Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারী গোলাবর্ষণে কারাবাখে যুদ্ধবিরতির আশা ভঙ্গ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১১ পিএম | আপডেট : ৬:১২ পিএম, ১২ অক্টোবর, ২০২০

দু’সপ্তাহ ভয়াবহ সংঘর্ষের পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের যুদ্ধবিরতি সম্ভাবনা ভেস্তে গিয়েছে। উত্তেজনা বাড়িয়ে রোববার দুই দেশের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়েছে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা ও বেসামরিক অঞ্চলে বোমা বর্ষনের অভিযোগ এনেছে।

আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জায় আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনী রাতভর গোলাবর্ষণ করেছে। এতে কমপক্ষে ৭ জন নিহত এবং শিশুসহ ৩৩ জন আহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তারা নতুন করে হামলা শুরু করে।

শহরটিতে কর্মরত বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক সাংবাদিক জানিয়েছে, লাল হেলমেট পরিহিত উদ্ধারকারীরা জীবিতদের সন্ধান ও উদ্ধার করতে খালি হাতেই ধ্বংসাবশেষের গাদা খুঁড়েছিলেন। তারা প্রায় নগ্ন একটি দেহ উদ্ধার করে এবং একটি একটি সাদা ব্যাগে করে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যায়। সেখানকার আতঙ্কিত বাসিন্দারা এই দৃশ্য দেখে আহাজারি করছিলেন।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন যে, রোববার ভোরে তারা একটি বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে জেগে ওঠেন। তারা দেখেন একটি দোতলা বাড়ি পুরো সমতল হয়ে গেছে। নয়টি অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দা ৬৮ বছর বয়সী জগিত আলিয়েভ বলেন, ‘আমি আমার জীবনের জন্য যা কিছু করেছি তা সব ধ্বংস হয়ে গেছে।’

শনিবার মস্কোয় আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। আপাতত যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে দুই দেশই আটক যুদ্ধাপরাধীদের হস্তান্তর করবে বলে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাস্তবে তার প্রভাব দেখা যায়নি। রোববারেও একই ভাবে যুদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ। মাঠে চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে। দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের। নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য। হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরো বাড়ছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রোববার ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বরেল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের যে রিপোর্ট আমাদের কাছে আসছে, তা অত্যন্ত চিন্তার এবং উদ্বেগের। দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। ইইউ সবরকম চেষ্টা করছে।’ বস্তুত যুদ্ধ বন্ধের জন্য রোববার জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। দুইজনের মধ্যে দীর্ঘ কথা হয়েছে। তবে কোনো দেশই সরকারি ভাবে আলোচনার খুঁটিনাটি জানায়নি।

জার্মানি প্রথম দিন থেকেই যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানাচ্ছে। ইইউ-তে এ বিষয়ে প্রস্তাবও পেশ করেছে জার্মানি। অন্য দিকে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকা লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুই দেশকে ফের একবার আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার। শনিবার যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তা যাতে দ্রুত বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়, তার চেষ্টা চালানে হচ্ছে।

যুদ্ধ না থামলে বন্দি হস্তান্তর সম্ভব নয় বলেও দুই দেশ জানিয়ে দিয়েছে। এ দিকে যুদ্ধের ফলে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছেন বলে অধিকাররক্ষা সংস্থাগুলি জানিয়েছে। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখনো পর্যন্ত একশরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে এই ক্ষতি পূরণ করা হবে, তা নিয়েও উদ্বেগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। সূত্র: ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ