Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জনবল সঙ্কটে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত

গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতাল

আবেদুর রহমান স্বপন, গাইবান্ধা থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত। হাসপাতালে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও সেখানে থাকতে চান না অনেকেই। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে তাদেরকে বিভিন্ন দিকে ছুটাছুটি করতে হয়। হাসপাতালে জনবল সঙ্কট চরমে। হাসপাতালেই নেই নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক। নার্স সঙ্কট তো আছেই, চিকিৎসা সরঞ্জামও অপ্রতুল। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নোংরা টয়লেটের দুর্গন্ধে অনেকে হাসপাতালে যেতেই চান না। হাসপাতালে নিয়মিত দালালদের দৌরাত্ম্য। এসব দালালদের খপ্পরে পরে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব যেন দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে বহিরাগত দালালরা ঢুকে গ্রাম থেকে আসা নিরহ রোগীদের কাছ থেকে পরীক্ষার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। যার ফলে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা মিলছে না। গাইবান্ধা মধ্য ধানঘড়ার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। এ সময় তিনি জানান, আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে আসছিলাম। কিন্তু বিভাগ খোলা থাকলেও কোনো চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি। পরে তিনি বেসরকারি ক্লিনিকে তার সন্তানের চিকিৎসা নেন।
দিন দিন হাসপাতালের শয্যা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে না জনবল ও জরুরি সরঞ্জাম। এ কারণে রোগীরা কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া টেকনিক্যাল পারসন সঙ্কট, নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যার কারণে ৭টি উপজেলায় রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত। গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালটি ২শ’ শয্যা হলেও ১শ’ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল থাকার কথা তাও নেই। ১শ’ শয্যা হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত মোট ১শ’ ৭৫টি পদের মধ্যে ১শ’ ২৯টি পদে জনবল রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসকের পদের মধ্যে ৪২টির স্থলে ২৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৩টি পদ শূণ্য রয়েছে। গাইবান্ধা যখন মহুকুমা ছিল সেই সময় ৫০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা মহুকুমা থেকে জেলায় উন্নতি হলে সেই জনবল নিয়ে ঢিলে ঢালাভাবে গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। তবে সরকার ১শ’ শয্যার পদ সৃষ্টি করলেও শয্যা হাসপাতালের জনবল দেয়া হয়নি। ১শ’ শয্যা হাসপাতালের যে জনবল থাকে সে হিসেব মতে বর্তমানে হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থাথেডিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি ও এমেজিং), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস), ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ২ জন, রেডিওলজিস্ট (মেডিক্যাল অফিসার), প্যাথলজিস্ট মেডিক্যাল অফিসার ও সহাকারী সার্জন ৩ জন মোট ১৯টি পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত ছুটি দেখিয়ে আবার অনুপস্থিত থাকেন। যার ফলে রোগীরা হাসপাতালে এসে ফিরে যায়। রোগী বা রোগীর লোকজন প্রতিকার পাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। এছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৩টি পদ শূণ্য রয়েছে। যার ফলে এই হাসপাতালে নুন্যতম চিকিৎসা পাওয়া যায় না। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগী এলেই রংপুর মেডিক্যালসহ বগুড়া ও ঢাকায় রেফার্ড করে দেয়া হয়। ২৩টি চিকিৎসকের পদ শূণ্য থাকায় মানসম্মত চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শহরসহ গ্রামগঞ্জ থেকে আসা গরীব ও অসহায় রোগীরা নানা সমস্যায় পড়ছেন।
গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নবিউর রহমান জানান, বর্তমানে এই হাসপাতালে কয়েকটি বিভাগে বিভিন্ন পদ শূণ্য থাকায় রোগীদের সার্বক্ষনিক সেবা দান কষ্ট হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে এক্সরে মেশিন ও ইসিজি মেশিন নষ্ট রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আধুনিক-হাসপাতাল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ