Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভণ্ডামি ও বহু হাত দিয়ে মোদির গণতন্ত্র দমন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২০, ৬:০৬ পিএম

গত বছর, ভারতের বরেণ্য গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রতাপ ভানু মেহতার মন্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ভারতের সর্বাধিক সমস্যসঙ্কুল এবং এর একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের উপরে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দেয়ায় তিনি প্রশংসা করার পরিবর্তে সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমাদের কাশ্মীরের ‘ভারতীয়করণ’ উৎসাহিত করা উচিত নয়, বরং ভারতের ক্রমবর্ধমান ‘কাশ্মীরীকরণ’কেই ভয় করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয়দের কী দেখাতে চাচ্ছেন সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত নয়। পাকিস্তানের দাবি করা এই অঞ্চলটির উপর হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কয়েক দশকের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে না। বরং তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত কাশ্মীরের অদেখা সমস্যার দিকে। যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম বৃহত্তম গণতন্ত্র তার সংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’

সরকারের প্রথম মেয়াদে, নরেন্দ্র মোদি প্রায়শই কাশ্মীরের বিষয়ে দ্বৈতভাব প্রতিফলিত করেছিলেন। তিনি বিভাজন রাজনীতির চর্চা করার সময় ঐক্যের কথা বলতে পারেন, বা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসার সময় বাজার মুক্ত করার কথা বলতেন বা মুখে কৃষকদের প্রকৃত নায়ক আখ্যা দিয়ে তাদের উপর ধনী ব্যবসায়ীদের শোষন করার পথ খুলে দিয়েছেন। এখন তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন যে, তিনি কেবল ‘দেবতা’দের মুখই রাখেননি, তাদের জন্য অতিরিক্ত ‘হাত’ হিসাবে কাজ করছেন।

অল্প কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মোদির সরকার কয়েকটি চিত্তাকর্ষক আইন প্রণয়ন করেছেন। কয়েক দশক ধরে রাজনৈতিক সঙ্কটে জড়িত ইস্যুগুলো মোকাবেলা করে, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে কৃষিকে মুক্ত করা, শ্রমের বিধিবিধানকে দমন করা, জনশিক্ষা সংশোধন এবং আমলাতন্ত্রকে সংস্কার করার মতো সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, শ্রম সম্পর্কিত নতুন বিধিগুলি ৪৪ টি আইনকে চারটি সরল জাতীয় কোডে ভেঙে দিয়েছে। পদক্ষেপগুলি বোধগম্যভাবে বিতর্কিত। তবে তার সমালোচকরাও স্বীকার করেছেন যে, আইনগুলোর মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ হোক আর না হোক, তিনি তার উদ্দেশ্য ঠিকই পূরণ করতে পেরেছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি যে প্রতিশ্রুতিগুলো রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে তা করে দেখিয়েছেন।

তবে এই সাফল্যে দিয়ে মোদি তার ব্যর্থতাগুলো পুরোপুরি আড়াল করতে পারেননি। তিনি যেমন এক হাত দিয়ে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে ফেলেন, অন্য হাতে তেমনি গণতন্ত্রকে পদানত করেছেন। তার সরকার বিরোধী দলের প্রতিবাদ সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অত্যন্ত সন্দেহজনক কন্ঠ-ভোটের ব্যবহার করে এক সপ্তাহের মধ্যে দুই ডজনেরও বেশি আইন কার্যকর করেছে। সংসদের বাইরেও মোদি সরকারের যথাযথ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার বিষয়টি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমনকি ভারতের দুর্বল রাজনীতিতেও অভূতপূর্ব এক মাত্রায়, স্পষ্টত নিরপেক্ষ এজেন্সিগুলি, যেমন পুলিশকে, কার্যনির্বাহী শক্তির অনর্থক যন্ত্রে পরিণত করেছে। তিনি এগুলোকে বিরোধী মত ও সমালোচকদের দমনে ব্যবহার করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডের এক অভিনেতার আত্মহত্যার পরে, একটি রাজনৈতিক দলকে দমন করতে বিজেপি সমর্থিত মিডিয়ায় উন্মত্ততা, টেলিভিশন উপস্থাপকদের নিলর্জ্জ মিথ্যাচার এবং অনলাইন ট্রলসের বন্যা দেখা গেছে।

সমস্ত গোলমালের পিছনে রয়েছে মোদি যুগের ক্রমবর্ধমান উচ্চারিত দিকটি, যার সাথে সকলের বিশেষ করে, কাশ্মীরের বাসিন্দাদের ভালো পরিচয় রয়েছে, তা হচ্ছে ‘ভণ্ডামি’। বিদেশী অর্থায়ন বিবেচনা করুন। জাতীয় সুরক্ষা এবং জবাবদিহিতার কথা বলে মোদি সরকার এমন গোষ্ঠীগুলির অনুদান বন্ধ করেছেন, যেগুলোকে তারা পছন্দ করেন না। দেশটিতে গত ছয় বছরে প্রায় ১৫ হাজার এনজিও বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্য হাতে মোদি করোনা মহামারীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ‘জরুরি’ তহবিলের কথা বলে একটি রাজনৈতিক তহবিল গঠন করলেন।

মোদি তার অন্য সমস্ত হাত দিয়ে যা-ই করছেন না কেন, জনতার উদ্দেশ্যে দেখানোর জন্য একটি হাত সবসময়ই খালি রাখছেন। গত বছর কাশ্মীরের ‘মুক্তি’র পরে তাকে ডাল লেকের একটি নৌকার উপরে নেতার মতো দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে দেখা গেছে। সম্প্রতি তাকে হিমালয়ের উঁচু একটি রাস্তায় টানেল উদ্বোধনের সময় একটি জীপের উপরে দাঁড়িয়ে আবারও হাত নাড়তে দেখা গেছে। তবে কাছ থেকে দেখলে, উভয় দৃশ্যের পেছনে একটি অসংগতি চোখে পড়ে। তা হচ্ছে, কোনও জায়গাতেই সাধারণ মানুষের কোন উপস্থিতি ছিল না, কেবল নিরাপত্তা কর্মীরাই ছিল। সূত্র: ইকনোমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ