Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে তাপমাত্রা

আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১৩ এএম

মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংস ঘটনার পর মানবিক কারণে সীমানা খুলে দেয় বাংলাদেশ। এরপর ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। এর আগে থেকেই ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে। সব মিলিয়ে টেকনাফ-উখিয়ার সবুজ পাহাড়গুলো হয়ে ওঠে শুধুই রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয় এ রোহিঙ্গাদের। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় গ্রুপ- আইএসসিজির সর্বশেষ হিসাব মতে, ৩৪টি ক্যাম্পে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৫ হাজার ৮২২ জন। কক্সবাজার বন বিভাগের হিসাবে ৫০১৩ একর বনভ‚মিতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে, এটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুল চাপে এ অঞ্চলে সংরক্ষিত বন এবং বন্যজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এতো অল্প জায়গায় বিপুল মানুষের ঘনত্ব ক্যাম্প ও তার আশপাশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। ঘনবসতিপূর্ণ এ রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেখানে গড়ে উঠেছে সেটি বিপন্ন প্রায় প্রাণিদের সংরক্ষিত বন। ফলে, গুরুতরভাবে বিপর্যয়ে পড়েছে বিপন্ন এশিয়ান হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণি ও উদ্ভিদ। পাল্টে গেছে এ অঞ্চলের বাতাস ও ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। বনে এ ধ্বংসযজ্ঞ বন্যজীবন ও জীববৈচিত্র্যের কী পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করেছে তার ওপর একটি গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রিঙ্গার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের পাঁচ অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রশিদ, আতিকুল হক, তাসনিয়া আয়শা এশা, আতিকুর রহমান ও অলক পালের করা এ গবেষণাপত্রে তারা দেখিয়েছেন রোহিঙ্গাদের এই চাপ ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাতেও কতটা পরিবর্তন (এলএসটি) এনেছে। এ গবেষণায় ল্যান্ডস্যাট ৮-এর ছবি ব্যবহার করে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উদ্ভিদের পরিবর্তনের পরিমাণ এবং এলএসটির পরিবর্তন পরীক্ষা করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প অঞ্চলে প্রায় ১৮৭৬ হেক্টর বনভ‚মি কমেছে। গবেষণা অঞ্চলের এলএসটি অঞ্চলজুড়ে সর্বোচ্চ ৩৪.৪-৩৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.৪-৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থানিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন ধ্বংসের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, খুব দ্রæতই জায়গাটি বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হয়ে যাবে এবং এলএসটিও বাড়বে। এসব কারণ শেষ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য হ্রাসকে ত্বরান্বিত করবে।

টেকনাফ-উখিয়ার এ অঞ্চলটি বিপন্ন এশিয়ান বন্যহাতির বিচরণক্ষেত্র। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারজুড়ে এশিয়ান হাতির সংখ্যা আনুমানিক ২৬৮টি। এরা গুমগুম করিডোর ধরে দুই দেশের বনে যাতায়াত করে। টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে হাতির যাতায়াতের এ পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের পর উজাড় হয়েছে পাঁচ হাজার একরের বেশি বনাঞ্চল। হাতি চলাচলের ১২টি করিডোর বন্ধ এবং ২২টিরও বেশি প্রাকৃতিক জলাধার ধ্বংস হয়েছে। বনাঞ্চল উজাড় করে ক্যাম্প তৈরির পর বন্যহাতির পাল সেখানে আটকা পড়েছে। জরিপ অনুসারে উখিয়া ও টেকনাফের বনাঞ্চলে ৬৭টি হাতি আছে।
ক্যাম্পের কারণে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন উখিয়া ও টেকনাফের বনাঞ্চলে তিন বছর ধরে তীব্র খাদ্য ও পানি সঙ্কটে রয়েছে এই বন্যহাতি। চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ায় এর মধ্যে ৪০টি হাতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আটকা পড়েছে। গত তিন বছরে বন্যহাতির আক্রমণে টেকনাফ ও উখিয়ায় মারা গেছে অন্তত ২৭ জন। এর মধ্যে ১৩ জনই রোহিঙ্গা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ হাসমত বলেন, পুরো এলাকাই হাতির বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাতি বড় প্রাণি। তার বসবাস, খাবার, বিশ্রাম, প্রজনন প্রভৃতির জন্য বড় এলাকার প্রয়োজন হয়। যেটা ওই এলাকায় একেবারেই নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দানেশ মিয়া বলেন, হাতি বড় প্রাণি হওয়ায় এর চলাচল ও বিপন্নতা সহজেই দেখতে পাচ্ছি কিন্তু অপেক্ষাকৃত ছোট গুঁইসাপ, সাপ, মেছোবাঘ, বানরসহ বিভিন্ন নিশাচর প্রাণির জন্যও এলাকাটা ভয়াবহ হয়ে পড়ছে। গাছ কাটায় পাহাড় ধস হচ্ছে।
কক্সবাজারের পরিবেশ কর্মী অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গারাও ব্যাপক হারে পাহাড় দখল করছে। পাহাড় কেটে তারা অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে। বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি নরম হলে পাহাড় কাটা শুরু হয়। এ সময়ে পাহাড়ধসে মৃত্যুর আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
তিনি জানান, গত ৫ বছরে কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ধসের ঘটনায় শতাধিক লোকের প্রাণহানি হয়েছে। এরপরও থামছে না ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ও পাহাড় কাটা।

উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় বন বিভাগের পাহাড়ে ঘর তুলে বসবাস করছে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তাদের অনেকে পাহাড়ি এলাকায় চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে তারা অসহায়। বনভূমি অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেও তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->