Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্থল নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে সরে যাচ্ছে

দেড় মাসে ৫ লঘুচাপ-নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে সরে গেল : উপকূলের নিম্নাঞ্চলে প্রবল জোয়ারের সতর্কতা : সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের কাছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ স্থল নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি স্থলভাগের উপর দিয়ে আরও পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে সরে যেতে পারে।

এ নিয়ে গত প্রায় দেড় মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট পাঁচটি লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ সক্রিয় না হয়ে দুর্বল হয়ে ভারতের উপকূল হয়ে স্থলভাগের দিকে সরে যায়। খরা-অনাবৃষ্টির এটি অন্যতম কারণ। পূর্ণিমা ও পশ্চিমা স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে ও ঝড়ো হাওয়ায় সাগর, উপকূল উত্তাল রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্ণিমা ও পশ্চিমা স্থল নিম্নচাপের দ্বিমুখী প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে এসেছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপ ও চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলসমূহ স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে জলোচ্ছ্বাসের আকারে এক থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে বলে আবহাওয়া সতর্কতায় বলা হয়েছে। সাগর উত্তাল-অশান্ত থাকায় সামুদ্রিক মাছ শিকার প্রায় বন্ধ রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে ঘাটে ও উপকূলভাগের দিকে ফিরে আসছে মাছ ধরার নৌযান ও ট্রলারসমূহ।

গেল আগস্ট মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট পর পর চারটি লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ সক্রিয় না হয়ে ভারতের স্থলভাগের দিকে ক্রমেই দুর্বল হয়ে সরে যায়। এরফলে আগস্টে (শ্রাবণ-ভাদ্র) সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৩৬.৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত অর্থাৎ অনাবৃষ্টি পরিস্থিতি বিরাজ করে। এর আগের জুলাই মাসেও স্বাভাবিকের তুলনায় সারা দেশে গড়ে ৫৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়। যা ভরা বর্ষা মৌসুমে দেশে ৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খরা-অনাবৃষ্টির রেকর্ড। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানায়। গতকালও বঙ্গোপসাগরে আরেকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে না হতেই এটি আগের মতো দুর্বল স্থল নিম্নচাপ আকারে ভারতের স্থলভাগের দিকে সরে যাচ্ছে।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পূর্ণিমা, সাগরে সৃষ্ট পশ্চিমা স্থল নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বেশিরভাগ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও হচ্ছে ভারী বর্ষণ। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে নেত্রকোণায় ৯৮ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৩৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩২.৫ এবং সর্বনিম্ন ২৬.৬ ডিগ্রি সে.।

আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।

গতকাল রাতে সর্বশেষ অবহাওয়া সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, দক্ষিণ ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের কাছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ স্থল নিম্নচাপটি আরও দক্ষিণ, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি স্থলভাগের উপর দিয়ে আরও পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে সরে যেতে পারে।

স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে ২ ফুট অধিক উঁচু বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্থল নিম্নচাপ দুর্বল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ