বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে আল্লাহর নিয়ামতের বর্ণনা। এই নিয়ামত তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে। তিনি যে রাববুল আলামীন, তিনি যে বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা- এটা বোঝা যায় তাঁর নিয়ামতরাজির মাধ্যমে। বিভিন্ন সূরায় বিভিন্নভাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সচেতন করেছেন তাঁর দান ও নেয়ামত সম্পর্কে। মানবের উত্তম আকৃতি, রূপ-যৌবন, জ্ঞান-বুদ্ধি, সহায়-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি সবকিছুই আল্লাহর দান। এই পৃথিবী ও পৃথিবীর সকল বস্তু মানবের জন্যই সৃজিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন যা কিছু আছে ভূমিতে।’
আরো ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা করতে আরম্ভ করো তবে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না।’ তবে একটি নিয়ামত এমন আছে, যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বিশেষ ভঙ্গিতে উল্লেখ করেছেন। সূরা আল ইমরানে (আয়াত : ১৬৪) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন, যখন তাদের মধ্যে প্রেরণ করলেন একজন রাসূল তাদেরই মধ্য থেকে। তিনি তাদের সামনে তিলাওয়াত করেন তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন। নিঃসন্দেহে তারা ইতিপূর্বে ছিল প্রকাশ্য গোমরাহীতে।’
হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল (সা.) মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত, যে আয়াতে আল্লাহ পৃথিবীর সকল বস্তুর কথা বলেছেন সেখানেও যে ভূমিকা দেননি তা দিয়েছেন রাসূলের (সা.) কথা বলার সময়। পৃথিবীর সব নেয়ামত আল্লাহরই দান, তাঁরই অনুগ্রহ, কিন্তু রাসূলের কথা বলার সময় আল্লাহ বললেন, নিশ্চয়ই ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।
এ ভূমিকাটুকু এজন্যই দেয়া হয়েছে, যেন মানুষ আল্লাহর রাসূলের মর্যাদা বোঝে এবং তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে শিরোধার্য করে। বস্তুত এটি এমন এক নিয়ামত, যার উপলব্ধি ও মূল্যায়নের দ্বারাই মানুষ সর্বোচ্চ সৌভাগ্য লাভ করে। তার অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়, জীবন ও জগতের প্রকৃত মূল্য সে অনুধাবন করে এবং স্রষ্টার সাথে তাঁর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে তার মানব-জনম স্বার্থক হয়। যেহেতু মুমিনরাই এই মহা নিয়ামতের প্রকৃত সুফল লাভ করেন তাই আল্লাহতাআলা রাসূলের আগমনকে মুমিনদের জন্য অনুগ্রহ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, খাতামুন্নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে মানবজাতি কী-কী সম্পদ লাভ করেছে। এক. আল্লাহর আয়াত। দুই. তাযকিয়া। তিন. কিতাব। চার. হিকমত।
নবী (সা.)-এর ওপর আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদ নাযিল করেছেন। তিনি তা তিলাওয়াত করেছেন উম্মতের সামনে। তাঁর মাধ্যমেই উম্মত লাভ করেছে আল্লাহর কালাম, আকাশের বাক্যমালা। কোরআন মাজীদের যে বাক্যগুলো আজ আমরা তিলাওয়াত করি- চিন্তা করুন-হুবহু এই বাক্যগুলোই জিবরাইল আ.-এর মাধ্যমে নাযিল হয়েছে নবী (সা.)-এর ওপর। এরপর তিনি তা উম্মতের সামনে তিলাওয়াত করেছেন। কল্পনা করা যায়- আমাদের মতো পাপী বান্দা তিলাওয়াত করছি আল্লাহর কালাম!
তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধির বিষয়টি এত ব্যাপক যে, তার ক্ষেত্রগুলো সংক্ষেপে বলতে গেলেও গ্রন্থ রচনার প্রয়োজন হবে। কারণ মানব-জীবনের সকল অঙ্গন তাযকিয়ার ক্ষেত্র। মানুষের মন-মানস, বোধ-বিশ্বাস, কাজকর্ম, আচার-ব্যবহার, আখলাক-চরিত্র সবই তাযকিয়ার আওতাভুক্ত। তৃতীয় ও চতুর্থ বিষয় হচ্ছে, কিতাব ও হিকমা। কিতাব অর্থ আল-কোরআন আর হিকমা অর্থ সুন্নাহ।
আল্লাহর রাসূল (সা.) কোরআন মাজীদের ব্যাখ্যা উম্মতকে জানিয়েছেন। কোরআনী বিধানের প্রায়োগিক রূপ শিখিয়েছেন। কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে, সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান করো। এখন সালাত ও যাকাতের ব্যবহারিক রূপ আল্লাহর রাসূলই শিক্ষা দিয়েছেন। এভাবে সওম, হজ্ব, তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-দুআ ইত্যাদি সকল ইবাদতের পদ্ধতি আল্লাহর রাসূল (সা.) উম্মতকে শিখিয়েছেন। পাশাপাশি আরো অনেক বিধান ও শিক্ষা নবী (সা.) দান করেছেন, যেগুলো মুহাদ্দিসীনে কেরামের পরিভাষায় সুন্নাতে মুসতাকিল্লা নামে পরিচিত। এটিও হাদীস ও সুন্নাহর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এবং মানব-জীবনের বিভিন্ন অঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্ট।
মোটকথা, জীবনাদর্শের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর এই যে গভীর অবদান সে সম্পর্কে চিন্তা করলে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর আবির্ভাব মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় আসমানী নিয়ামত। এই নিয়ামতের মূল্যায়ন ও শোকরগোযারির উপরই নির্ভর করে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং মুক্তি ও সফলতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।