বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মেরাজ রজনীতে রসূলুল্লাহ (সা.) নানা শ্রেণির অপরাধীর করুণ পরিণতি বা শাস্তি প্রত্যক্ষ করেন, যার বিবরণ সীরাতগ্রন্থগুলোতে বিদ্যমান। এখানে আমরা উদাহরণ স্বরূপ ‘সুদখোর’ ও ‘ঠোঁটকাটা’ লোকদের কথা উল্লেখ করতে চাই, বাস্তব জীবনের সাথে যাদের ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। এ পাপীরা জাহান্নামে কিভাবে শাস্তি ভোগ করছে, তা শোনা কথা নয়, খোদ রসূলুল্লাহ (সা.) মেরাজে প্রত্যক্ষ করে তাঁর পবিত্র জবানীতে প্রকাশ করেছেন। ‘উম্মুল খাবায়েছ’ অর্থাৎ ‘সুদখোর’ সম্পর্কিত কিছু হাদীসের বাণী শোনা যাক।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘সুদখোর ধ্বংস প্রাপ্তদের মধ্যে পরিগণিত।’ (বোখারী মুসলিম) অর্থাৎ, রসূলুল্লাহ (সা.) কতগুলি বিষয়কে মানুষের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংসকারী ‘কবীরা গুণাহ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুদ তার মধ্যে অন্যতম।
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘সুদখোর ও সুদদাতা উভয়ের উপরই আল্লাহর অভিশাপ পতিত হোক।’ (মুসলিম, নাসায়ী)
হজরত সোমরা ইবনে জুন্দুব (রা.) রেওয়ায়েত করেছেন, হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন: ‘মেরাজ রজনীতে আমি দেখতে পেলাম যে, একটি রক্তের নদী প্রবাহিত হচ্ছে। তার মধ্যে জনৈক ব্যক্তি হাবুডুবু খাচ্ছে। লোকটি মাঝে মাঝে সাতরিয়ে তীরে আসার চেষ্টা করলে তীরে দন্ডায়মান এক ব্যক্তি তার প্রতি প্রস্তর নিক্ষেপ করে তাকে পুনরায় নদীর দিকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। তার এই অবস্থা দেখে আমি জিব্রাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এ কোন ব্যক্তি? জিবরাইল (আ.) বললেন, এ ব্যক্তি আপনার সুদখোর উম্মত।’ (বোখারী)
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হজরত (সা.) বলেছেন: ‘চার ব্যক্তিকে বেহেশতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, তারা হলো: (১) নিত্য মদ্যপায়ী, (২) সুদখোর, (৩) এতিমদের মাল আত্মসাৎকারী এবং (৪) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।’
হজরত আউফ ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন যে, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘কেয়ামতের দিন অজ্ঞান ব্যক্তির যেভাবে হাশর হবে, ঠিক তেমনি অবস্থায় সুদখোরের হাশর হবে। অর্থাৎ, সে পাগলের ন্যায় নীত হবে।’ (আহমদ)
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন: ‘এমন এক সময় আসবে যখন কোনো ব্যক্তিই সুদ হতে দূরে থাকতে পারবে না, যদি কেউ সুদ নাও নেয় তথাপি তার প্রভাব হতে কেউ মুক্ত থাকতে পারবে না। সকলের উপরই সুদের কিছু না কিছু প্রভাব পড়বেই।’ (আবু দাউদ)
হজরত আমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত মহানবী (সা.) বলেছেন, যে জাতির মধ্যে সুদের প্রচলন হবে, সঙ্গে সঙ্গেই সে জাতিকে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে হবে। যে জাতির মধ্যে ঘুষ বিস্তৃতি লাভ করবে, সে জাতি নৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। (আহমদ)
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘সুদখোর, সুদদাতা, সুদ সম্পর্কিত বিষয়ের লেখক ও সাক্ষী সকলেই সমান অপরাধী। আল্লাহ সকলের ওপর যেন অভিসম্পাত করেন।’ (মুসলিম)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘যখন কোনো অঞ্চলে সুদ খাওয়া ও জেনা (ব্যাভিচার) ব্যাপকভাবে চলতে থাকে, তখন সেই অঞ্চলের জন্য আল্লাহর গজব নাজেল হওয়া হালাল হয়ে যায়।’ (হাকেম)
হজরত ইবনে মাসুউদ (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘কেয়ামতের পূর্বে সুদ খাওয়া, মদ্য পান ও জেনা অধিক বৃদ্ধি পাবে।’ (তিবরানী)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।