যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
কোচ হিসেবে গার্দিওলার অর্জন
বার্সেলোনা (২০০৮-২০১২)
লা লিগা : ৩টি
কোপা দেল রে : ২টি
স্প্যানিশ সুপার কাপ : ৩টি
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : ২টি
উয়েফা সুপার কাপ : ২টি
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ : ২টি
বায়ার্ন মিউনিখ (২০১৩- )
বুন্দেসলিগা : ২টি
ডিএফবি পোকাল : ১টি
উয়েফা সুপার কাপ : ১টি
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ : ১টি
ইমামুল হাবীব বাপ্পি
বর্তমানে ফুটবলের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত কোচ তিনি। ফুটবল মাঠে নেপথ্যের এই নায়কের অর্জনগুলোই তার তাকে এই পদে অসীন করেছে। অনেকে হয়তো দ্বিমত পোষণ করে বলবেনÑযে বার্সেলোনার হাত ধরে তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু সেই দলটি ছিল জাভি-ইনিয়েস্তা-মেসি-পুয়েলদের নিয়ে গড়া সময়ের সেরা একটা দল। অনেকের মতে সর্বকালের সেরাও। যে কোন কোচই এমন দল নিয়ে সফলতার চুড়োয় পৌঁছাতে পারত। তা সত্ত্বেও কাতালান দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। এরপর এক বছরের বিরতি। এরপর জার্মানির যে দলটির দায়িত্ব নিলেন সেখানেও যোগ্যতার বিচারে সেই দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী করার মত কোন দলই নেই। অথচ বার বার তিনি বলে এসেছেনÑচ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন তিনি। তাহলে এজন্যই কি এত সফলতার পরেও দুই দফায় দলের দায়িত্ব ছেড়ে নতুন ঠিকানায় নাম লেখাচ্ছেন পেপ গার্দিওলা? হ্যাঁ, বার্সার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলাকে নিয়েই আজকের খোঁশ গল্প।
পরিচয়ে বায়ার্ন কোচ না বলে বার্সার নামটাই চলে আসল। গার্দিওলার প্রসঙ্গ আসলেই কেন জানি বার্সেলোনার নামটা চলে আসে। ব্যপারটা এখনো এমন যেÑ গার্দিওলা মানেই যেন বার্সেলোনা। কোচ হিসেবে তাকে সফলতার চূড়োয় ওঠা তো বার্সার হাত ধরেই। অথচ তিনি বার্সা ছেড়েছেন সেই চার বছর আগে। সেই সময়ই তার সিটিতে যোগ দেওয়া নিয়ে ছিল জোর গুঞ্জন। কিন্তু এক বছর জম্ফেস ছুটি কাটিয়ে যোগ দিলেন বায়ার্ন মিউনিখে। তাতে অবশ্য পুরনো ধারে জং পড়েনি। দুই মৌসুমেই বায়ার্নকে জেতান লিগ শিরোপা। এছাড়া উয়েফা সুপার কাপ এবং প্রথমবারের মত জার্মানির দলকে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপায় চুমু এঁকে দেওয়ার ইতিহাসটাও তো গার্দিওলার হাত ধরেই। অবশ্য উইরোপ শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনায় গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্সলিগ ট্রফি, যার স্বাদ তিনি জার্মান চ্যাম্পিয়নদের দিতে পারেননি। গেল বার সেমিফাইনালে তার সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার কাছেই থামতে হয় তার দলকে। তবে চলতি মৌসুমে সেই অক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ থাকছে গার্দিওলার সামনে।
এ তো গেল বায়ার্নের গার্দিওলার গল্প। কিন্তু কোচিং ক্যারিয়ারে তার অর্জনের কথা উঠলেই এসে যায় বার্সেলোনার নাম। বার্সেলোনায় তার ইতিহাসটা এমন যেÑ ‘এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম’ ধরনের। অথচ তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু ‘খেলোয়াড় গার্দিওলার’ সাবেক এই ক্লাবের হাত ধরেই। তখন ২০০৮ সাল। এরপর একে একে কাটিয়েছেন চারটি বছর। ওই সময়টা গার্দিওলা স্বপ্নের মত পার করেছেন বলা যায়। চার বছরে তার অর্জনের তালিকায় ২টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা, ৩টি লিগ শিরোপাসহ মোট শিরোপা সংখ্যা ১৪টি। ভাবা যায়! এছাড়া এক মৌসুমে একটা দলের হয়ে সম্ভব্য সব ক’টি (৬টি) শিরোপা জয়ের একমাত্র রেকর্ডও তার দখলে। সেটাও বার্সার হাত ধরেই।
চলতি মৌসুমেই শেষ হবে বায়ার্নের সাথে তার তিন বছরের চুক্তির মেয়াদ। চুক্তি নবায়ন না করে যখন তিনি ইংল্যান্ড আসার ঘোষনা দিয়েছিলেন তখনই চাউর হয়েছিলÑ তার পরবর্তি গন্তব্য হতে যাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি। সেই গুঞ্জনটাই অবশেষে সত্যি হল। আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে সিটিতেই আসছেন তিনি। ঘোষণাটা এসেছে দু’পক্ষ থেকেই। ম্যানচেস্টার সিটি তাদের ওয়েব পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পরবর্তিতে সংবাদ সম্মেলনেও আসে একই ঘোষণা। চলতি মৌসুমেই সিটির সাথে চুক্তি শেষ হচ্ছে দলের বর্তমান কোচ ম্যানুয়েল পেল্লিগ্রিনির। তার জাগায় ইতিহাদের দায়িত্বে আসছেন পেপ গার্দিওলা। সম্ভবত সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে সেখানে তার কর্মপরিকল্পনার সাথে ক্লাব কর্তারা একমত হওয়ার পরেই রাজি হয়েছেন পেপ। ইংল্যান্ডে তার ‘মেগা কর্মপরিকল্পনা’র অংশ হিসেবে বেশ কিছু ঘোষনাও দিয়ে রেখেছেন তিনি।
কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিটিতে তার কোচিং স্টাফদেরও নিয়ে আসতে চান গার্দিওলা। এছাড়া দল গঠনের জন্য জুভেন্টাস তারকা পল পগবা ও এভারটনের তরুণ ডিফেন্ডার জন স্টোনকে পাওয়ার জন্য ১৩০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণাও দেন ৪৫ বছর বয়সি স্প্যানিশ। কিন্তু ৮০ মিলিয়ন ডলারের পগবাকে পেতে অবশ্য রিতিমত যুদ্ধে নামতে হবে তাকে। ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারের দিকে নজর রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও চেলসির মত ক্লাবেরও। তবে পগবাকে পান আর না পান কোচের সাথে অভাবিত কিছু খেলোয়াড় সিটিতে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গার্দিওলার কোচিং স্টাফরা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেনÑ ‘আপনি যদি এখন সিটির ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে কিছু গ্রেট খেলোয়াড়দের স্বপ্ন দেখতে পারেন। গার্দিওলা এমনই একজন কোচ যার কাছে যে কোন খেলোয়াড়ই দীক্ষা নিতে চাইবে। সম্ভবত মেসি বাদে।’ সেই তালিকায় রোনালদো, নেইমারের মত তারকার যোগদানও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে খেলাটাও যখন অর্থের লড়াই। কোচের সাথে দলে খেলোয়াড় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দল থেকে খেলোয়াড় ছাঁটাইয়ের সম্ভবনাও এড়ানো যাচ্ছে না। গার্দিওলা যখন বার্সায় ছিলেন সে সময় দলের আইভোরিয়ান তারকা ইয়াইয়া তোরেকে ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল। সেই তোরে এখন সিটিতে। তোরের ভাগ্যে এমতাবস্থায় কি আছে সেটা জানিয়েছেন তার এজেন্ট। তার মতে, আসছে মৌসুমে সিটিতে থাকা হচ্ছে না তোরের। একই সাথে গুঞ্জন উঠেছে সিটির গোলরক্ষক জো হার্টকে নিয়েও।
ইংল্যান্ডে কোচ গার্দিওলাকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। বার্সা কোচ লুইস এনরিকে ‘সিটিতে গার্দিওলার জন্য সাফল্য মন্ডিত একটা সময় অপেক্ষা করছে’ বলেই মনে করেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ লুইস ভন গাল তো বেশ উচ্ছাসিত তাকে পেয়েÑ ‘বার্সেলোনায় আমার দলে অধিনায়ক ছিল সে। এখন তাকে এখানে পেয়ে বেশ ভালেই লাগবে। এছাড়া স্প্যানিশটা আমারো জানা আছে, যোগাযোগে একটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।’ তবে এটাও ঠিক ইউরোপের অন্যান্য লিগের মত ইংলিশ লিগে একক অধিপত্য করার মত কোন দল নেই। সমশক্তির একাধিক প্রতিপক্ষের সাথে লড়তে হয়। চ্যালেঞ্জটা তাই এখানে বেশ কঠিন। গার্দিওলাও নিশ্চয় জানেন সেটা। আর এই চ্যালেঞ্জটা উপভোগ করার জন্যেই তো তিনি আসছেন ইংল্যান্ডে।
ওদিকে সিটিতে বিদায়ী কোচ পেল্লিগ্রিনিকে কিন্তু ব্যর্থ বলা যাবে না। ইতিহাস বলছেÑ সিটির সফলতম কোচ এই চিলিয়ানই। ২০১৩ সালে দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার করে প্রিমিয়ার লিগ ও লিগ কাপ জেতান দলকে। প্রিমিয়ার লিগে জয় পরাজয়ের বিবেচনায় তার (৬৫.০%) ওপরে আছেন কেবল হোসে মরিনহো (৬৬%) ও অ্যালেক্স ফার্গুসন (৬৫.২%)। সব প্রতিযোগিতা মিলে ৬৩.৯% জয়। সিটির কোচ হিসেবে সাবেক যে কোন কোচের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে ৬২ বছর এই বয়সি চিলিয়ানকে। তা সত্ত্বেও দলে পরিবর্তনের কারণ লিগে হোঁচট খেয়ে পথ চলা। কিন্তু লিগের রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যায় করা সিটির কর্তারা তা মানবেন কেন। তাদের চাই শিরোপা। অবশ্য মৌসুমে চারটি শিরোপার দৌঁড়ে এখনো বেশ ভালোভাবেই আছে ম্যানসিটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলয় পৌঁচেছে এক ম্যাচ হাতে রেখেই। লিগের দৌড়ে শীর্ষে থাকা লেস্টারের চেয়ে ৩ পয়েন্ট কম নিয়ে আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এছাড়া ক্যাপিটাল ওয়ান কাপের ফাইনালের পর এফএ কাপের কাপের শেষ ষোলয় পা রেখেছে আকাশি নীল খ্যাত দলটি।
এমন বিদায়ে পেল্লেগ্রিনি কি একটু ব্যাথিত? হয়তোবা। তবে তার কথাতে কিন্তু সেটা ধরা পড়ল না। বিষয়টা তো এমন না যে ক্লাব তাকে ছাঁটায় করছে। চুক্তি মেয়াদ শেষ, নতুনভাবে চুক্তি হচ্ছে না এই যা। তবে এটা ঠিক দলে থাকার একটা ইচ্ছা তার মধ্যে ছিল। গণমাধ্যমকে বিদায়ী বলেনÑ ‘ক্লাব আমাকে না জানিয়ে কিছুই করিনি। এক মাস আগেই আমি এটা জানতাম। আমি মনে করি না এটা নিয়ে লুকোচুরি করলে ফল ভালো হত। তাই আমি খেলোয়াড় ও গণমাধ্যমকে এটা জানিয়েছি।’
সিটির সাথে গার্দিওলার চুক্তিটা তিন বছরের। সেখানে প্রতি সপ্তাহে তার সম্মাননী কত জানেন? ৩ লাখ ডলার! ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অধিনায়ক ওয়েন রুনির চেয়েও ৪০ হাজার ডলার বেশি। প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় রুনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।