Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরে খাঁচায় মাছ চাষ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

মহামারী করোনার প্রভাবে জেলার শিবচর উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এসব ক্ষতি মাথায় রেখে কৃষকরা মনোবল শক্ত করে পুনরায় বিভিন্ন খোলা জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছে ব্যাপক সুবিধা পাচ্ছেন। সাফল্য অর্জনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এ জাতীয় পদ্ধতিতে মাছ চাষ উৎপাদন দ্বিগুণ করে। এইভাবে উৎপাদিত মাছের স্বাদ ভালো হয় এবং রোগ থেকে মুক্ত থাকে। তারা এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ থেকে বড় কিছু আবিষ্কার করছে।
জানা যায়, শিবচর উপজেলার শিরুাইল, শেখপুর ও বাসকান্দি ইউনিয়নে খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করেছেন মৎস্যচাষিরা। শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের আড়িয়াল খা নদীতে তিন বছর আগে এই মাছ চাষের পদ্ধতিটি শুরু হয়েছিল। পরে, এটি শেখপুর এবং বাসকান্দি ইউনিয়নের বিলপদ্ম নদীর সংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। পদ্ধতি অনুসারে, বড় খাঁচা বাঁশ এবং জাল দ্বারা তৈরি করা হয়। ড্রামগুলিকে নদীতে ভাসমান করে তুলতে খাঁচার সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি পরিদর্শনে শিরুয়াইল ইউনিয়নে আড়িয়াল খাঁ নদের উপর ভাসমান খাঁচার অ্যারে পাওয়া গেছে। মৎস্যচাষিরা মূলত পদ্ধতিটি ব্যবহার করে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষ করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের মাছের মতো যেমন কৈই, শিং, মাগুর এবং গ্লাস কার্পও এইভাবে চাষ করা হয়।
শিরাইল গ্রামের মজিদ মাতবর, আজাহার বেপারি ও তাহের আকন এর সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রথমে আবাদ শুরু করতে তারা ২ লাখ টাকা ঋণ নেয়। পরে ২০১৫ সালে খাঁচায় মাছ চাষ সম্পর্কে সম্ভাবনা এবং একটি সংবাদপত্রের লেখা দেখে শেখপুর গ্রামের ২০ জন বেকার যুবক স্ব-অর্থায়নের মাধ্যমে চাষ শুরু করেন।
শেখপুর গ্রামের তানজিল আহমেদ খান বলেন, জমি বিক্রি করে ২০১৫ সালে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ১০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছি। পরে খাঁচাগুলিকে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে উন্নীত করেছি। এখন রয়েছে বাড়ির কাছে আড়িয়াল খাঁ নদের ২৬৫টি খাঁচা। তিনি আরও বলেন, এখানে তেলাপিয়া মাছের চাষ জনপ্রিয়। জুলাই মাসে চাষ শুরু হয়, এবং তিন থেকে পাঁচ মাস পরে, মাছগুলি বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। প্রতি খাঁচা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ কেজি তেলাপিয়া মাছ সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতি কেজি মাছ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, সাফল্য দেখে শিরুযাইল গ্রামের কিছু বেকার যুবক-কামরুল দেওয়ান খোকন তালুকদার ও অপূর্ব দাশ তাদের বাড়ির কাছে জলাশয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন।
খোকন তালুকদার বলেন, বিলপদমা নদীতে আমার ১৫টি খাঁচা আছে। গত কয়েক বছরে মাছ বিক্রি করে আমি ভাল টাকা উপার্জন করেছি।
অপূর্ব দাস জানান, তিনি ৩৫টি খাঁচায় মাছ চাষের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা বিনিযোগ করেছেন এবং প্রতি তিন মাসে তিন লাখ টাকার লাভ করছেন। তার সাফল্য দেখে অনেক যুবক খাঁচায় মাছ চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
কামরুল দেওয়ান বলেন, একজন মৎস্যচাষী ২০ খাঁচা থেকে সহজেই মাসে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার লাভ করতে পারে। এসব মৎস্যচাষিরা আরো জানান, তাদের স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রায়শই তাদের কাজে সহায়তা করেন।
শিবচর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম সামচুজ্জামান বলেন জানান, যেহেতু এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা যায়, তাই কৃষকদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে আর্থিক দুরাবস্থা সৃষ্টিসহ সাম্প্রতিক বন্যা ও পানি বৃদ্ধিতে ৪৫৬ টি খাচার মধ্যে ২৫০টি খাচা ভেঙে যায় ফলে অবকাঠামোগতভাবে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি এবং ১৬ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়। যার ফলে এ চাষের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের মনোবল কিছুটা ভেঙে পড়ে। তথাপি মৎস্যবিভাগ ভাবে তাদের মটিভেটকরণসহ চাষের মনিটারিং করায় মৎস্যচাষিরা আবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পুরোদমে মাছচাষে কাজ শুরু করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাঁচায়-মাছ-চাষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ