Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আষাঢ়ি কাঁঠালে জ্যৈষ্ঠের স্বাদ

প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে

দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রাক ভর্তি কাঁঠাল আসছে কুমিল্লায়। মধুমাস জ্যৈষ্ঠ পার হয়ে আষাঢ় গেছে, শ্রাবণও যাই যাই করছে। অথচ বাজারে এখনো মিলছে জ্যৈষ্ঠের ফল কাঁঠাল। উদ্ভিদবিদগণ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কয়েক বছর ধরে জ্যৈষ্ঠের ফল আষাঢ়-শ্রাবণেও পাওয়া যাচ্ছে। পঞ্চগড়, রাজশাহী, যশোর, দিনাজপুর থেকে এখনো ট্রাক ভর্তি কাঁঠাল কুমিল্লায় আসছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার মাধাইয়া ও ইলিয়টগঞ্জ বাজারে প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে নামছে কাঁঠাল। আর এসব কাঁঠাল কুমিল্লার শহর, গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি হচ্ছে। আষাঢ়ি কাঁঠাল নামে পরিচিতি পাওয়া জ্যৈষ্ঠের এ ফলের স্বাদ ভরা বর্ষায় নিতে ভুল করছেন না কুমিল্লার ফলপ্রেমিরা। পাকা কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে এখনো মাতোয়ারা কুমিল্লার প্রতিটি বাজার, পথ-ঘাট। গ্রীষ্মকালীন এ ফলটির আধিক্য বর্ষা মৌসুমের শেষপ্রান্তে এসেও শেষ হচ্ছে না। দাম কম থাকায় চাহিদা রয়েছে বেশি। কাঁঠালের পুষ্টিগুণ কমবেশি সবারই জানা। কাঁঠালের হলুদ রংয়ের কোয়া ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। প্রতিদিন দুই তিন কোয়া কাঁঠাল খেলে তা সারাদিনের ভিটামিন এ’র চাহিদা পূরণ হয়। কাঁঠালে আছে বিপুল পরিমাণ খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ। যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। কেবল তাই নয়, কাঁঠালে থাকা ভিটামিন বি-৬ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মানব স্বাস্থ্যের জন্য পরম উপকারি ফল কাঁঠাল জ্যৈষ্ঠ পার হয়ে শ্রাবণেও মিলছে এ প্রাপ্তি কম কিসের। কুমিল্লা, ফেনি, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এলাকার কাঁঠাল এ অঞ্চলের মানুষ বৈশাখের শেষ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পুরোটাই পেয়েছে। তারপর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও পাচ্ছে কাঁঠাল। অনেকে এ কাঁঠালকে আষাঢ়ি কাঁঠাল বলে থাকেন। কুমিল্লার সর্বত্রই এ আষাঢ়ি কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ কাঁঠাল পাওয়া যাবে। স্বাদের দিক থেকে জ্যৈষ্ঠের কাঁঠালের চেয়ে কম নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার মাধাইয়া এলাকা এবং ইলিয়টগঞ্জ বাজারে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি কাঁঠাল আসছে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা জেলা থেকে। তারমধ্যে বেশি আসছে পঞ্চগড় থেকে। রাস্তার পাশে মজুদ করে রাখা হয় কাঁঠাল আর কাঁঠাল। ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের কাঁঠাল কেনা যাচ্ছে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০টাকার মধ্যে। মাধাইয়া ও ইলিয়টগঞ্জ বাজারে মজুদ হওয়া কাঁঠাল প্রতিদিনই পাইকাররা কিনে নিয়ে শহর গ্রাম গঞ্জের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। আবার ফল দোকানিদের কেউ কেউ পাইকারি দরেও এসব কাঁঠাল কিনে নিচ্ছেন। ব্যবসায়িরা ভোর থেকেই কাঁঠালের স্তুপ নিয়ে বসে থাকেন বিক্রির আশায়। মাধাইয়া নাওতলার কাঁঠাল ব্যবসায়ি কামাল জানান, ‘এখানে রাজশাহী ও পঞ্চগড়ের কাঁঠাল বেশি আসছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার পিস কাঁঠাল মজুদ হয়। ট্রাক ভাড়া লেবার খরচ বাদে মোটামুটি লাভে পাইকারি দরে কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন খুচরা দরেও এক দুইটা কিনে নেন।’ এদিকে বিক্রেতারা উত্তরাঞ্চল থেকে আসা কাঁঠালকে আষাঢ়ি কাঁঠাল বলেই উপাধি ছড়াচ্ছেন। ক্রেতারা আষাঢ় শ্রাবণ বোঝেন না তারা পুষ্টি গুণাগুণ আর স্বাদ আছে এমনটি ভেবেই কিনে নিচ্ছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের কাঁঠাল বাজারে মাস খানেক অবস্থান করলেও আষাঢ় মাসের কাঁঠাল পাওয়া যাচ্ছে শ্রাবণ মাসেও। মধু মাসের পর ক্রেতাদের কাছে এসব আষাঢ়ি কাঁঠালের কদরও কম নয়। প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আষাঢ়ি কাঁঠালের বেচাবিক্রি ঘিরে কুমিল্লার ব্যবসায়িদের বর্ষাকালটা বেশ ভালোই কাটে। সেই সাথে বর্ষায় ক্রেতাদের মুখেও স্বাদ যোগায় জাতীয় ফল কাঁঠালের হলুদ কোয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আষাঢ়ি কাঁঠালে জ্যৈষ্ঠের স্বাদ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ