্তে ৩ সদস্যের কমিটির কাজ আজ শুরু : বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়াকে পালাতে সহায়তাকারীদের শনাক্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। আজ (বুধবার) থেকে এ কমিটি কাজ শুরু করবে। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ডিএন্ডপিএস-১) রেজাউল হক স্বাক্ষরিত এক আদেশে ৩ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের আইজি (ক্রাইম অ্যানালাইসিস) মোহাম্মদ আয়ুবকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম, এস এমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মুনাদির ইসলাম চৌধুরী। তাদেরকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা একটি জানিয়েছেন, আকবরের পলাতক হওয়ার সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের দায় আছে কিনা তা এই কমিটি তদন্ত করবে। আজ বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কমিটির কাজ শুরু করার কথা।
বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্যকে ৫দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই : রায়হান হত্যা ঘটনায় বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরাখাস্তকৃত ৪ পুলিশ সদস্যের একজন কনেস্টবল টিটু চন্দ্র দাস। আকবর পালালেও বরখাস্ত ও প্রত্যাহারকৃত বাকী ৬ জন ছিল পুলিশের নজরদারীতে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রায়হান হত্যা মামলায় টিটুকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরপর বেলা ৩টায় তাকে হাজির করা হয় সিলেট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। তারপর আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম। শুনানী শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমান। বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের বেঞ্চ সহকারী আইয়ুব আলী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানী শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক।
আকবরকে গ্রেফতারের নিশ্চিয়তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের : গতকাল মঙ্গলবার নিহত রায়হানের পরিবারকে সমবেদনা প্রদানে উপস্থিত হন সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় এস আই আকবর দেশেই আছে। সে যেন বিদেশে পালাতে না পারে, সেজন্য সব সীমান্তে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। আমরা শিশু রাজনের খুনিকে সৌদি আরব থেকে ধরে এনেছিলাম। বিদেশে পালালেও গ্রেফতার করা হবে আকবরকে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত রায়হানের মাকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমার সাথে কথা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সাহেবের। আপনার ছেলের হত্যার বিচারে কাজ করছে পুলিশ-র্যাব সবাই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন আপনার ছেলে হত্যার বিচার হবে।
গতকাল এক সফরে ঢাকা থেকে বিমানের একটি ফ্লাইটে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে দুপুর সাড়ে ১২ টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেই প্রথমেই রায়হানের বাড়ির দিকে রওনা হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় নিহত রায়হানের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির খানসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিদ্রোহের হুঁশিয়ারী ব্যবসায়ীদের : এমসি কলেজ ছাত্রবাসে গণধর্ষণ ও বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যার প্রতিবাদ এ ঘটনার প্রধান হোতা এস আই আকবরসহ অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে সিলেটে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দোকানপাট বন্ধ করে কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা। জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে সকল মার্কেট কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা এ বিক্ষোভে যোগ দেন। এক পর্যায়ে পুরো কোর্ট পয়েন্ট জুড়ে নামে জনতার ঢল। বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে থেকে শুরু করে পুরো কোর্ট পয়েন্টে বিক্ষোভ করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের একটাই দাবি ছিল, ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটামের ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কেন এসআই আকবরসহ অন্য অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পুলিশি নির্মম নির্যাতনে নিহতের ঘটনা সিলেটে কখনো আর ঘটেনি। এ ঘটনা কলঙ্কিত করেছে সিলেটকে। বাকী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আকবরসহ অপরাধীদের গ্রেফতার করা হলে পুরো সিলেট বিদ্রোহ দেখা দিবে। হরতাল, অবরোধসহ যেকোন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকবেন সিলেটবাসী। তাই অবিলম্বে আল্টিমেটামের সময় বেঁধে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আকবরসহ অপরাধীদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানান তারা। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় বক্তারা তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করে বলেন, অপরাধীদের জনসম্মুখে ফাঁসি দেয়া হোক। পাশাপাশি তাদের গডফাদারদেন আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। এদিকে, রায়হান হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের মানববন্ধন থেকে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ঢিল ছোঁড়ারও ঘটনা ঘটেছে। বেলা সোয়া ১১ টার দিকে সিলেট কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিয়া জানান, গাড়িটি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরীর বাসা থেকে আদালতে যাচ্ছিলেন বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকালে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে নির্ধারিত একটি মানববন্ধন ছিলো। এর পাশ দিয়ে পুলিশের একটি পিকআপ অতিক্রমকালে মানববন্ধনে অংশ নেয়া একাংশ এগিয়ে গিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। এদের মধ্য থেকে কয়েকজন গাড়িটিতে কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন গাড়িটি লক্ষ্য করে ছুঁড়তে থাকেন ঢিলও। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী নেতাদের সহযোগিতায় ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হস্তক্ষেপে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে গাড়িটি। তবে এ সময় অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিয়া বলেন, ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জড়িতদের বিরুদ্ধে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।