পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এখনও হদিস মিলেনি রায়হান হত্যার অন্যতম হোতা এস আই আকবেরর। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসহ সীমান্তে রাখা হয়েছে সতর্কতা। তবু লাপাত্তা সে। তার পালানোর কারণে ক্ষোভে ফুঁসছে সিলেটবাসী। এ নিয়ে কেবল বাড়ছে সন্দেহ, অবিশ্বাস। সিলেটের আপামর মানুষের একটাই প্রত্যাশা আকবর গ্রেফতারের খবর। কিন্তু সেই খবর নেই কোথাও। আকবরের কারণে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ইমেজও প্রশ্নবিদ্ধ। সবার মুখে একই সুর আকবর এখন কোথায়?
রায়হান হত্যা ঘটনার প্রথম পর্যায়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছিল সে আত্মহত্যা করে ফেলবে। কিন্তু সেই কর্মকর্তা এ পাপ কাজের বাসনা থেকে নিবৃত্ত করেন তাকে। তারপরই ভিন্ন পথে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় আকবরকে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট মেট্রো পুলিশে আকবরের নিজ জেলার রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারাই ছড়ি ঘোরান মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরতদের ওপর। তাদের ইশারায় ভাগ্য নির্ধারিত হয় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের। পুলিশের ভেতরেই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ চক্রের প্রভাবে আকবর ছিলেন বেপরোয়া, এখন হয়েছেন আপাতত লাপাত্তা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পুলিশের হেফাজত থেকে পুলিশ সদস্যের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নাটকের একটি অংশ। এ ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পক্ষপাতিত্ব আচরণ করেছেন পুলিশেরই সাথে। বরখাস্ত ও প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনে নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হলেও এস আই আকবরকে তারাই পালাতে সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা পুলিশের ব্যর্থতা ও উদাসিনতার পরিচয়। এদিকে রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতীকি কফিন নিয়ে শহীদ মিনারে পালন করা হয়েছে এক কর্মসূচি। নগরীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। এছাড়াও আজ রোববার দুপুরে রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
এখনও অধরা এস আই আকবর : অবিশ্বাস্যভাবে পালিয়ে আছে রায়হান হত্যা ঘটনার অন্যতম হোতা এস আই আকবর। তাকে গ্রেফতারে সীমান্তে সতর্কতাসহ দেশত্যাগে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তবুও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। এ নিয়ে ধূম্রজালেরও শেষ নেই। কেউ বলছেন, তিনি পুলিশের হাতের মুঠোয় আছেন। আবার পুলিশের কর্মকর্তারাও বলছেন, নাগালের বাইরে আকবর। মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঘটনার পর থেকেই আকবর পলাতক রয়েছে। তবে বাকী বরখাস্ত ও প্রত্যাহারকৃত সদস্যরা পুলিশ লাইন্সে পাহারায় রয়েছেন।
মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, হত্যা মামলাটির পুরো বিষয় তদন্ত করছে পিবিআই। আর তাদেরকে সহযোগিতা করছে পুলিশ। এস আই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সম্ভাব্য কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে এস আই আকবর যেন দেশ ছাড়তে না পারে সেজন্য পুলিশের নজরদারি রয়েছে।
নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পুলিশ যে আচরণ করেছে তা হতাশ করেছে আমাদেরকে। আমার ছেলের হত্যাকারী এস আই আকবরকে তারাই পালাতে কিংবা সরে যেতে বলেছে। এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও আকবরসহ খুনি পুলিশদের গ্রেফতার করেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত সোমবার বিকাল ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত আকবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতেই অবস্থান করছিলেন। তখন পর্যন্ত তাকে বেশ চিন্তিত দেখা গেছে। এরপরই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি। আকবর তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট এবং সরকারি সেট দুটোই ফাঁড়িতে রেখে হয়ে যান গায়েব। গা-ঢাকা দিয়ে কোথায় আছেন-সেই হদিস জানা নেই। এর আগে খুনের সব আলামত নষ্ট করে দেয় সে।
এদিকে, রায়হান হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যরা আইনের আওতায় না আসায় ক্ষোভ কমছে না সিলেটে। কেউ জানে না এ মামলার আসামি কারা। ঘটনার পরপরই কেন রায়হানকে আটকে রাখা হলো না- সে প্রশ্ন এখন আমজনতার। তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলার পর রায়হানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সিলেট মহানগর এলাকা ছেড়ে সে যেন বাইরে বের না হয়। এর পরও ঘটনার পর বন্দরবাজার সিসিটিভি ফুটেজ মুছে ও আলামত গায়েব করে পালায় এস আই আকবর হোসেন ভূঁইয়া।
কেবল বাড়ছে প্রতিবাদ কর্মসূচি : রায়হান হত্যার প্রতিবাদে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে সিলেটের ক্ষুব্ধ মানুষ। গতকাল বিকেলে ন্যাশনালিস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম রায়হান হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জিানিয়ে প্রতীকি ‘কফিন’ কর্মসূচি পালন করেছে নগরী শহীদ মিনারে। এছাড়া রায়হান হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিমের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে কামরান চত্বরে মানববন্ধন। এ সময় এস আই আকবরসহ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি একটি ভিআইপি এলাকা - যেখানে রয়েছে পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, সার্কিট হাউসসহ অসংখ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ পুলিশ ফাঁড়িতে বিতর্কিত দুর্নীতিবাজ কোন পুলিশ অফিসারকে যেন পদায়ন না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানানো হয়।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে জাতীয় পার্টি নগরীতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, কয়েক দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ খুনি আকবরকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যদি ২৪ ঘণ্টার ভিতরে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে জাতীয় পার্টিসহ সিলেটের জনসাধারণ কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন যেতে বাধ্য হবে। বেলা ২টায় জেলা জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রায়হান পরিবারের সংবাদ সম্মেলন আজ : হত্যা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আজ (রোববার) এক সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে পুলিশী নির্যাতনে নিহত রায়হানের পরিবার। দুপুর ১২টায় রায়হানের আখালিয়া নেহারী পাড়াস্থ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।