বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হওয়া অনেককেই বিস্মিত করেছে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে পরিগণিত। তাকে সর্বাধিক সুরক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়। তার দৈহিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তা সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। এজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কত লোক যে নিয়োজিত, তার তালিকা করা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। তিনি যাতে সুস্থ থাকেন এবং কোনো রোগব্যাধি তাকে স্পর্শ করতে না পারে, সে জন্য সেরা ডাক্তার-চিকিৎসাবিদ সর্বক্ষণ নিয়োজিত আছেন। তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রিত। সেই তিনি স্ত্রীসহ করোনায় আক্রান্ত হলেন, এটা তো বিস্ময় জাগাতেই পারে।
একটা কথা আমাদের দেশে প্রচলিত হয়েছে: করোনা কাউকে করুণা করে না। কথাটি অন্য অনেকের মতো ডোলান্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছে। শুধু তিনিই নন, ইতোমধ্যে ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন, গুয়েতামালার প্রেসিডেন্ট আলেহান্দ্রো জিয়াস্মাতি, বলিভিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জিনাইন আইনেজ, হন্ডুরাসের প্রেসিন্ডেন্ট হুয়ান ওরলান্দো, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সুখ্যাত, সম্মানীয় ও প্রভাবশালী অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গেছেন কেউ কেউ। করোনা যে হেলাফেলা বা অবজ্ঞার বিষয় নয়, এটা প্রমাণিত। শুরুতে করোনা নিয়ে অনেকেই অবজ্ঞা করেছেন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। বিশ্বের তাবৎ চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গবেষক, বিশেষজ্ঞ যখন বলেছেন, এটা ভয়ঙ্কর এক ছোঁয়াচে ভাইরাস, এর স্পর্শ বা সংক্রমণে মৃত্যু অনেক ক্ষেত্রেই অবধারিত, তখন যারা এসব কথায় পাত্তা দেননি, তাদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যতম। তিনি করোনা নিয়ে মনগড়া মন্তব্য করে তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেছেন। পরস্পর দূরত্ব বজায় রাখা এমনকি মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করেননি। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে অহংও উদ্ধতভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। অবশেষে তার অহং ধুলায় মিশে গেছে। করোনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলে তাকে খাতির করেনি। তার আক্রান্ত হওয়াই কেবল নয়, করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে আছে। বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি, সবচেয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ করোনার মতো অদৃশ্য ভাইরাসে কয়েক মাস ধরে একটানা নাস্তানাবুদ, দিশেহারা। এর মধ্যে কী শিক্ষা রয়েছে, স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষের তা ভাবা উচিত।
পুরো বিশ্বে ইতোমধ্যে করোনায় লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এ মহামারি থেকে সহসা রেহাই মিলবে, এমনটা ধারণা করা যাচ্ছে না। এখনো এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। অনেকেই স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন, করোনা বিশ্ব মানবের জন্য একটা বড় রকমের বিপদ। এর জন্য মানুষই দায়ী। প্রকৃতির ওপর মানুষ যে অনাচার ও অবিচার করছে, এটা তারই ফল। মানুষের পাপ ও দুষ্কর্মের প্রতিফল হিসাবে এই প্রাণঘাতী বালা নেমে এসেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন: তোমাদের যে বিপদআপদ ঘটে, তা তো তোমাদের কৃতকর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন। সুরা শুরা: ৩০।
আল্লাহ বিপদাপদ ও বালা মুসিবত দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন: নিশ্চয় আমি তোমাদের (কাউকে) ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে আর (কাউকে) ধনে-প্রাণে বা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর যারা ধৈর্য ধরে, তুমি তাদের সুখবর দাও। সুরা বাকারা: ১৫৫। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন: আমি তোমাদের ভালো ও মন্দ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি। সূরা আম্বিয়া: ৩৫।
মানুষ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, প্রভাব, অর্থ ও বিত্তের বড়াই করে, নিজেকে অপ্রতিরোধ্য পরাক্রমশীল বলে মনে করে। ধরাকে সরাজ্ঞান করে। অথচ সে যে কত অসহায়, দুর্বল ও নিরালম্ব, তা বুঝা যায় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস, ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, দাবানল ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও বিভিন্ন রোগব্যাধি, মারি-মহামারিতে। আসলেই মানুষের গর্ব করার, অহংকার করার, ঔদ্ধত্য দেখানোর কিছু নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।