পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গুরু অপরাধে দায়ের হচ্ছে- লঘু ধারার মামলা। প্রকৃত অপরাধ আড়াল করতেই নেয়া হচ্ছে এ কৌশল। এতে অধরা থেকে যাচ্ছে বড় দুর্নীতিবাজরা। অন্যদিকে কম দুর্নীতি করেও অনেকে টানছেন জেলের ঘানি। দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ পলিসি’র ফলে অহরহই ঘটছে এমনটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের সুষম প্রয়োগ হলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার কারণে যদি এমনটি হয়েই থাকে, তাহলে খোদ দুদক কর্মকর্তার বিষয়েই অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বিশেষ বোঝাপড়ার আওতায় অনেক সময় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পরিবর্তে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগ আনা হয়। অনেক সময় অনুসন্ধান এবং তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, বাড়তি ঝামেলা এড়ানো, সস্তায় বাহবা কুড়ানো, কর্মকর্তাদের বার্ষিক ‘অ্যাচিভমেন্ট’ প্রদর্শন, বছর ওয়ারি মামলার পরিসংখ্যান সমৃদ্ধকরণসহ নানা সমীকরণ থেকে লুঘু ধারায় দায়ের হচ্ছে মামলা।
এর ফলে বহুল আলোচিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরাও পার পেয়ে যাচ্ছেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদও থাকছে সুরক্ষিত। দুদকের কার্যক্রমকে আইনি মারপ্যাঁচে ফেলে দুর্নীতিবাজরা লাভ করেন সময়ক্ষেপণের সুবিধা। এছাড়া গুরু অপরাধের বিপরীতে লঘু ধারায় মামলা হওয়ায় জামিনও পেয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতিবাজরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে- দুদকের মূল উদ্দেশ্য। একাধিক ঘটনা পর্যালোচনা করে মিলেছে এমন চিত্র।
কেস স্টাডি (এক) : নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সি সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। ‘অনিক ট্রেডার্স’ এবং ‘আহমেদ এন্টারপ্রাইজ’ নামক বেনামী প্রতিষ্ঠান খুলে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে সাজ্জাদ। মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং আসবাব সরবরাহ দেখিয়ে তিনি হাতিয়ে নেন শত শত কোটি টাকা। সর্বশেষ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পর্দা কেলেঙ্কারির সঙ্গে মুন্সি সাজ্জাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। ব্যবসার আড়ালে দুর্নীতিলব্ধ অর্থে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েন তিনি। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাজ্জাদ হোসেন মুন্সির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুসন্ধানের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গতবছর ১২ নভেম্বর মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন, তার স্ত্রী ফারজানা হোসেইনসহ তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। সংস্থার বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ শাখা থেকে দুদক আইন ২৬(২) ধারায় চাওয়া হয় এ সম্পদ বিবরণী। ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় তাকে।
ওই মাসের ২৬ নভেম্বর তিনি সম্পদ বিবরণীর নোটিশ গ্রহণ করেন। কিন্তু দু’দফা সময় বাড়িয়েও তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি। এ ঘটনায় গত ১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় মামলা করা হয় মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন এবং তার স্ত্রী ফারাজানা হোসেইনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে। সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে দায়েরকৃত এজাহারকে বলা হয় ‘নন-সাবমিশন’ মামলা।
কেস স্টাডি (দুই) : হলমার্ক কেলেঙ্কারির আলোচিত চরিত্র সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ননীগোপাল নাথ। হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইস্যুকৃত ভুয়া এলসির বিপরীতে শত শত কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন তিনি। বিপরীতে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এ অর্থের বেশিরভাগই তিনি ভারত পাচার করেন। বিদেশে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। এদেশেও নামে-বেনামে গড়ে তোলেন বিপুল অর্থ-সম্পদ।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২ সালে ননীগোপাল নাথের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণও মেলে। পরে তার, স্ত্রী এবং পোষ্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিস দেয় কমিশন। নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় তার বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান ননী গোপাল নাথের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় সম্প্রতি চার্জশিট দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে।
কেস স্টাডি (তিন) : নন-সাবমিশন মামলায় পুলিশ পরিদর্শক হামিদুল হক দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। ঢাকার নবম বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান গত ২৫ আগস্ট এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিনাশ্রম কারাদন্ডের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা হামিদুল হক এবং তার স্ত্রী রেহেনা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল অবৈধ উপায়ে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জনের। অনুসন্ধানে সেটির সত্যতা মিললে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ দেয়া হয় হামিদুল হক এবং তার স্ত্রীকে। কিন্তু তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। তদন্ত শেষে তাদের অভিযুক্ত করে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট চার্জশিট দেয় দুদক। এর ভিত্তিতে আদালত হামিদুল হককে উপরোক্ত দন্ডাদেশ দেন।
উল্লিখিত, পৃথক তিনটি ঘটনায় ‘নন-সাবমিশন মামলা’র তিনটি পর্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন। অনুসন্ধানও শুরু হয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে। অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। কিন্তু নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটন করছেন দু’টি। (১) দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং (২) সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা।
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মঈদুল ইসলামের মতে, এখানে দু’টি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু দুদক মামলা করছে দ্বিতীয়োক্ত অপরাধের দায়ে। অর্থাৎ সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অপরাধ। প্রথমোক্ত অপরাধ অর্থাৎ দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ সেটির দায়ে মামলা হচ্ছে না। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ (২৭/১ ধারা) প্রমাণিত হলে শাস্তি সর্বনিম্ন ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদও বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে।
কিন্তু নন-সাবমিশন মামলার (২৬/২) শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছর। এখানে দুর্নীতিলব্ধ সম্পদ বাজেয়াপ্তের কোনো বিধান নেই। ফলে একজন দুর্নীবাজের জন্য দ্বিতীয়োক্ত ধারায় দায়েরকৃত মামলার আসামি হওয়া সুবিধাজনক। এতে একদিকে তার অবৈধ সম্পদ সুরক্ষিত থাকছে। অন্যদিকে কারাভোগও খুব একটা করতে হচ্ছে না। তবে দুদকের মূল উদ্দেশ্য পূরণে নন-সাবমিশন মামলা হওয়ার পাশাপাশি ২৭(১) ধারায়ও মামলা হওয়ার কথা। সেটি না হওয়ায় গুরু ধারার অপরাধীও পার পেয়ে যাচ্ছেন লঘু দন্ডের আসামি হওয়ার মধ্য দিয়ে। এতে দুর্নীতির মূল অভিযোগটি ‘ক্লোজড’ হয়ে যাচ্ছে। আইনের কাঠামোতেই পার পেয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতিবাজ।
অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইনের ২৬(১) ধারায় নোটিশ জারি করা যেতে পারে-মর্মে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদনে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোন সম্পদগুলো বৈধ এবং কোন সম্পদগুলো জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সেটি আলাদা করা হয় না।
তবে এ পর্যায়ে দুদকের দায়-দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ধারা প্রয়োগে তারতম্যের কারণে যদি বড় দুর্নীতিবাজ পার পেয়ে যায়- তাহলে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিষয়েই অনুসন্ধান হওয়ার দাবি রাখে। কারণ, আইন সবার জন্য সমান। এখানে ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’র সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটির অনুসন্ধান-তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে উচ্চ আদালত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্কও করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।