বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে অসহ্য গা-জ্বলা ভ্যাপসা গরম অব্যাহত রয়েছে। দেশের সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গতকাল সোমবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে এমনটি জানায় আবহাওয়া বিভাগ। সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। বন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। 

মৌসুমি বায়ু দুর্বল ও নিম্নচাপের সক্রিয় প্রভাব, সেইসঙ্গে বাতাসে জলীয়বাষ্পের মাত্রা বেশি থাকায় তীব্র গরমের সাথে ঘামের কারণে কাহিল হয়ে যাচ্ছে মানুষ। আশ্বিন মাসের শেষদিকে শরৎ ঋতুর প্রায় বিদায়কালে স্বাভাবিক আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য পাল্টে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা, মংলা ও সৈয়দপুরে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেতুলিয়ায় ২২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ৩৩ ও সর্বনিম্ন ২৭.৭ ডিগ্রি সে.।
গতকাল দেশের বেশিরভাগ জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় রাঙ্গামাটিতে ৬৮ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৫৭ মি.মি., ফেনীতে ৩৩, যশোরে ২৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়। রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে তেমন উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি ধরনের অবস্থায় রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি এবং এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, পশ্চিম-মধ্য­­­ বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ আকারে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।