Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যোগী সরকারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের তদন্ত ধামা চাপা দেয়ার অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৬:১৭ পিএম

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাথরাসে গণধর্ষিতা এক দলিত তরুণী মারা যাওয়ার পরে পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। নির্যাতিতার পরিবার থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ এবং বিরোধী দলগুলি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ধর্ষণ-তত্ত্ব খারিজ করে দেয়ার প্রবল সমালোচনা করছে। তাদের অবিযোগ, যোগী সরকার এই ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।

একদিকে যেমন পুলিশ বলছে যে ধর্ষণের প্রমাণ তারা পায় নি, অন্যদিকে হাথরাসের ওই গ্রামে সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না - যাতে পরিবারের সদস্যরা সরকারের সমালোচনা করে কিছু না বলতে পারেন। তাদের ফোনও নিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার পরিবার বলছে, এভাবেই তদন্ত ধামা দিতে চেষ্টা করছে পুলিশ। ধর্ষিতা তরুণী দিল্লির এক হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর শনিবার তৃতীয় দিনের মতো ওই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে হাথরাসে যাওয়া থেকে আটকানোর জন্য বৃহস্পতিবার যেভাবে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, শুক্রবার একই ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ডেরেক ও ব্রায়েনকেও ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে দিল্লিতেও।

যদিও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ শুক্রবার দুপুরে ঘোষণা করেছেন যে দোষী ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা ভবিষ্যতের উদাহরণ হয়ে থাকবে। কিন্তু তার পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে যে তারা আসলে তদন্ত ধামা চাপা দিতে চাইছে। একদিকে যেমন বলে দেয়া হচ্ছে যে, ময়নাতদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায় নি, আবার মধ্যরাতে নির্যাতিতার লাশ বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে দাহ করে ফেলেছে পুলিশ - যাতে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের সুযোগ না থাকে।

কেন পুলিশ কাউকে গ্রামে যেতে দিচ্ছে না, কেন সাংবাদিকরা পেশার তাগিদে ধর্ষিতার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না, সে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির বর্ষীয়ান নেত্রী উমা ভারতীও সে প্রশ্ন তুলেছেন। এ-ও বলেছেন, তিনি সুস্থ থাকলে দলিত তরুণীর গ্রামে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতেন। বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিকদের যাতে গ্রামে প্রবেশে বাধা না দেয়া হয়, যোগী আদিত্যনাথের কাছে সে আর্জিও তিনি জানিয়েছেন। উমা ভারতীর মতে, হাথরসের ঘটনায় একের পর এক পদক্ষেপে বিজেপি ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ।

বর্ষীয়ান বিজেপি নেত্রীর আর্জির পরেও যে যোগী সরকার সিদ্ধান্ত বদলেছে এমনটা নয়। সবমহলে যে সন্দেহ উঁকি মারছে যোগী প্রশাসন কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা করছে। যে সন্দেহের শুরুটা হয়েছিল তাড়াহুড়ো করে রাতের অন্ধকারে ধর্ষিতার দেহ পোড়ানোয়। শুক্রবার রাতে যোগী প্রশাসনের এক কর্মকর্তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, এখন বাইরের কাউকেই হাথরসের ওই গ্রামে যেতে দেওয়া হবে না। বিশেষ তদন্তকারী দল, সিটের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার পরেই সরকার অনুমতি দেবে।

হাথরাসে এই ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন বিবিসি-র সহকর্মী দিলনাওয়াজ পাশা। তিনি বলছিলেন, ‘ধর্ষণের প্রমাণ না পাওয়ার কথা পুলিশ জানানোর পরে নির্যাতিতার মা এবং ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি কথা বলি। তারা জানিয়েছেন যে পুলিশের তদন্তের ওপরে পরিবারের আর ভরসা নেই। পুলিশ যেকোনও প্রকারে তদন্ত ধামা চাপা দিতে চাইছে, এই অভিযোগও করছে নির্যাতিতার পরিবার।’ বিষয়টা এখন রাজনৈতিক মোড় নিয়ে নিয়েছে, সেজন্যই তদন্তের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছিলেন দিলনাওয়াজ পাশা।

যদিও পুলিশ বলছে যে ময়নাতদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায় নি, কিন্তু হাসপাতালে নির্যাতিতার একটি ভিডিও বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল, যেখানে তিনি দুজন ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষিতা হওয়ার কথা বলেছিলেন। যারা পুলিশের সমালোচনা করছেন তারা বলছেন, একদিকে যেমন লাশ দাহ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনই ময়নাতদন্ত হয়েছে ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ পরে। কিন্তু এখন যেহেতু ওই তরুণী মারা গেছেন, তাই আইন অনুযায়ী ওই বয়ানই মৃত্যুকালীন জবানবন্দী হিসাবে আদালতে গ্রাহ্য হওয়ার কথা বলে জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীন আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দি। তিনি বলেন, ‘ডাইয়িং ডিক্লারেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে ওই ধর্ষিতা যা বলেছেন, সেটা আদালত-গ্রাহ্য প্রমাণ। মামলাও সেভাবেই চলা উচিত। কিন্তু এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আগ বাড়িয়ে ঘোষণা করে দিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলে দেওয়ার বহু নজির রয়েছে। এদিকে আবার দেহটি পুড়িয়ে ফেলা হল। এর ফলে ওই পরিবারটি, বা যাদের মনে সন্দেহ রয়েছে, তাদের তো আর কোনও সুযোগ থাকবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দী আছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান আছে - তা স্বত্ত্বেও যেভাবে পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে অপরাধীরা যাতে খালাস পেয়ে যায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

একদিকে যেমন ধর্ষণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে পুলিশ বিভ্রান্তি তৈরি করছে, অন্যদিকে ওই গ্রামে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা সংবাদমাধ্যমকে বাইরে থেকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শয়ে শয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে গ্রামটিতে। শুক্রবার দুপুরের দিকে নির্যাতিতার এক ভাই চাষের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে বাইরে আসেন। সেখানে হাজির সংবাদমাধ্যমগুলিকে তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতরে, বাইরে, ছাদে - সর্বত্র পুলিশ রয়েছে। পরিবারের কয়েকজনকে মারধরও করা হয়েছে বলে। আমরা যাতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না করতে পারি সেজন্য ফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে।’ এর আগে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে নির্যাতিতার পরিবারকে হাথরাসের জেলাশাসক বলছেন, সংবাদমাধ্যম কদিন পরেই চলে যাবে, কিন্তু পরিবারটিকে গ্রামেই থাকতে হবে। এই বক্তব্যকে অনেকেই মনে করছেন হুমকি দেয়া হচ্ছে।

হাথরাসের ঘটনা নিয়ে যখন সারা দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে, সেইসময়েই উত্তরপ্রদেশেই আরও একটি গণধর্ষণের পরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বলরামপুরে ২১-২২ বছর বয়সী এক দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়, যিনি গত বুধবার মারা গেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ