Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কবিরাজী চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় গাছে বেঁধে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৪

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৫০ এএম

 

কবিরাজী চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে বিরোধ শুরু। টাকা ফিরত দিতে না পারায় কবিরাজীর সঙ্গে যুক্ত একব্যক্তিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়।
ঘটনাটি ঘটে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পাটগ্রাম থানা পুলিশ। গত শনিবার সকালে ওই ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয় এবং তার সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয় অভিযুক্তরা ।

পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানা গেছে, উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের সর্দারপাড়া প্রাণকৃষ্ণ এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মোস্তফা আলী রং মিস্ত্রির কাজ করেন এবং বাড়িতে গরু পালন করেন। প্রায় ৮ বছর ধরে মোস্তফা আলীর গাভীর দুধ নিয়মিতভাবে ক্রয় করেন একই এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে হামিদুল ইসলাম (৪৫)। প্রায় ৬ মাস আগে মোস্তফা আলীর বড় ছেলে মোয়াজ আলী (১৩) অসুস্থ হলে তিনি পার্শ্ববর্তী থানার কালীগঞ্জ এলাকা থেকে একজন কবিরাজ নিয়ে এসে চিকিৎসা করেন।

এদিকে, অভিযুক্ত হামিদুল ও তার স্ত্রী তাছলিমা বেগমের মধ্যে সাংসারিক বিরোধের কারণে তারাও মোস্তফার মাধ্যমে ওই কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নেন। এতে তাদের ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। কবিরাজের চিকিৎসা গ্রহণের পরও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক বিরোধের বিষয় সমাধান না হওয়ায় তারা মোস্তফা আলীকে দোষারোপ ও গালাগালি করেন এবং তাদের কবিরাজি চিকিৎসা খরচ ১২ হাজার টাকা ফেরত চান। এই নিয়ে তাদের মোস্তফা আলীর সঙ্গে বিরোধ বাধে।

গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মোস্তফা আলী রং কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা করেন। পথে জগতবেড় ইউনিয়নের ডাকুয়াপাড়া এলাকায় পৌছালে হামিদুল ও তার স্ত্রী তাছলিমা, মেয়ে হাওয়া খাতুন (১৫), আব্দুল খালেক , নুরুল হক (৬০), মোস্তফা (৪২) ও ফাতেমা বেগম (৫০) সবাই মিলে দলবদ্ধ হয়ে মোস্তফা আলীর পথরোধ ও আটক করে তার কাছে ওই ১২ হাজার টাকা দাবি করে।

তিনি টাকা দিতে না পারার কথা জানালে তাকে বেধড়ক মারধর করে সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর আব্দুল খালেকের কাঁঠাল গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে তারা। অনেকে গাছের সঙ্গে মধ্যযুগীয় কায়দায় রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন।

এ ঘটনায় ওই দিনই নির্যাতনের শিকার মোস্তফা আলীর স্ত্রী মহসেনা বেগম পাটগ্রাম থানায় মামলা করেন। শনিবার রাতে পাটগ্রাম থানা পুলিশ আটক করেন অভিযুক্ত হামিদুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৩৫), আব্দুল খালেক ও ফাতেমা বেগমকে।

এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার মোস্তফা আলী বলেন, ‘প্রায় ৬ মাস আগে আমার ছেলে অসুস্থ হলে আমি পার্শ্ববর্তী থানা কালীগঞ্জ এলাকা থেকে একজন কবিরাজ নিয়ে এসে চিকিৎসা করি। হামিদুল ও তার স্ত্রী তাছলিমা বেগমের মাঝে সাংসারিক বিরোধ থাকার কারণে ওই কবিরাজের নিকট চিকিৎসা গ্রহণ করে। চিকিৎসা বাবদ তাদের ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। চিকিৎসায় তাদের কাজ না হওয়ায় তারা বিভিন্ন সময় আমার কাছে ওই টাকা ফেরত চায়। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে।’

এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, ‘গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার মোস্তফা আলীর স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ চার জনকে আটক করে। তাদের রোববার লালমনিরহাট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ