মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, অচিরেই করোনা মহামারীর সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। অথচ এই মুহুর্তে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি এবং সর্বোচ্চ করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন। ট্রাম্প এবং মেলানিয়া উভয়ই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ৪ সপ্তাহ আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় সংক্রমিত প্রমানিত হয়েছেন। বিষয়টি তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য নি:সন্দেহে ভীতিকর। পাশাপাশি এটি নির্বাচনী প্রচারেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
পলিটিক্যাল সাংবাদিকরা গত কয়েক মাস ধরে অক্টোবরে চমকপ্রদ কিছু ঘটার বিষয়ে জল্পনা কল্পনা করছিলেন। অবশেষে তা ঘটেছে। তবে, বিবেচ্য বিষয় হ’ল মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনও ঠিক আছেন। ট্রাম্প শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ১০ দিনের জন্য মেরিল্যান্ডের বেথেস্ডায় ওয়াল্টার রিড মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপাতত ট্রাম্পের শারিরীক অবস্থা নিয়ে চিন্তার কিছু না ঘটলেও তার অবস্থা রাজনৈতিকভাবে ভাল নয়। তিনি যদি ভোটের ক্ষেত্রে সহানুভ‚তি না পান তাহলে তার উৎরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। দ্য ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, গড় ভোটে জো বাইডেনের তুলনায় তিনি এখনও ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছেন, যা তাকে নির্বাচনে বিজয়ী হতে মাত্র ১০ শতাংশ সুযোগ দিচ্ছে।
ট্রাম্প এই বিষয়টিকে করোনা মহামারীতে তার প্রশাসনের ব্যর্থতা, তার অব্যবস্থাপনা এবং দেশটির অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর থেকে আমেরিকানদের নজর সরাতে চান। তার নিজের অসুস্থতা পরবর্তী ১০ দিনের জন্য সেই কাজটিকে অসম্ভব করে দিয়েছে। তিনি যখন কোয়ারেন্টাইন থেকে বেরিয়ে আসবেন, তখন ভোট সংখ্যার ঘাটতি পূরণের জন্য তার কাছে খুব বেশি সময় অবশিষ্ট থাকবে না। সেইসাথে, ট্রাম্পের আরোগ্যকালীন সময়ে আমেরিকানদের মনে করিয়ে দেয়া হবে যে, তিনি সারা বছর ভাইরাসের তীব্রতার নিয়ে ছেলেখেলা করে কাটিয়েছেন এবং এক পর্যায়ে দাবি করেছেন যে, মহামারীটি যে কোনও সময় অদৃশ্য হয়ে যাবে। গত মঙ্গলবার রাতে ১ম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে তিনি বলেছিলেন যে, প্রয়োজন বোধ করলে তিনি একটি মাস্ক পরেন। এমনকি, সর্বক্ষণ মাস্ক পরে থাকার জন্য জো বাইডেনকে বিদ্রুপও করেছিলেন তিনি। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি তার মতো মাস্ক পরি না। যতবার আপনি তাকে দেখেন, তিনি একটি মাস্ক পরিহিত। তিনি আমার থেকে ২শ’ ফুট দূরে অবস্থান করে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি আমার দেখা সবচেয়ে বড় মাস্ক পরে উপস্থিত হয়েছেন।’ তিনি পরে দাবি করেছিলেন যে, করোনার সমাপ্তি অচিরেই দৃশ্যমান হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল ঘিরে ৩ টি ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। প্রথমটি হ’ল, হোয়াইট হাউস দীর্ঘদিন ধরে জোর গলায় বলে আসছিল যে, ট্রাম্পের মাস্ক পরার দরকার নেই কারণ তিনি এবং তার চারপাশের সবাই নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করান। তবে, ট্রাম্প তার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এমন এক সময় মাস্ক পরিধান করাকে হেলাফেলা করেছেন, যেসময় দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রল-সিডিসি’র পরিচালনায় থাকা ট্রাম্পের নিজস্ব রবার্ট আর রেডফিল্ড জোর দিয়ে বলছিলেন যে, আমেরিকানরা মাস্ক পড়ে ভাইরাসের সংক্রমণকে কমিয়ে দিতে পারে, সর্বোপরি অন্যদের রক্ষা করতে পারে। এক্ষেত্রে, ট্রাম্প, তার প্রশাসনের পরস্পর বিরোধী বার্তা এবং করোনাতে নিহত ২ লাখ আমেরিকানের মাঝখানে একটি সুস্পষ্ট সোজা দাগ টানতে কোনও নির্বাচন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না।
দ্বিতীয় প্রেক্ষাপট হ’ল, ট্রাম্প ৩ টি ঝুঁকিপূর্ণ কারণের কোটা পূরণ করেছেন, তিনি পুরুষ, বৃদ্ধ (৭৪ বছর বয়সী) এবং তার বডি ম্যাস ইনডেক্স-বিএমআই ৩০’র বেশি (ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ্স ক্যালকুলেটর অনুযায়ী গত এপ্রিল থেকে প্রেসিডেন্টের মেডিকেল বুলেটিনে তার বিএমআই ৩০.৫)। সুতরাং, ট্রাম্প গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তিনি যদি অস্থায়ীভাবে অক্ষম হন, তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মার্কিন সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনীর অধীনে তার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। পেন্সের মুখপাত্র ইতিমধ্যেই এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং তার স্ত্রী দুজনেই আপাতত করোনা নেগেটিভ।
তৃতীয় প্রেক্ষাপটটি আরও বিস্ময়কর এবং এই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফলকে সত্যিকার অর্থে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে, ট্রাম্প সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং বাইডেন নির্বাচনের আগে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। যদিও গত মঙ্গলবার রাতের বিদ্বেষপূর্ণ টেলিভিশন বিতর্কে প্রেসিডেন্টের থেকে কয়েক ফুট দূরে দাড়িয়ে ৯০ মিনিট অতিবাহিত করা বাইডেন সদ্য করোনা পরীক্ষায় উৎরে গেছেন। তবে একটি ঘটনাবহুল সপ্তাহ অতিবাহিত করার পর (যা নিউইয়র্ক টাইম্সে ট্রাম্পের কর সংক্রান্ত খবর প্রকাশের সাথে শুরু হয়েছিল), আমেরিকানরা ধরেই নিতে পারেন যে, আসন্ন নির্বাচনে যে কোনও অঘটন ঘটতে পারে। সূত্র: দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।